পিয়ালী মুখার্জী ও তমসী চ্যাটার্জী : চাকদহ: সুর তাল, লয়, ছন্দ যখন মিলিত হয় তখন তৈরি হয় এক নৈস্বর্গিক মহিমা। আর সা থেকে রে তে যাবার যে সফর সেখানেই তৈরি হয় “মিড়”। দেবজ্যোতি বোস, ও সোহিনী বন্দ্যোপাধ্যাযের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় জন্ম নিয়েছে “মিড়”।
ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীত ও নৃত্যের পরম্পরার ধারা ধারণ ও বহন করার প্রতিশ্রুতি নিয়ে মিড় এর আত্মপ্রকাশ। গত ২০শে মার্চ নদীয়ার চাকদহের সম্প্রীতি মঞ্চে অনুষ্ঠিত হলো মিড় আয়োজিত সুরের ঝর্ণাধারা। বহু নামি ও গুণীজনের আগমনে আশীর্বাদ ধন্য এই মঞ্চ হয়ে উঠেছিল সঙ্গীত দেবতার আরাধনা স্থল।
অনেক নামি অনামি সম্ভবনাময় ও প্রতিশ্রুতিময় শিল্পীদের নিয়ে ছিলমিড় এর নিবেদন। তারুণ্যে দীপ্ত এই সংস্থা। কিছু অল্প বয়সী প্রতিভাবান শিল্পী মিলে গড়ে তুলেছে তাদের স্বপ্নকে। চাকদহের পুরোনো পরম্পরা শাস্ত্রীয় ঘরানার যে প্রচলন ছিল তাকেই নতুন করে ফিরিয়ে এনেছেন দেবজ্যোতি ও সোহিনী।
আগে প্রচলিত থাকলেও আর্থিক অপ্রতুলতার ছেদ পরে এই পরম্পরায়। সেই ঘরানাকেই নব কলেবরে ফিরিয়ে এনেছেন নতুন প্রজন্ম। তাদের এই প্রচেষ্টা অজয় চক্রবর্তী, রশিদ খান, সমর সাহার আশীর্বাদে ধন্য। অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ও সঞ্চালিকা ছিলেন দীপন পাল ও সুচিস্মিতা সিংহ।
সেদিনে মিড় এর প্রথম নিবেদন ছিল ওঙ্কার। নজরুলগীতি কে নিয়ে শাস্ত্রীয় সংগীতের মতো করে পরিবেশন। কণ্ঠে সাগ্নিক দে, শ্রীকণ্ঠ হালদার, অগ্নিভ সাহা, স্নেহা রায়, জিবেশ বাড়ুই, পাখোয়াজে জয়েস পান্ডে, তবলায় সচিত্র পাল। নৃত্যে ঋতুব্রতা পান্ডে, স্বীকৃতি সাহা, গ্রেসি চৌধুরী, বর্ণালী বোস।
প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন গুরু পন্ডিত সমর সাহা। যাঁকে মঞ্চেই গুরু পুজো করলেন এই প্রজন্মের শিল্পী তাঁর শিষ্য দেবজ্যোতি বোস, যিনি রবীন্দ্রভারতী থেকে স্নাতকোত্ত করেছেন। উপহার হিসেবে দিলেন গ্রামোফোন। যা পেয়ে সমর সাহা আপ্লুত ও আবেগপ্রবন হয়ে পড়লেন। ছিলেন গুরু মাতা বিদুষী মধুমিতা সাহা, শান্তনু ভট্টাচার্য, নাট্যব্যক্তিত্ব চন্দন সেন। উপদেষ্টা মন্ডলীর প্রধান ছিলেন পন্ডিত কুমার বসু।
সাথে ছিলেন পদ্মভূষণ বিজয় কিচলু, ওয়াসিম আহমেদ খান প্রমুখ। মিড় সাথে পেয়েছিল বহু নামি দামি বিজ্ঞাপন দাতাদের। যারা ভবিষ্যতে সর্বত ভাবে পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এই পর্বে চাকদহের শিল্পী সংযুক্তা বিশ্বাস, হারমোনিয়ামে রূপশ্রী ভট্টাচার্য, তবলায় ছিলেন বিভাষ সাহা। এই মঞ্চে সম্মানিত করা হলো অরুণ ভট্টাচার্য, কৃষ্ণপদ ঘোষ, দুলাল ঘোষ, রেখা চ্যাটার্জী কে গুরু সমর সাহার হাত দিয়ে। ছিল উজ্জ্বল ভারতীর একক তবলা। সংগতে হারমোনিয়ামে সুব্রত ভট্টাচার্য্য।
শেষ নিবেদন এর নাম ছিল রঙ্গ সারঙ্গ এই পর্বে সরোদে ছিলেন সিদ্ধার্থ বোস সাথে আর্কদীপ দাস ও দেবজ্যোতি বোস। কণ্ঠে পলাশ কুরি, সতানিক চ্যাটার্জী, নৃত্যে সোহিনী বন্দ্যোপাধ্যায়, যিনি রবীন্দ্রভারতী থেকে নৃত্যে স্নাতকোত্তর করেছেন। সাথে শ্রীকৃষ্ণের বেশে ছিল ছোট্ট শিল্পী চার বছরের আহেরী ব্যানার্জী।
দেবজ্যোতি জানালেন “সকলে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে সারা দিয়ে এগিয়ে এসেছেন, পাশে থেকেছেন। স্বভাবতই আমরা খুব খুশি। কলকাতা থেকে বড় বড় শিল্পীরা এই অনুষ্ঠান শুনেছেন, খোঁজ নিয়েছেন উৎসাহিত করেছেন। তবে আমাদের বড় অন্তরায় আর্থিক অপ্রতুলতা। সামান্য বাজেটে এই অনুষ্ঠান আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া কষ্টসাধ্য। তবে অনেকেই পাশে থাকার অঙ্গীকার করেছেন”। এই মিড় কে তারা ভবিষ্যতে আরও বড় মঞ্চ দিতে চান নবকলেবরে।