দেশের সময়, বনগাঁ: ২০১৫ সালের বনগাঁ পুরসভা নির্বাচন প্রসঙ্গে তৃণমূলের প্রাক্তন শহর সভাপতি তথা প্রাক্তন পুরপ্রধান শঙ্কর আঢ্যর প্রকাশ্য বিস্ফোরক মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করে বৃহস্পতিবার বিকেলে পাল্টা সাংবাদিক বৈঠক করল তৃণমূল। সেখানে শঙ্কর আঢ্যর মন্তব্যকে ‘পাগলের প্রলাপ’ বলে আক্ষায়িত করে তাঁর কাজকর্মের বিরোধীতা করে তাঁর বিরুদ্ধে দলগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে এদিনের সাংবাদিক বৈঠকে জানান দলের নেতৃত্ব।
শঙ্কর আঢ্যের বক্তব্য প্রসঙ্গে এদিন বনগাঁ সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সভাপতি সন্দীপ দেবনাথ সাংবাদিক বৈঠকে সাংবাদিকদেরকে বলেন প্রাক্তন পুরপ্রশাসক শঙ্কর আঢ্য পাগলের প্রলাপ বকছেন, নিজের দোষ ঢাকতে নেতা মন্ত্রীদের উপর দায় চাপাচ্ছেন”,
তৃণমূলের এই কলহ প্রকাশ্যে চলে আসায়, তা নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিরোধীরা।
এই বিষয়ে বনগাঁর বিজেপি নেতা দেবদাস মন্ডল বলেন, এখন প্রাক্তন চেয়ার ম্যানকে কেন পাগল বলে এড়িয়ে যাচ্ছে তৃণমূল। তাকে ঝেড়ে ফেলার জন্য? পুরসভার চেযারকে সামনে রেখে তিনি যা যা কাজ করেছেন তৃণমূল কংগ্রেস জানতো না? বনগাঁর মানুষ এর বিচার করেছে ২০১৯ সালে। পরবর্তীতে ২০২১- এও মানুষ রায় দিয়েছে। আগামী পুরসভা ভোটে এর ফল পেয়ে যাবে।
প্রসঙ্গত, কয়েক দিন আগে বনগাঁয় একটি অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রকাশ্যে শঙ্কর আঢ্য যে মন্তব্য করেন তাতে প্রকাশ পায় যে, দলের নেতৃত্বের নির্দেশে তিনি এবং দলের কর্মীরা ২০১৫ সালের পুরসভা নির্বাচনে ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে অন্যায় পথ অবলম্বন করে সেই ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী মৌসুমী চক্রবর্তীকে জয়ী করিয়েছিলেন। এই কাজ করা তাঁর রাজনৈতিক জীবনের বড় ভুল ছিল বলে উল্লেখ করে, তারজন্য তিনি এদিন প্রকাশ্যে ক্ষমাও চেয়ে নেন।বক্তব্যের ওই ভিডিয়োটি ভাইরাল হয়েছে নেটমাধ্যমে। তার পর থেকে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতর।
ওই সভায় শঙ্কর যা বলেছেন, তাতে বকলমে রিগিংয়ের কথা স্বীকার করে নিয়েছেন তিনি। জেলা নেতৃত্বের নির্দেশেই তিনি এ কাজ তিনি করেছিলেন বলে দাবি করেছেন। শঙ্কর ওই সভায় বলেছেন, ‘‘আমি জীবনে যদি কোনও রাজনৈতিক ভুল করে থাকি, তাহলে তা করেছি ২০১৫ সালের পুরভোটের সময়। যদিও সেই ভুল নিজের ইচ্ছায় নয়, দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কথায় করেছিলাম।
বামফ্রন্ট অধ্যুষিত এলাকায় সকাল সকাল ভোট হচ্ছিল। হেরে যাওয়ার আশঙ্কায় ছুটে গিয়েছিলাম বনগাঁ হাইস্কুলে। আমিও প্রার্থী ছিলাম ওই নির্বাচনে। তবুও জেলার প্রিয় মন্ত্রীর নির্দেশে ছুটে গিয়েছিলাম সেখানে। নিজে ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের ভোট করিয়েছিলাম। সে দিন ভুল করেছিলাম। ক্ষমা চাইছি। ক্ষমা চাওয়া অপরাধ নয়।’’ নাম না নিলেও তৎকালীন জেলাসভাপতি এবং খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের নির্দেশে কথায় শঙ্কর বলেছেন বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি জ্যোতিপ্রিয়।
শঙ্কর আঢ্যর এই মন্তব্য সোশ্যাল মিডিয়া সহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ পাওয়ায় যথেষ্ট অস্বস্তিতে পরতে হয় তৃণমূল নেতৃত্বকে। তারই জেরে বৃহস্পতিবার বিকেলে দলের পক্ষ থেকে সাংবাদিক বৈঠক করা হয়। সেখানে পুরপ্রশাসক গোপাল শেঠের সঙ্গে কৃষ্ণা রায় সহ পুরসভার প্রাক্ত কাউন্সিলর এবং দলের একাধিক নেতৃত্ব উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে বনগাঁ সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সভাপতি সন্দীপ দেবনাথ দাবি করেন, ‘শঙ্কর আঢ্য নিজের ওয়ার্ড এবং নিজের স্ত্রী তাঁর ওয়ার্ডে কিভাবে জিতেছেন, তা বনগাঁর মানুষ জানেন। এতোদিন পর ব্যক্তিগত স্বার্থে ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কথা উল্লেখ করে দলের উচ্চ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলছেন।’
এদিনের সাংবাদিক বৈঠকে সন্দীপ দেবনাথ আরও অভিযোগ করে বলেন, ‘বনগাঁ পুরসভা এলাকায় এর আগের বিধানসভা নির্বাচনে যেখানে তৃণমূল ২০ হাজার ভোটে এগিয়েছিল, সেখানে এবারের বিধানসভা নির্বাচনে উল্টে হার হয়েছে। এরজন্য সম্পূর্ণ দায়ী শঙ্কর আঢ্য। মানুষ তাঁর আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে তৃণমূলের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। দলের উচ্চ নেতৃত্ব এব্যাপারে ওয়াকিবহাল হওয়ায় এখন শুদ্ধিকরণ চলছে। আর সেই কারণেই ওই মানুষটির বিরুদ্ধে দল ব্যবস্থা নিতে চলেছে।’ এদিনের সাংবাদিক বৈঠকে এমনই দাবি করেন সন্দীপ দেবনাথ।