দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ আনলক-১-এর দ্বিতীয় সপ্তাহে , সোমবার থেকে ৭০ শতাংশ কর্মী নিয়ে প্রায় পুরোদস্তুর খুলে গেল রাজ্য সরকারি অফিস। চালু হল বেসরকারি অফিস, শপিং মল, রেস্তোরাঁও। ফলে আজ থেকে রাস্তায় লোকজনের ভিড় বাড়তে শুরু করেছে। সমানতালে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যাও। স্বাভাবিক জনজীবনের পথে হাঁটলেও কেন্দ্রীয় সরকার ৩০ জুন পর্যন্ত লকডাউন ঘোষণা করেছিল আগেই। এদিন নবান্নে মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও ৩০ জুন পর্যন্ত রাজ্যে লকডাউন চলার কথা জানিয়ে দেন।
সোমবার নবান্নের সভাঘরে এই ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি আজ থেকে যে ‘আনলক ফেজ ১’ চালু হয়েছে কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানে লকডাউন শিথিল করে, তাও চালু থাকবে। কিন্তু অবাধ চলাচলে এখনও নিষেধাজ্ঞা রয়ে গেল, রয়ে গেল আরও একগুচ্ছ বিধিনিষেধ।
গত সপ্তাহের শনিবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছিল, ৩০ জুন পর্যন্ত লকডাউন চলবে। কিন্তু সব বন্ধ থাকবে না। বরং এ বার ধাপে ধাপে তালা খুলবে। যাকে বলা হয়েছে, ‘আনলক ফেজ ১’। প্রথম ধাপে সেই তালা খোলার পর্বে ৮ জুন থেকে সমস্ত রেস্তোরাঁ, শপিংমল, ধর্মস্থান খোলা যাবে বলে জানানো হয়েছিল। সে মতোই আজ থেকে এ রাজ্যেও খুলে গেছে অনেক শপিং মল ও রেস্তরাঁ।
তবে লকডাউন এখনও কড়া ভাবে মানতে হবে কিছু ক্ষেত্রে। যেমন আন্তর্জাতিক বিমান পরিষেবা, সিনেমা হল, মেট্রো রেল, জিমনাশিয়াম, সুইমিং পুল, বিনোদন পার্ক, থিয়েটার, বার, অডিটোরিয়াম বন্ধ রাখতে হবে। কোনও বড় জমায়েতও করা যাবে না। এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে বলেন, শ্রাদ্ধানুষ্ঠান এবং বিয়েবাড়িতে সর্বোচ্চ ২৫ জন পর্যন্ত জমায়েত করা যাবে।
কেন্দ্রের নির্দেশিকায় আরও বলা হয়েছিল, কন্টেনমেন্ট জোনের মধ্যে জরুরি পরিষেবা ছাড়া আর কিছু খোলা থাকবে না। কন্টেনমেন্ট জোন কোনগুলি, তার পরিধি কতটা, তা রাজ্য সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনকে পরিষ্কার ভাবে চিহ্নিত করতে হবে। সেখানে কঠোরভাবে লকডাউন মানতে হবে। মুখ্যমন্ত্রীও এ কথাই আজ নিশ্চিত করেন। রাজ্যের কন্টেনমেন্ট জ়োনগুলিতে সবরকম কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি থাকবে।
পাশাপাশি,রাজ্যের মধ্যে ও আন্তঃরাজ্য যাতায়াতে কোনও বিধিনিষেধ থাকছে না। মালপত্র থেকে মানুষ, যাতায়াতের জন্য কাউকে আলাদা করে কোনও অনুমতি নেওয়ারও প্রয়োজন নেই। মেট্রো রেল, সিনেমা হল, জিম, সুইমিং পুল, বিনোদন পার্ক, থিয়েটার, পানশালা, যে কোনও ধরনের অডিটরিয়াম অবশ্য বন্ধই থাকছে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন মনে করিয়ে দেন, আগামী ১০ জুন পর্যন্ত ভিন্ রাজ্য থেকে আরও অনেক ট্রেন আসবে। সব মিলিয়ে ১১ লক্ষেরও বেশি লোক ঢুকে যাবে বাইরে থেকে। ফলে সতর্কতা বজায় রাখতেই হবে।
লোকাল ট্রেন চলছে না, অথচ অফিস আসতে হচ্ছে কর্মীদের। এই পরিস্থিতিতে অনেকেরই ভরসা হয়ে উঠেছে সাইকেল। কলকাতার বিভিন্ন রাস্তায় সাইকেল চলার বিষয়ে পুলিশকে নোটিফিকেশন জারি করতে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে পথ দুর্ঘটনা যাতে না ঘটে সেই বিষয়টিও গুরুত্ব সহকারে দেখতে বলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
শুধু তাই নয়, এদিনের মন্ত্রিসভার বৈঠকে লজেস্টিক ও শিল্প পরিকাঠামো বিকাশে ১০৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এই টাকা বিশ্বব্যাঙ্কের কাছ থেকে ঋণ হিসেবে পাওয়া গিয়েছে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। এছাড়াও ৮৫০ কোটি টাকা জয় জহর, জয় বাংলা-সহ বিভিন্ন সামাজিক প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে।
করোনা-শূন্য জেলার সংখ্যা দিন দশেক আগেই শূন্য হয়ে গিয়েছিল রাজ্যে। কিন্তু একদিনে বাংলার সব ক’টি জেলা থেকে কোভিড পজিটিভ রোগী মেলার নজির এ যাবৎ দেখা যায়নি। কিন্তু পরিযায়ীর জেরে এবার তা-ও দেখা গেল। রবিবার রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের দেওয়া বুলেটিন বলছে, শনিবার ২৩টি জেলার সব ক’টি থেকেই মিলেছে করোনা। এবং তার জেরে গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৪৯ জন করোনা আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে। এই নিয়ে পর পর তিন দিন চার শতাধিক (শুক্রবার ৪২৭, শনিবার ৪৩৫) রোগীর সন্ধান মিলেছে বাংলায়। ফলে রাজ্যে মোট আক্রান্তের সংখ্যাও আট হাজারের গণ্ডি টপকাল রবিবারই৷
সেই ৮১৮৭ জন করোনা পজিটিভের মধ্যে বর্তমানে ৪৪৮৮ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন বিভিন্ন হাসপাতালে। এই পরিস্থিতিতে সরকারি-বেসরকারি অফিস, শপিং মল, রেস্তোরাঁ-সহ সমস্ত কিছুই স্বাভাবিক হচ্ছে গোটা রাজ্যে। ফলে করোনা সংক্রমণ রোখা আদৌ কতটা সম্ভব হবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তার প্রহরগুনছেন প্রশাসন থেকে সাধারণ মানুষ সকলেই।