মতুয়া ভোটব্যাঙ্ক নিয়ে দড়ি টানাটানি শুরু দুই ফুলে

0
1013

দেশের সময় : দুই দিনের বাংলা সফরে রাজ্যে এসেছেন অমিত শাহ।আর তারপরই মতুয়া ভোটব্যাঙ্ক নিয়ে দড়ি টানাটানি শুরু হয়ে গিয়েছে ঘাসফুল ও পদ্মফুল, দুই শিবিরেই। রাজ্য সফরের দ্বিতীয় দিন আমিত শাহ মধ্যাহ্নভোজন সারবেন মতুয়া পরিবারে।

অন্যদিকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর মধ্যেই দাবি করেছেন, তার সরকারের আমলে মতুয়াদের উন্নতি হয়েছে। প্রসঙ্গত বাংলার ভোটে মতুয়াদের বিরাট ভূমিকা রয়েছে।

২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে এসে মতুয়াদের বড় মা বীনাপানি দেবীর সঙ্গে দেখা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বড়মার আর্শীবাদও নেন তিনি। বীনাপানি দেবীর নাতি শান্তনু ঠাকুর বর্তমানে বিজেপি সাংসদ। 

শুক্রবার দুপুরে নিউটাউনে মতুয়াদের একটি মন্দিরে দর্শনে যাবেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। ইতিমধ্যে অমিত শাহের আসার খবরে সেজে উঠেছে গোটা মন্দির চত্বর। মহিলারা ফুল দিয়ে স্বাগত জানাবেন অমিত শাহকে। সফরকালে দুটি দাবি করবেন মতুয়ারা। প্রথম, যত দ্রুত সম্ভব সিএএ লাগু করতে হবে। মতুয়াদের এলাকায় রাস্তার নাম ভগবান গুরুচাঁদ ঠাকুর সরণী দিতে হবে।

মন্দিরটি নিউটউনের জয়নগর এলাকায়। ইতিমধ্যে গোটা এলাকায় কার্যত ভরে গিয়েছে বিজেপির পতাকায়। স্থানীয় মতুয়া প্রতিনিধিরা জানিয়েছে, অমিত শাহ পা রাখার মধ্যে জোরদার স্বাগত জানানো হবে। বেজে উঠবে ডঙ্কা, কাঁসা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এখানে এসে পুজো দেবেন। তারপর তাঁকে প্রসাদও বিতরণ করা হবে। সব মিটে গেলে স্থানীয় মতুয়াদের সঙ্গে কথাও বলবেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

এসসি ভোটের মোট ১৭.৪ শতাংশ রয়েছে মতুয়াদের। রাজবংশীদের পরেই রয়েছে মতুয়ারা। গোটা রাজ্যে হিন্দু জনসংখ্যার ১.৮ কোটি এসসিরা। বাংলার মোট ১০টি সিট এসসিদের জন্য রয়েছে। এর মধ্যে ২০১৯ সালের নির্বাচনে বিজেপি পেয়েছে ৪টি সিট-কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, বিষ্ণুপুর ও বনগাঁ। এই ভোটব্যাঙ্ক ধরে রাখতে বিজেপি প্রথম থেকেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার বেশ কিছু বিধানসভায় প্রভাব রয়েছে মতুয়াদের। এছাড়া হুগলি, হাওড়া ও নদিয়াতেও রয়েছেন মতুয়ারা। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলকে বড়সড় ধাক্কা দেয় বিজেপি। তৃণমূলের মমতাবালা ঠাকুরকে হারিয়ে জিতে যান বিজেপির শান্তনু ঠাকুর।

আর কয়েক মাস পরেই রাজ্যে বিধানসভা ভোট। মতুয়া ভোটব্যাঙ্ক ধরে রাখতে তৈরি সবপক্ষই। ২০২১ সালে ভোটের দামামা বাজিয়ে রাজ্যে পা রেখেছেন অমিত শাহ। এই সফরকালে তাঁর মতুয়াদের বাড়ি মধ্যাহ্নভোজন ও মন্দিরে যাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

