দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ মুকুলের ফুল বদলের পরেই রুদ্ধদ্বার বৈঠকে মোদী শাহ নাড্ডা, কেন্দ্রে রদবদলের ইঙ্গিত !
সামনে উত্তরপ্রদেশের ভোট। তার উপর দলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি হাত ছেড়েছেন। জাতীয় স্তরে বিজেপির ভাবমূর্তিও যে খানিক টলে যায়নি, তা নয়। তাই মুকুল ঝরার পরেই দিল্লিতে দেখা গেল জরুরি বৈঠক। রইলেন নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহ এবং জেপি নাড্ডা।
এবার কি বদল আসতে চলেছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায়? প্রধানমন্ত্রীর সাত কল্যাণমার্গের বাসভবনে অমিত শাহ, জে পি নাড্ডার বৈঠক তেমনটাই ইঙ্গিত দিচ্ছে। সূত্রের খবর, এই হেভিওয়েট বৈঠকের আগে গত এক মাসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নানা স্তরের কোভিড বৈঠকের পাশাপাশি অন্তত এক ডজন মন্ত্রী-সাংসদদের সঙ্গে একান্ত আলোচনা সেরেছেন এই নিয়ে। দু’বছর পেরিয়েছে এনডিএ মন্ত্রীসভার। এই পর্যায়ে এসে অমিত শাহ, জে পি নাড্ডার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক ক্যাবিনেটের রদবদলের জল্পনাই উস্কে দিচ্ছে।
সূত্র বলছে, কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রকোপ ধীরে ধীরে কমছে। মোদী হয়ত তাই এই মুহূর্তে চাইছেন তাঁর মন্ত্রিসভার মন্ত্রীদের পারফরম্যান্সের মূল্যায়ন করতে তিনি ক্যাবিনেটের সদস্যদের ছোট ছোট দলের সঙ্গে দেখাও করছেন।
সূত্রের খবর চলতি সপ্তাহের শুরুতে মোদী অন্তত একডজন মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। তাঁরা প্রত্যেকে নিজেদের এ যাবৎ কাজের রিপোর্ট দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীকে। পাশাপাশি তাদের ভবিষ্যতের কাজের রোডম্যাপও প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছেন তাঁরা।
সূত্রের খবর, প্রধানমন্ত্রী তাঁদের কাছে পরিষ্কার করে দিয়েছেন গোটা বছরটাই করোনার জন্য নষ্ট হয়ে গিয়েছে তাই এবার প্রত্যেককে মাঠে নেমে যার যার কাজের জায়গায় অনেক বেশি সক্রিয় হতে হবে, তৎপর হয়ে সমস্যা মেটাতে হবে। আর এই কথাবার্তার শেষে শুক্রবার সন্ধ্যায় মোদীর হেভিওয়েট মিটিং আরও বেশি জল্পনা উস্কে দিচ্ছে।
দ্বিতীয় বার মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিজেপির বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতা প্রয়াত হয়েছেন। অন্য দিকে শিবসেনা আকালি দলের মতো রাজনৈতিক শক্তির সঙ্গে এনডিএ-র গাঁটছড়া ছিন্ন হয়েছে। এই সব মিলিয়ে এখন অন্তত দুই ডজন জায়গা ফাঁকা রয়েছে এনডিএ-তে। বেশ কয়েকজন বরিষ্ঠ মন্ত্রীকে এই মুহূর্তে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাদেঁর মধ্যে অনেকে আবার জানিয়েও দিয়েছেন দায়িত্বের চাপে জেরবার তাঁরা।
২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসার এক বছরের মধ্যেই ক্যাবিনেটের রদবদল ঘটিয়েছিলেন। পাঁচ বছরের মধ্যে তিনবার ক্যাবিনেট মন্ত্রী মুখ পরিবর্তিত হয়েছে। কিন্তু দ্বিতীয় পর্যায়ে সেই সুযোগ প্রধানমন্ত্রী পাননি তার প্রধান কারণ করোনা। গোটা দেশ এই অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সঙ্গে লড়তে বাধ্য হয়েছে। এখন দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রকোপ কমায় তাই প্রধানমন্ত্রী চাইছেন যেসব মন্ত্রীকে তিন-চারটি দায়িত্ব সামলাতে হচ্ছে তাদের চাপ হালকা করতে, একই সঙ্গে শূন্য পদ গুলি পূরণ করতে।
এখানেই শেষ নয়, সামনেই উত্ত প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড গুজরাট, গোয়া, মনিপুর পাঞ্জাবে ভোট রয়েছে। বাংলা দখলে ব্যর্থ বিজেপি আরও আগ্রাসীভাবে চাইছে সাম্রাজ্য বিস্তার করতে। মন্ত্রিসভার রদবদলের সঙ্গে এই বিষয়টিও সম্পর্কিত বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। মনে করা হচ্ছে উত্তরপ্রদেশ থেকে তথাকথিত নীচুতলার বা অনগ্রসর গোষ্ঠীর থেকে প্রতিনিধিদের তুলে আনা হতে পারে রাজধানীতে।
আগামী দিনে নতুন মুখ হিসেবে কারা কারা জায়গা করে নিতে পারেন কেন্দ্রে? সূত্রের খবর, অসমের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়ালের নাম এ ব্যাপারে প্রথমেই উঠে আসে। সর্বানন্দ সোনোয়ালকেই ক্যাবিনেটে দেখা যেতে পারে বলেই মত বিশেষজ্ঞদের একাংশের।
গতবছর বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া। মধ্যপ্রদেশে শিবরাজ সিং চৌহানের সরকার ফেলতে সিন্ধিয়া বড় ভূমিকা নিয়েছিলেন। মিডিয়ায় গুঞ্জন তাকে এবার ক্যাবিনেটে দেখা যেতে পারে। পাশাপাশি শান্তিপূর্ণভাবে আসামে ক্ষমতার হস্তান্তর হয়েছে, সর্বানন্দ সোনোয়াল এর জায়গায় আসামের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন হিমন্ত বিশ্বশর্মা।
এ দিকে বিজেপির বিহারের জোটসঙ্গী জনতা দল দিল্লিতে দু’জন সাংসদ পাঠাতে চায়। বিজেপি অবশ্য পরিষ্কার করে দিয়েছে, এ ক্ষেত্রে একজন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পাবে। অন্যজন পাবে ক্যাবিনেট পদ।
বাংলার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে দেখা করতে দিল্লি গিয়েছেন দিন দুয়েক আগে। গিয়েছেন বাংলা বিজেপির তিন সাংসদও। মন্ত্রিসভায় রদবদল হলে বাংলাকে যে একেবারে ব্রাত্য করা হবে না, তার একটা ইঙ্গিতও দেখতে পাচ্ছেন পর্যবেক্ষক মহল।