দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ ১০ তারিখ বলেছিলেন, “লড়াইয়ের ময়দানে দেখা হবে।”
সেই শুভেন্দু অধিকারী বিষ্যুদবার রামনগরের সভায় বললেন, “এখনও একটি দলের আমি প্রাথমিক সদস্য। মন্ত্রিসভারও সদস্য। মুখ্যমন্ত্রী আমাকে তাড়াননি, আমিও দল ছাড়িনি…”
তা হলে কী দাঁড়াল? শুভেন্দু অধিকারীকে কেন্দ্র করে এই যে এত আলোচনা, এত কৌতূহল, শাসক দলে উৎকণ্ঠা, বিরোধী শিবিরে উৎসাহ… সব কি গলে জল হয়ে গেল?
রাজ্য রাজনীতিতে অনেকের তুলনায় এই দাপুটে নেতার বয়স কম। কিন্তু এত কম বয়স থেকে রাজনীতি করছেন যে ঘষেমেজে যথেষ্টই পোড় খেয়েছেন এত বছরে। তাঁর ঘনিষ্ঠরা বলছেন, ‘শেষ কথা কিন্তু দেওয়ালে লেখা হয়নি। সবটা শুনে দেখুন!’ এদিনও বক্তৃতার পরতে পরতে তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন সম্ভাবনার দরজা খোলা রয়েছে। তিনি সিলেক্টেড নন, ইলেক্টেড। অর্থাৎ কেউ তাঁকে কোথাও বসিয়ে দেননি। তিনি নিজে পরিশ্রম করে উঠেছেন। মানে, ‘সিলেক্টেড’ কারও কথায় তিনি চলবেন না। এও বুঝিয়ে দিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত তিনি শাসক দলের সদস্য রয়েছেন। কিন্তু কে বলতে পারে ভবিষ্যতে কী হবে!
কদিন আগে শুভেন্দু নিজেই বলেছিলেন, ১৯ নভেম্বর রামনগরে ‘মেগা শো’ হবে। এদিনের সভা ছিল সমবায় আন্দোলনের অনুষ্ঠান। যেহেতু উনি বলেছিলেন ‘মেগা শো’ হবে, তাই অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন, আজই বুঝি বোমা ফাটাবেন তিনি। কিন্তু রামনগরের মঞ্চে দাঁড়িয়ে শুভেন্দু এদিন বলেন, “যাঁরা হাইপ করেছেন, তাঁদের দায়িত্ব। সমবায় তথা অরাজনৈতিক মঞ্চে দাঁড়িয়ে আমি রাজনীতির কথা বলব না। শুভেন্দু অধিকারী স্থান-কাল-পাত্র জানেন।”
এদিনের সভায় শুভেন্দু আরও জানান, সমবায় আন্দোলনের মাধ্যমে তাঁর দুই মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া, হাওড়া ও হুগলির গ্রামীণ এলাকার পাঁচ লক্ষ পরিবারের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। তাঁর কথায়, “আমি বসন্তের কোকিল নই। শুধু ‘ভোট চাই ভোট দাও’ বলি না। সাত দিন, ২৪ ঘণ্টা মানুষের সঙ্গে থাকি।
লকডাউনে ছিলাম, কোভিডে ছিলাম, উমফানের সময়েও ছিলাম। ঝড়ের রাতে দিঘায় মনে হচ্ছিল উড়িয়ে নিয়ে ফেলে দেবে।কিন্তু নন্দীগ্রাম করা লোক তো! অত সহজে ওড়ানো যাবে না।”
পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, শুভেন্দু যথেষ্ট কৌশলী। রাজনৈতিক শিষ্টাচার মেনে চলছেন। উনি এখনও তৃণমূলের সদস্য। সেই সঙ্গে মন্ত্রিসভার দুটি গুরুত্বপূর্ণ দফতরের মন্ত্রী। সুতরাং পদে থেকে দল বা সরকারের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কিছু বলা শিষ্টাচারের মধ্যে পড়ে না। তা ছাড়া তিন দিন আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে তাঁর সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন তৃণমূলের এক প্রবীণ সাংসদ।
শুভেন্দু তাঁর ক্ষোভ ও অসন্তোষের কথা তাঁকে জানিয়েছেন বলে খবর। এও জানা গিয়েছে, তিনি দুটি পরিষ্কার শর্তের কথা বলেছেন। তা হল, প্রশান্ত কিশোরকে দল তথা সংগঠনের ব্যাপার স্যাপার থেকে সরাতে হবে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কেও সরাতে হবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সরাসরি সংগঠন দেখতে হবে। তাঁর সেই শর্ত নিয়ে দল কী বিবেচনা করেছে তাও সম্ভবত ওই প্রবীণ সাংসদ এখনও তাঁকে জানাননি।
ফলে শুভেন্দু আজ যে কথাগুলি বললেন, সেটাই হয়তো শেষ কথা নয়। তবে বলা যায়, বিষয়টি ক্রমশই একটি নিষ্পত্তির দিকে এগোচ্ছে। আগামী সপ্তাহ দুয়েক এ ব্যাপারে উত্তেজনায় ভরপুর থাকবে বলেই মনে করছেন অনেকে।