মতুয়াদের জন্য একগুচ্ছ ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর

অন্যদিকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বাংলায় পা রাখার আগেই গত বুধবারই নবান্ন থেকে মতুয়া সম্প্রদায়ের জন্য একগুচ্ছ ঘোষণা করে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

এদিন ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ করে মতুয়াদের উন্নয়ন পর্ষদ তৈরির ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। মতুয়া সম্প্রদায়ের কথা প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ম‌তুয়াদের কাছে এখন অনেক নেতা উড়ে এসে জুড়ে বসছেন। তাঁরা জানেন না, আমি বড়মাকে প্রথম থেকে দেখেছি। সেখান থেকেই মমতাবালা ঠাকুরের সঙ্গে পরিচয়। মতুয়াদের জন্য বহু প্রকল্প চালু হয়েছে। মতুয়া সম্প্রদায়ের উন্নয়নে বোর্ড গঠন করা হয়েছে।’‌ এ ছাড়া নদিয়ার মতুয়া গোষ্ঠীর আবেদন অনুযায়ী দু’টি অ্যাম্বুল্যান্স দেন।

উদ্বাস্তুদের নিয়ে দীর্ঘদিন আন্দোলন করেছি। আমি ওঁদের জন্য অনেক দিন আগে থেকেই লড়াই করছি। তখন ওঁদের কথা কেউ ভাবেনি। এখন বহু নেতা উদ্বাস্তুদের নিয়ে কথা বলছেন। নতুন নেতা এসে উদ্বাস্তুদের জমির দলিল নিয়ে বলছেন। ভোট এলেই অনেকের তাঁদের কথা মনে পড়ে।’‌ 

প্রসঙ্গত, অমিত শাহের লক্ষ্য বাংলার উদ্বাস্তু ভোট। সেদিকে তাকিয়ে মতুয়া ভোটব্যাঙ্ককে বাড়তি গুরুত্ব দিচ্ছে বিজেপি। এই পরিস্থিতিতে মতুয়া ভোট নিজেদের দিকে টানতে উদ্যোগী তৃণমূলও। শাসকদল দাবি করে, অসমের এনআরসি দেখে আতঙ্কিত এরাজ্যের মতুয়া শিবির। বিজেপির দেশছাড়া করার ষড়যন্ত্র ধরে ফেলেছেন তাঁরা।

পরিসংখ্যান বলছে, বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রের ৭টি বিধানসভা এলাকার মধ্যে ৬ বিধানসভা এলাকাতেই ৪০ শতাংশের বেশি ভোট মতুয়াদের। সারা রাজ্যে আরও প্রায় ৫০-এর বেশি বিধানসভা আসনে মতুয়া ভোটের প্রভাব আছে। মূলত বনগাঁ, নদিয়া, হুগলি, হাওড়ায় মতুয়া ভোট রয়েছে। 

আর সেই জায়গা থেকেই তাদের রাজনীতি। মতুয়াদের এই নাগরিকত্বের দাবিকে দুই শিবিরই ভোটবাক্সে এনক্যাশ করতে চাইছে বলে মত ওয়াকিবহল মহলের। লোকসভা নির্বাচনে এনআরসি-কে হাতিয়ার করে মতুয়াদের প্রভাবিত করে ছিল বিজেপি। এবার সেই এনআরসি-কেই হাতিয়ার করে একুশের মতুয়া ভোট পেতে মরিয়া তৃণমূলও।

