ধ্বংস হয়ে গিয়েছে দুই চব্বিশ পরগনা: মুখ্যমন্ত্রী

0
1070

দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ আমপানের তাণ্ডব চলার মধ্যেই নবান্নের কন্ট্রোল রুমে বসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গভীর উদ্বেগের সঙ্গে জানালেন, এই ঘূর্ণিঝড় সর্বনাশ করে দিয়েছে।সারাদিনই নবান্নের কন্ট্রোল রুম থেকে ঝড়ের গতিপ্রকৃতিক খোঁজখবর রাখছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী জানান, পাথরপ্রতিমা, নামখানা, বাসন্তী, কুলতলি, বারুইপুর, সোনারপুর, ভাঙড় থেকে যা খবর এসেছে তা ভয়াবহ। খারাপ খবর উত্তর ২৪ পরগনা থেকেও। তবে ক্ষয়ক্ষতি কতটা হয়েছে, সেই সংক্রান্ত সবিস্তার তথ্য পেতে ৩-৪দিন লেগে যাবে বলে জানান তিনি। 

রাত সওয়া ন’টা নাগাদ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “সব সর্বনাশ হয়ে গিয়েছে। দুই চব্বিশ পরগনা পুরো ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। ভেঙে গিয়েছে সব নদীবাঁধ। কত ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে আন্দাজ করা যাচ্ছে না।”

আগামী কাল, বৃহস্পতিবার বিকেলে টাস্ক ফোর্সের বৈঠক ডেকেছেন মমতা। এদিন রাতে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত ১০-১২ জনের মৃত্যুর খবর এসেছে। তবে সঠিক সংখ্যা কত তা পরে জানানো হবে।

এই সময়ে রাজনীতি না করে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিতে পুরো পরিস্থিতিকে দেখার আবেদন জানিয়েছেন মমতা। তাঁর কথায়, “কেন্দ্রের সরকারের কাছে আমাদের আবেদন থাকবে এটাকে রাজনৈতিক ভাবে না দেখে মানবিকতার সঙ্গে দেখতে।” রামকৃষ্ণ মিশন-সহ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলির উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রীর আবেদন, মানুষের সাহায্যে তারা যেন এগিয়ে আসে।

নবান্নের অর্ধেকটা ভেঙে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিন তিনি বলেন, “এত বছর কলকাতায় আছি, এমন দুর্যোগ কখনও দেখিনি। মনে হচ্ছে স্বজন হারিয়েছি।” গত দু’দিন ধরেই সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে উপকূলবর্তী জেলাগুলিতে সাধারণ মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ করছিল এনডিআরএফ এবং রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা দল। প্রায় পাঁচ লক্ষ মানুষকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। মমতা এদিন বলেন, “এই কাজটা যদি আমরা গুরুত্ব দিয়ে না করতাম না জানি কত মানুষের মৃত্যু হত!” আশ্রয় শিবিরে যে সমস্ত মানুষ রয়েছেন, আগামী তিন-চারদিন সেখানেই থাকার পরামর্শ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

পুনর্বাসনের কাজ কী ভাবে করা হবে তা নিয়েও দুশ্চিন্তা ঝরে পড়েছে মুখ্যমন্ত্রীর কথায়। এদিন মমতা বলেন, “ভাবতেই পারছি না পুনর্বাসনের কাজটা কী ভাবে করব।” বহু বাড়ি, বিঘের পর বিঘে ধানক্ষেত, অসংখ্য বিদ্যুতের খুঁটি লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। নষ্ট হয়ে গিয়েছে বহু পুকুর। পর্যাপ্ত জল নেই।

এই প্রতিবেদন যখন লেখা হচ্ছে তখনও আমপানের লেজের ঝাপটা চলছে বাংলায়। এর মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে একটা বিষয় স্পষ্ট, তা হচ্ছে নজিরবিহীন ক্ষয়ক্ষতির মুখে দক্ষিণ বঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকা।

