রাজ্য মন্ত্রীসভা থেকে বাদ পড়তে চলেছেন শোভন চট্টোপাধ্যায়-( দেশের সময় ওয়েবডেস্ক) -কলকাতা পুরসভার মেয়র ও রাজ্যের দমকল মন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়ের ব্যক্তিগত সম্পর্কের টানাপোড়েন যে তৃণমূল কংগ্রেস দলের ভাবমূর্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে সে বিষয়ে দলের অভ্যন্তরে কারোর কোন দ্বিমত নেই।বিষয়টা নিয়ে খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও শোভনকে বার বার সতর্ক করেছেন।তাঁকে বলা হয়েছে হয় দলের কাজে মন দিক নতুবা নিজের প্রেম নিয়ে ব্যস্ত থাকুন।এদিকে তৃণমূলের অন্দরমোহলের খবর সম্প্রতি আদালত শোভনবাবুকে তাঁর পরিবারকে যে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল,তা না দিয়ে শোভন চট্টোপাধ্যায় সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাইকোর্টে আবার আবেদন করেছেন।বিষয়টা নিয়ে শোভনবাবুর স্ত্রী ও তাঁর বাবা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে নালিশ জানিয়েছেন।শোভনবাবু যে বিষয়টা কোনভাবেই মিটিয়ে নিতে রাজি নয় তা তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীকে বলেছেন।টাকা না দেওয়ায় শোভনবাবুর মেয়ের বিদেশে পড়াশোনার খরচ ও তাঁর স্ত্রীর খরচও যে পাওয়া যাচ্ছে না সে বিষয়েও মমতাকে অবগত করা হয়েছে।ইতিমধ্যে মমতা নিজেও শোভনের কাজ কর্মে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন।সম্প্রতি দলের বৈঠকে উপস্থিত না থেকে শোভন যে ভাবে তাঁর বান্ধবীকে নিয়ে পুজোর কেনাকাটা করতে বেরিয়ে পড়েছিলেন তাতেও যথেষ্ট বিরক্ত হয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যয়।এর পরেই শোভনকে সরিয়ে দেওয়া হয় দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার জেলা সভাপতির পদ থেকে।ইতিমধ্যেই বাজারে চাওর হয়ে গেছে পুজোর পড়েই রাজ্য মন্ত্রীসভা থেকে বাদ পড়তে চলেছেন শোভন চট্টোপাধ্যায়।তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে।তাঁর ব্যক্তিগত সম্পর্কের জেরে দলকে যে ভাবে বিড়ম্বনার মধ্যে পড়তে হচ্ছে তা আর বরদাস্ত করা হবে না বলেই খবর।অন্যদিকে মমতা চেয়েছিলেন তাঁর কথায় অন্তত শোভন কিছুটা নরম মনোভাব দেখাক,তার জন্য নিজের বাড়িতে ডেকেও তিনি শোভনকে বোঝাতে চেষ্টা করেছিলেন।কিন্তু সেই খবর সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়ে যায়।তৃণমূল সূত্রের খবর তাঁকে যে বাড়িতে ডেকে মমতা বিষয়টা মিটিয়ে নেওয়ার অনুরোধ করেছেন সেই খবরটা মিডিয়া দিয়ে দেয় শোভন নিজেই।এটা প্রচার করে শোভন বোঝাতে চায়,যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও তাঁকে অনুরোধ করে কিছু করতে পারেনি।স্ত্রী রত্না ও তাঁর শ্বশুরকে পরোক্ষে শোভন এই বার্তা দেয় যেখানে মমতাও কিছু করতে পারছে না সেখানে তারাও কিছু করতে পারবে না।শোনা যাচ্ছে এটাই ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে দিয়েছে তৃণমূল নেত্রীর।এবার তিনি এ বিষয়ে একটা হেস্ত নেস্ত করতে চাইছেন।তাঁর একান্ত অনুগত কাকনকেই তিনি বশ মানাতে পারছেন না,এই প্রচার যে খুব একটা মমতার পছন্দ হবার কথা নয়,তা বুঝতে পন্ডিত হওয়ার দরকার পড়ে না,তাই দলের একান্ত বৈঠকে তিনি জানিয়ে দিয়েছেন শাসন না মানা কাকনকে (শোভন)এবার আর রেহাই দেবেন না।মন্ত্রীসভার গত বৈঠকেই স্থির হয়ে গেছে রাজ্য মন্ত্রীসভা থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে শোভন চট্টোপাধ্যায়কে।এখন প্রশ্ন হল মেয়র পদে তাঁকে রাখা হবে কি?এই প্রশ্নের উত্তর নিশ্চিত করে এখনই বলা না গেলেও,এটুকু বলা যায় মমতার অবাধ্য হওয়ার কারণে শোভনের রাজনৈতিক জীবনে একটা ঘোর অনিশ্চয়তা ঘনিয়ে আসতে চলেছে।কেউ কেউ বলতেই পারেন শোভন যা করছে তা তাঁর ব্যক্তিগত বিষয়,তার সঙ্গে দলের কোন সম্পর্ক নেই।তবে তৃণমূল কংগ্রেসকে যারা চেনেন,মমতার নেতৃত্ব বিষয়ে যাদের ধারণা আছে তারা জানবেন নিশ্চয়ই যে এখানে ব্যক্তিগত বা দলীয় বিষয় বলে আলাদা কিছু হয় না,তৃণমূল যারা করেন তারা মমতার আদেশ মেনেই সব করেন।এরা ঘুমোন মমতার অনুপ্রেরণায়,জাগেনও তাঁরই অনুপ্রেরণায়।তাই মমতার আদেশ অমান্য করে নতুন করে প্রেমে পড়া শোভনের সামনে এখন দুটো পথ, হয় প্রেম থেকে বেরিয়ে এসে দিদির চরণে আশ্রয় নেওয়া,নতুবা রাজনৈতিক সন্ন্যাস নিয়ে প্রেমে মজে থাকা।সব মিলিয়ে শোভন চট্টোপাধ্যায় যদি তাঁর বর্তমান অবস্থান বজায় রাখেন তা হলে তাঁর রাজ্য মন্ত্রী সভা থেকে বাদ পড়া শুধু সমযের অপেক্ষা।