দেশের সময়ওয়েবডেস্ক: ভোট-পরবর্তী খুন ও ধর্ষণের অভিযোগে এবার সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চ। খুন-ধর্ষণ বাদ দিয়েও যেসব জায়গায় হিংসাত্মক ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ সেখানে সিট গঠন করার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। সিবিআই এবং সিট- কে আগামী ছয় সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট দিতে হবে, আজ এমনটাই জানিয়েছে আদালত। পাশাপাশি রাজ্য সরকারকে হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছে ভোট পরবর্তী হিংসায় যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের জরুরি ভিত্তিতে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
বৃহত্তর বেঞ্চের তরফে এই রায় দেওয়া হল। তিন আইপিএস আধিকারিক সুমনবালা সাহু, সৌমেন মিত্র এবং রণবীর কুমারকে নিয়ে সিট গঠন করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নজরদারিতে কাজ করবে সিট। আগামী ৬ সপ্তাহের মধ্যে সিবিআই ও সিটকে রিপোর্ট দিতে হবে। নতুন একটি ডিভিশন বেঞ্চ গঠন করা হবে। আর এই রিপোর্ট সেই বেঞ্চে জমা দিতে হবে। নতুন কোনও অভিযোগ থাকলে সেই বেঞ্চেই জানাতে হবে।
অন্যদিকে হাইকোর্টের তরফে বলা হয়েছে, ভোট পরবর্তী হিংসায় যে সকল ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাঁদের এখনই ক্ষতিপূরণ দিতে হবে রাজ্যকে। পাশাপাশি দুই তৃণমূল নেতা জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ও পার্থ ভৌমিকদের মামলায় যুক্ত হওয়ার আবেদন খারিজ করেছে কলকাতা হাইকোর্ট। পাশাপাশি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্টে পক্ষপাতিত্বের যে অভিযোগ তুলেছিল রাজ্য তা সঠিক নয় বলে জানিয়েছে আদালত। সমস্ত অভিযোগের তথ্য খতিয়ে দেখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিচারপতি।
রায় ঘোষণার পর তৃণমূল মুখপাত্র কুনাল ঘোষ টুইটে লেখেন, ‘হাইকোর্টের অর্ডার নিয়ে প্রকাশ্য বিরোধিতা করা যায় না। ওঁরা নির্দেশ দিয়েছেন। সরকার এবং দলের শীর্ষ নেতৃত্ব এই নির্দেশ খতিয়ে দেখে প্রতিক্রিয়া জানাবেন। সম্ভাব্য আইনি দিকগুলি বিবেচিত হবে। আমরা মনে করি NHRC-র রিপোর্ট সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তবে হাইকোর্টের রায় নিয়ে এখন কোনও মন্তব্য করছি না।’
HC order নিয়ে প্রকাশ্য বিরোধিতা করা যায় না। ওঁরা নির্দেশ দিয়েছেন। সরকার এবং দলের শীর্ষ নেতৃত্ব এই নির্দেশ খতিয়ে দেখে প্রতিক্রিয়া জানাবেন। সম্ভাব্য আইনি দিকগুলি বিবেচিত হবে। আমরা মনে করি NHRCর রিপোর্ট সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তবে HC নিয়ে এখন কোনো মন্তব্য করছি না।
— Kunal Ghosh (@KunalGhoshAgain) August 19, 2021
অন্যদিকে দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘গণতন্ত্রকে কালিমালিপ্ত করা হয়েছিল। এটা হওয়ারই ছিল। অনেক কর্মীকে হারিয়েছি। সঠিক তদন্ত হোক। আশা করি ন্যায়বিচার হবে। নির্যাতিতারা সুবিচার পাবেন।’
হাইকোর্টের নির্দেশে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে আদালতে রিপোর্ট জমা দিয়েছিল জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের টিম, তারা প্রায় ১৯০০-র বেশি অভিযোগে সারবত্তা খুঁজে পেয়েছিল। এর মধ্যে ৭২টি ধর্ষণের ঘটনা ছিল, ৫২টি খুনের অভিযোগ ছিল। বলা হয়েছে, এই ধরনের হেনিয়াস ক্রাইম বা জঘন্য অপরাধের ক্ষেত্রে তদন্ত করবে সিবিআই। ফলে মনে করা হচ্ছে মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্টকেই প্রাইমা ফেসিয়া হিসেবে মেনে নিয়ে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে পাঁচ বিচারপতির বৃহত্তর বেঞ্চ।
বাকি অভিযোগের ক্ষেত্রে তদন্ত হবে সিটের নেতৃত্বে। বলা হয়েছে এই তদন্ত চলবে হাইকোর্টের নজরদারিতে। অর্থাৎ হাইকোর্টের নির্দেশ ছাড়া কাউকে গ্রেপ্তার করা চলবে না। তিন আইপিএস আধিকারিক সুমন বালাসাহু, সৌমেন মিত্র এবং রণবীর কুমারকে সিট গঠনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। গাড়িভাঙা, বাড়িতে অগ্নিসংযোগ-এর মতো যে অভিযোগগুলি তা খতিয়ে দেখে ছয় সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট দেবেন তারা। আগামী ৪ অক্টোবর এই মামলার পরবর্তী শুনানি।