এই পরিস্থিতিতে বনগাঁর সাংসদ তথা অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের যুগ্ম সঙ্ঘাধিপতি শান্তনু ঠাকুর বলছেন,‘‘পাট্টা পরে হবে, আগে মুখ্যমন্ত্রী বলুন, কেন্দ্রের নয়া নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) তিনি সমর্থন করেন কিনা।’’ নয়া নাগরিকত্ব আইন দ্রুত চালু করার জন্য এর আগে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন বনগাঁর অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের যুগ্ম সঙ্ঘাধিপতি শান্তনু ঠাকুর (বনগাঁর সাংসদ) নাগরিকত্বের দাবিতে দীর্ঘ দিন ধরে আন্দোলন করছেন মতুয়ারা। কেন্দ্রের নাগরিকত্ব আইন চালু হওয়ার আগে মুখ্যমন্ত্রী পাট্টা দিয়ে যদি মতুয়া মন কেড়ে নেন, তা হলে বিপাকে পড়বেন বিপক্ষ শিবিরের সাংসদ শান্তনু। তিনি ফোনে সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘‘মতুয়াদের উন্নয়ন হোক, সেটা আমিও চাই। কিন্তু ভোটের আগে মতুয়াদের নিয়ে রাজনৈতিক খেলা আমি সমর্থন করি না। মতুয়াদের প্রকৃত উন্নয়ন কতটা হবে, তা আগামী দিনে মানুষ বুঝতে পারবেন। ভোটের আগে মুখ্যমন্ত্রী রাজনৈতিক সমীকরণ করার জন্য এই ঘোষণা করলেন।’’

এদিকে রাজ্য সফরের দ্বিতীয় দিনে অমিত শাহের আগমনকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যেই নিউটাউনের জ্য়োতিনগর এলাকায় ব্যাপক উৎসাহ দেখা গিয়েছে। এলাকা ছেয়ে গিয়েছে বিজেপির পতাকায়। সম্ভবত মতুয়াদের আবেদন মেনে এখানেই কিছু বক্তব্য় রাখতে পারেন শাহ। মতুয়া মন্দিরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আগমন সম্পর্কে বাগজোলা হরি গুরুচাঁদ মতুয়া সংঘের প্রেসিডেন্ট মনোজ কুমার ব্রহ্ম জানান, জ্য়োতিনগর এলাকা দিয়ে মন্দিরে ঢুকবেন অমিত শাহ। সেখানেই তাঁর কনভয়কে ফুল ছুড়ে স্বাগত জানানো হবে। গুরুদেবের প্রতীক ডঙ্কা, কাঁসি নিয়ে সেখানে উপস্থিত থাকবেন অনুগামীরা।

মন্দিরে পুজো সেরে প্রসাদ নেওয়ার পরই শাহের হাতে তাঁদের দাবিপত্র তুলে দেবেন বাগজোলা মতুয়া সংঘের প্রতিনিধিরা। দুই দাবির মধ্য়ে দ্রুত সিএএ বাস্তবায়নের পাশাপাশি  রয়েছে গুরুচাঁদ ঠাকুরের নামে রাস্তার বিষয়টিও। বাগজোলা খালের রাস্তা অর্থাৎ ভিআইপি-কেষ্টপুর মোড় থেকে যাত্রাগাছি সিক্স লেনকে গুরুচাঁদ ঠাকুর সরণি নামের প্রস্তাব করবেন তারা। সেখানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে কিছু বলার জন্য অনুরোধ করা হবে। এরপরই বাগজোলা হরি গুরুচাঁদ মতুয়া সংঘের সোশ্য়াল ডেভেলপমেন্ট সেক্রেটারি নবীন বিশ্বাসের বাড়ি যাবেন অমিত শাহ।

দ্বিতীয় দিনের কর্মসূচিতে লক্ষ্য মতুয়া সম্প্রদায়। বঙ্গ সফরে এসে আজ শুক্রবার নিউটাউনে মতুয়াদের মন্দিরে যাবেন অমিত শাহ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে তারপরই নিজেদের দুই দাবি তুলে ধরবেন মতুয়ারা। দ্রুত সিএএ বাস্তবায়নের পাশাপাশি আরাধ্য গুরুর নামে রাস্তার নাম দিতে চান মতুয়ারা। 

পর্যবেক্ষকদের মতে এখন দেখার মতুয়া ভোটব্যাঙ্ক নিয়ে দড়ি টানাটানি শুরু হয়েছে দুই ফুলে,দ্রুত কোন ফুল মতুয়াদের মন ছুঁতে পারে৷

Previous articleবিজেপি মনীষীদের অপমান করে,আমরা সহ্য করব না:মমতা
Next articleগরুপাচার-কাণ্ডে দিল্লিতে সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার এনামুল হক

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here