নন্দীগ্রাম ও রামনগর-সহ একাধিক এলাকায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলেও জানান মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘নন্দীগ্রাম, রামনগর প্রভৃতি এলাকায় বড় ক্ষতি। দঃ ও উত্তর ২৪ পরগণা প্রায় ধ্বংস ঝড়ের দাপটে। গাছ পড়ে মানুষ মারা গেছেন। মোট ক্ষতি এখনও গণনা করা যায়নি। অনেক জায়গায় বিদ্যুৎ নেই, জল নেই। পাথরপ্রতিমা, নামখানা, কাকদ্বীপ, কুলতলি, বারুইপুর, সোনারপুর সব জায়গায় ধ্বংসের ছবি। রাজারহাট, হাসনাবাদ, সন্দেশখালি, গোসাবা, হাবড়া সব জায়গাই বিপর্যস্ত।’’

এক নজরে:নবান্নের এই সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী কী কী বললেন, পড়ুন-

দক্ষিণবঙ্গ প্রায় ৯৯ শতাংশ শেষ হয়ে গিয়েছে: মমতা

• একটা ডিজাস্টার হয়েছে, আমরা শকড: মমতা

• আমরা খুবই স্তম্ভিত, খুব খারাপ লাগছে: মমতা

• পাথরপ্রতিমা, নামাখানা, বাসন্তী কুলতলি, বারুইপুর, সোনারপুর, ভাঙড় সব গিয়েছে: মমতা

• আফটার শক তো থাকেই, ফলে এখনই সব মিটছে না, চলবে এটা মাঝরাত পর্যন্ত: মমতা

• কেন্দ্রের কাছে আবেদন থাকবে, পলিটিক্যালি দেখবেন না, মানবিক ভাবে দেখুন: মমতা

• পাঁচ লক্ষ মানুষকে সরাতে পেরেছি: মমতা

• বিদ্যুৎ নেই, জল নেই, পুকুর, চাষের জমি সব শেষ: মমতা

• রামনগর, নন্দীগ্রামে ক্ষতি হয়েছে: মমতা

• ব্যারাকপুর, বসিরহাট, বারাসত, বনগাঁ মহকুমা পুরো গিয়েছে, পুরো সুন্দরবন, গঙ্গাসাগর— সব গিয়েছে। হাওড়ার অবস্থা খারাপ: মমতা

• ধ্বংসের হাত থেকে উন্নয়নের পথে আবার সবাইকে শামিল করে একসঙ্গে কাজ করব: মমতা

• দিঘাতে তেমন বেশি হিট করেনি, রাজারহাট, হাসনাবাদ, গোসাবা, সন্দেশখালি, বনগাঁ, বাগদা, হাবড়া— সব সব, চার দিকে সর্বনাশ হয়ে গিয়েছে: মমতা

• উই ক্যান ওভারকাম দ্য ডিজাস্টার, উইথ ইয়োর ব্লেসিংস অ্যান্ড উইথ ইওর সাপোর্ট: মমতা

• দক্ষিণ ও উত্তর ২৪ পরগনা ধ্বংস হয়ে গিয়েছে: মমতা

• আমাদের অফিসের অর্ধেক ভেঙে গিয়েছে: মমতা

• কয়েক হাজার টাকার ক্ষতি হয়ে গেল, লাখও ছাড়াতে পারে: মমতা

• কত যে বাড়ি, নদী বাঁধ ভেঙে গিয়েছে, খেত থেকে সব সর্বনাশ হয়ে গিয়েছে: মমতা

• সংখ্যাটা এখনই বলা যাবে না, ১০-১২ জনের মৃত্যুর খবর পেয়েছি: মমতা

• বনগাঁ-হাবড়ায় এখনও তাণ্ডব চলছে: মমতা

• নদীমাতৃক রাজ্য আমাদের, সব জায়গা জলে একাকার: মমতা

• ধ্বংসের মুখে দাঁড়িয়ে যাঁরা রিলিফ ক্যাম্পে রয়েছেন, তাঁদের আগে দেখা কর্তব্য: মমতা

•  গোটা ধ্বংসের চিত্র বুঝতে ১০-১২ দিন লেগে যাবে, এক দিনে কিচ্ছু হবে না: মমতা

Previous articleদানবের মতো তাণ্ডবলীলা চালাচ্ছে আমপান!ভাঙছে একের পর এক বাঁধ, ভেসে যাচ্ছে গ্রাম, গুঁড়িয়ে যাচ্ছে বাড়ি, বিপর্যস্ত বাংলা
Next articleআমপানের তান্ডবে বাগানের সব আম ধূলিসাৎ,লন্ড ভন্ড যশোর রোড

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here