দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ ভারতীয় বায়ুসেনার বিমান ছাড়ল কাবুলের হামিদ কারজাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে। মঙ্গলবার সকালে ভারতীয় দূতাবাসের বহু কর্মী, সেই সঙ্গে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্রও সাবধানতার সঙ্গে দেশে ফেরানো হলো এই বিমানে।
সোমবার সন্ধ্যাতেও বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি জানিয়েছিলেন, কাবুলে আটকে পড়া ভারতীয়দের উদ্ধার থমকে গিয়েছে। কারণ, আফগানিস্তানের এয়ার স্পেস বন্ধ। কাবুলের রাস্তায় নিরাপত্তার ঝুঁকি রয়েছে। সেই সঙ্গে কাবুল বিমানবন্দরের পরিস্থিতি ভয়াবহ। তা সে সামরিক বিমানবন্দর হোক বা নাগরিক বিমানবন্দর।
কিন্তু নয়াদিল্লিতে বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র যখন এ কথা বলছেন, তখন অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে অপারেশন চালাচ্ছিল ভারতীয় বায়ুসেনা। সোমবার সকালে এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বিমান কাবুলের উদ্দেশে রওনা দেওয়ার কথা ছিল। তা যেতে পারেনি। তবে ১৫ ও ১৬ অগস্টের মাঝে গভীর রাতে কাবুলে পৌঁছে গিয়েছিল ভারতীয় বায়ুসেনার দুটি সি-সেভেনটিন ট্রান্সপোর্ট এয়ারক্রাফ্ট। সেই মিশনে সামিল হয়েছিল ইন্দো-টিবেট বর্ডার পুলিশের একটি টিম। যারা ছিল নিরাপত্তার দায়িত্বে।
কিন্তু সেই রাতে কাবুলে নিরাপত্তা পরিস্থিতি এতোটাই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে যে ভারতীয় দূতাবাসে আটকে থাকা কর্মীদের বিমানবন্দরের আনা সম্ভবই হচ্ছিল না। কাবুলের ভারত সহ বিভিন্ন দেশের দূতাবাস যেখানে রয়েছে তাকে বলে গ্রিন জোন। সেই গ্রিন জোনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আগেই তছনছ হয়ে গিয়েছিল। ভারতীয় দূতাবাসের উপর কঠোর নজর রাখছিল তালিবানও।
এমনকি আফগানিস্তান থেকে ভারতে আসার জন্য যে ভিসা এজেন্সি ভিসা দেওয়ার ব্যবস্থা করে সেখানেও হানা দিয়েছিল তালিবান। শাহির ভিসা এজেন্সির অফিস লণ্ডভণ্ড করে দেওয়া হয়।
এই অবস্থায় গতকাল রাতে ৪৫ জন ভারতীয়কে নিয়ে প্রথম ব্যাচকে উদ্ধারের চেষ্টা করে বায়ুসেনা। কিন্তু বিমানবন্দরে যাওয়ার পথে তাঁদের পথ আটকায় তালিবান।
কিছু দূতাবাস কর্মীর ব্যক্তিগত জিনিসপত্রও কেড়ে নেওয়া হয়। ওদিকে কাবুল বিমানবন্দরে সকাল থেকেই তুলকালাম চলছে। মার্কিন বায়ুসেনার একটি বিমানের চাকা ধরে পর্যন্ত দুজন ঝুলে পড়ে। বিমান টেক অফ করলে তাঁরা উপর থেকে পড়ে মারা যান। এই অবস্থায় প্রথম ব্যাচকে নয়াদিল্লি ফেরত আনা ছিল অতি কঠিন চ্যালেঞ্জ। সেই বিমান গতকাল রাতে এসে নয়াদিল্লিতে পৌঁছয়।
কিন্তু বাকিদের ফেরানোর মুশকিল হয়ে পড়েছিল। তখনও ভারতীয় দূতাবাসে রয়েছেন হাইকমিশনার রুদ্রেন্দ্র টন্ডন। কিন্তু এরই মধ্যে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে যোগ দিতে গতকাল নিউইয়র্ক গিয়ে পৌঁছন বিদেশ মন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। তিনি মার্কিন বিদেশ সচিব অ্যান্টনি ব্লিনকেনের সঙ্গে কথা বলেন। মনে করা হচ্ছে, তার পর মার্কিন সহযোগিতাতেই দূতাবাসে আটকে পড়া ভারতীয় রাষ্ট্রদূত সহ ১২০ জন মঙ্গলবার সকালে বিমানবন্দরে পৌঁছন। কিছু সময়ের মধ্যে তাঁদের ভারতে এসে পৌঁছনোর কথা।
সূত্র মারফত খবর, বায়ুসেনার সি-১৭ বিমানটিতে মোট ১৩২ জন ভারতীয় নাগরিককে ফেরানো হচ্ছে হিন্দন এয়ারপোর্টে, যা দিল্লি থেকে ৩৯ কিলোমিটার দূরে। ওই বিমানে দূতাবাস কর্মীদের পাশাপাশি কয়েকজন সাংবাদিকও রয়েছেন বলে জানাগিয়েছে।
যাদের স্বজনবন্ধু এখনও আফগানিস্তানে আটকে তাদের আশ্বস্ত করে বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী সোমবার বলেন, প্রতিনিয়ত আফগানিস্তানের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তাঁর কথায়, কাবুলের মূল বিমানবন্দরে যেহেতু সমস্ত অসামরিক যাতায়াত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ফলে নাগরিকদের দেশে ফেরানোর কাজে কিছুটা দেরি হচ্ছে।
আঁচ আগেই পাওয়া গিয়েছিল। আফগানিস্তানে ধাপে ধাপে অভ্যুত্থান সম্পন্ন করে তালিবানরা রবিবার সন্ধ্যায়ই কাবুলের দখল নেয়া তারা। ক্ষমতা প্রত্যার্পণ করে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি। তিনি বলেন, দিন কয়েক ধরেই কাবুলের নিরাপত্তা চূড়ান্ত বিঘ্নিত হয়েছে আমরা যত দ্রুত ভাবছি তার থেকেও দ্রুত পরিস্থিতি বদলাতে ভারতীয় সরকার গোটা পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।
সাংবাদিকদের অরিন্দম বাগচী আরো জানান আফগানিস্থানে এবং হিন্দু জনগোষ্ঠীর বহু মানুষই রয়েছে আমরা তাদের সঙ্গে প্রতিমুহূর্তে যোগাযোগ রাখছি তাদেরকে দ্রুত দেশে ফেরানো হবে।
৯/১১-র কুড়ি বছর পূর্তিতে আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার করতে শুরু করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তারপর এত তাড়াতাড়ি কাবুলের পতনে বিস্মিত বহু দেশ, ভারতও।