দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ ‘অবৈধ অনুপ্রবেশ’ রুখতে জলপথে নজরদারি বাড়ানোর দাবি তুলে নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছিল বিজেপি। তার পরেই কার্যত বন্ধ করে দেওয়া হল নন্দীগ্রামের নিরাপত্তা। নন্দীগ্রামে ১৪৪ ধারা জারি হওয়ার পর থেকেই গোটা কেন্দ্র জুড়ে টহল দেওয়া শুরু করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী এবং রাজ্য পুলিশ। ১ এপ্রিল ভোট গ্রহণ ঘিরে যাতে কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি না হয়, তার জন্যেই বঙ্গ ভোটের অন্যতম ‘হটসিট’ নন্দীগ্রামে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বহু গুণে বাড়াল নির্বাচন কমিশন।
বুধবার নন্দীগ্রামের বিজেপি প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারীর নিরাপত্তাও বাড়িয়েছে কেন্দ্র। সূত্রের দাবি, ‘মহিলা বিক্ষোভ এড়াতেই’ শুভেন্দুর নিরাপত্তা বলয়ে নিয়োগ করা হয়েছে আরও ১৫ জন মহিলা সিআরপিএফ–কে। শুধু শুভেন্দু নন, নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে সংযুক্ত মোর্চার সিপিএম প্রার্থী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়েরও। বুধবার থেকে তাঁর জন্য চার জন নিরাপত্তা কর্মীর ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বাইরে থেকে যাতে কেউ ঢুকে এলাকায় গণ্ডগোল বাঁধাতে না পারেন, তার জন্য ইতিমধ্যেই নাকা চেকিং শুরু করে দিয়েছে পুলিশ এবং কেন্দ্রীয় বাহিনী। সূত্রের খবর, নন্দীগ্রামের ৫০ শতাংশ বুথে চলবে সিসিটিভি নজরদারি। শুধু তাই নয়, সংবেদনশীল বুথগুলিতে লাইভ ওয়েবকাস্টিং, সিসিটিভি, ভিডিওগ্রাফি এবং অবজার্ভার রেখে কড়া নজরদারিও চালানো হবে।
ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের ২০০ মিটার এবং ইভিএম গুলি যেখানে মজুত রাখা হয়েছে, সেই জায়গাগুলি বাদ দিয়ে নন্দীগ্রামের সর্বত্রই ১৪৪ ধারা জারি করেছে কমিশন। নামানো হয়েছে ২২ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী। নন্দীগ্রামের মোট ভোটার সংখ্যা ২ লক্ষ ৫৭ হাজার ৯৯৯। তার মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লক্ষ ৩৩ হাজার ২৫৭। মহিলা ভোটারের সংখ্যা ১ লক্ষ ২৩ হাজার ৮৯৮। পূর্ব মেদিনীপুরের নিরাপত্তা আরও আটোসাঁটো করতে হলদিয়ায় পাঠানো হয়েছে আইপিএস অফিসার প্রবীণ ত্রিপাঠীকে। নন্দীগ্রামে থাকবেন খগেন্দ্রনাথ ত্রিপাঠী। এ ছাড়াও নজিরবিহীন ভাবে সুন্দরবন অঞ্চলে ড্রোনের মাধ্যমে নজরদারি চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হল।
বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দফায় যে ৩০ কেন্দ্রে ভোট হবে, সেখানে ৫ হাজার ৫৩৫ বুথে ওয়েবকাস্টিংয়ের ব্যবস্থা থাকবে, যাতে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়ায় অনলাইন নজরদারি চালানো যায়। এ মধ্যে দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ৭৩২, পূর্ব মেদিনীপুরে ১ হাজার ৬১১, পশ্চিম মেদিনীপুরে ১ হাজার ৮০২ আর বাঁকুড়াতে ১ হাজার ৩৯০টি বুথে ওয়েবকাস্টিংয়ের ব্যস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়াও ৩ হাজার ৪৯টি বুথে থাকছে সিসিটিভি ক্যামেরা। মাইক্রো অবজার্ভার থাকবে ১ হাজার ৯১৫টি বুথে। ২৮৬টি বুথে ভিডিয়ো ক্যামেরায় নজরবন্দি করা হবে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া। ইতিমধ্যেই ৬৩২ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকছে ৩০ কেন্দ্রে। রাজ্যে এই মুহূর্তে ৮০০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী রয়েছে। আরও ২০০ কোম্পানি আসছে ৮ এপ্রিলের মধ্যে।
মোট বুথের সংখ্যা ১০ হাজার ২২০। এখনও পর্যন্ত মোট অভিযোগ জমা পড়েছে ১৩ হাজার ২০৭টি। তার মধ্যে ১১ হাজার ৯টি অভিযোগেই সত্যতা রয়েছে বলে জানিয়েছে কমিশন। সমস্ত অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দ্বিতীয় দফায় ৩০ কেন্দ্রে মোট ভোটারের সংখ্যা ৭৫ লক্ষ ৯৪ হাজার ৫৪৯। তার মধ্যে পুরুষ ভোটার ৩৮ লক্ষ ৮০ হাজার ৯৫৫। মহিলা ভোটারের সংখ্যা ৩৭ লক্ষ ১৩ হাজার ৫০৮। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটারের সংখ্যা ৮৬। বয়স্ক ভোটার যাঁদের বয়স ৮০-র ঊর্ধ্বে, এমন ভোটারের সংখ্যা ১ লক্ষ ১৮ হাজার ১১৬।
দ্বিতীয় দফায় মোট প্রার্থী ১৭১ জন। এর মধ্যে দক্ষিণ ২৪ পরগনায় প্রার্থীর সংখ্যা ১৯ জন। পূর্ব মেদিনীপুরে সবচেয়ে বেশি জন প্রার্থী রয়েছেন, ৫৮ জন। পশ্চিম মেদিনীপুরে ৪১ জন প্রার্থী রয়েছেন। বাঁকুড়ায় ৫৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এই ৩০ কেন্দ্রে ভোট পরিচালনা সঠিক ভাবে সম্পাদন করতে ২৩ জন জেনারেল অবজার্ভার, ৯ জন এক্সপেনডিচার অবজার্ভার এবং ৬ জন পুলিশ অফিসারকেও নিয়োগ করা হয়েছে।