দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় ফিরেছিলেন মোদী। ৩০ মে দ্বিতীয় বারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর শপথ নেন তিনি। দীর্ঘ এক বছর কেটে গিয়েছে তাঁর দ্বিতীয় দফার শাসনকালের। এই সময়ের মধ্যে দেশ কতটা এগিয়েছে, সরকার কী কী পদক্ষেপ করেছে, সঙ্কটময় পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েও কী ভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে ভারত তারই একটা সবিস্তার বর্ণনা দিয়ে দেশবাসীর উদ্দেশে চিঠি লিখলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
মোদী চিঠিতে লিখেছেন, গত বছরের এই দিন থেকেই ভারতীয় গণতন্ত্রের একটা সুবর্ণ অধ্যায় শুরু হয়ে গিয়েছে। দীর্ঘ কয়েক দশক পর ভারতকে একটা পূর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠতার সরকার উপহার দিয়েছে দেশবাসী। আর এ জন্য দেশের ১৩০ কোটি মানুষ এবং ভারতের গণতান্ত্রিক ভাবমূর্তির কাছে তিনি কৃতজ্ঞ। তিনি বলেন, “দেশ এই মুহূর্তে এক সঙ্কটময় পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে চলছে। স্বাভাবিক পরিস্থিতি থাকলে তিনি এই বর্ষপূর্তি উদ্যাপন করতেন। মানুষের মাঝে যেতেন। কিন্তু সেটা সম্ভব হচ্ছে না বলেই দেশবাসীর উদ্দেশে এই চিঠি।”
এক বছর পূর্তিতে চিঠি লিখে দেশবাসীকে নিজের মনের কথা জানালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এই এক বছরে দেশ কোন কোন ক্ষেত্রে উন্নতি করেছে সে কথা উল্লেখ করার সঙ্গে করোনা সংক্রমণের জেরে ভিন রাজ্যের শ্রমিক, হকার ও ছোট পেশায় যুক্ত ব্যক্তিদের যে কষ্টের মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে, সে কথাও উল্লেখ করেছেন মোদী।
চিঠিতে দেশবাসীর উদ্দেশে মোদী লেখেন, “এই সমস্যার মধ্যে একথা দাবি করা যাবে না, যে কেউ কষ্টের মধ্যে নেই। শ্রমিক, ছোট পেশায় যুক্ত ব্যক্তি, হকারদের এই সময় মারাত্মক কষ্টের মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে। কিন্তু আমাদের এটা নিশ্চিত করতে হবে যে সমস্যা আমরা আজ সহ্য করছি, তা যেন বিপর্যয়ে পরিণত না হয়।”
এই কষ্টের মধ্যে থাকা মানুষদের জন্য অনেক কিছু করার আছে বলেই জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, “আমাদের দেশ অনেক প্রতিকূলতা ও সমস্যার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। আমি দিন-রাত কাজ করছি। আমার মধ্যে কিছু খামতি থাকতে পারে, কিন্তু আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে কোনও খামতি নেই। তাই আমি আপনাদের বিশ্বাস করি। আপনাদের শক্তি ও ক্ষমতার উপর আমার নিজের থেকেও বেশি বিশ্বাস রয়েছে।”
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, “এই বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া মহামারী একটা সংকটের মুহূর্ত তো বটেই, কিন্তু আমাদের এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আমাদের মাথায় রাখতে হবে ১৩০ কোটি মানুষের ভবিষ্যৎ যেন কোনও ভাবেই অনিশ্চয়তার দিকে না যায়।”
করোনা সংক্রমণের ফলে দেশবাসীর মধ্যে থাকা একতাবোধ আরও বেশি বেরিয়ে এসেছে বলে উল্লেখ করেছেন মোদী। তিনি বলেন, “এই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পরেই আমরা দেশের মানুষের মধ্যে একতার পরিচয় পাচ্ছি। সেটা হাততালি দেওয়া হোক, কিংবা মোমবাতি জ্বালানো, সবাই এই কাজে এগিয়ে এসেছেন। করোনা যোদ্ধারা সামনে থেকে লড়ছেন। এক আত্মনির্ভর ভারত তৈরি হচ্ছে। যা ধীরে ধীরে শ্রেষ্ঠ ভারতে পরিণত হবে।”
গত বছর দ্বিতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় আসাকে ভারতীয় গণতন্ত্রের এক স্বর্ণালি অধ্যায় বলে উল্লেখ করেছেন মোদী। তিনি বলেন, “অন্য সময় হলে আমি আপনাদের মধ্যে থাকতাম। কিন্তু এখন সেটা সম্ভব নয়। তাই চিঠি লিখেই আপনাদের আশীর্বাদ চাইছি।”
গত ছ’বছরে কোন কোন ক্ষেত্রে দেশের উন্নতি হয়েছে সে কথাও তিনি এই চিঠিতে লিখেছেন। মোদী বলেন, এই সময়ের মধ্যে দুর্নীতি দূর হয়েছে। গরিব মানুষের জীবনযাত্রায় উন্নতি হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে এক নতুন ভারত তৈরি হয়েছে। এই প্রসঙ্গে ২০১৬ সালের সার্জিক্যাল স্ট্রাইক ও ২০১৯ সালে বালাকোটে বায়ুসেনার হামলার কথাও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, “২০১৯ সালে দেশের মানুষ শুধুমাত্র কোনও সরকারকে এগিয়ে চলার জন্য ভোট দেননি, তাঁরা ভোট দিয়েছিলেন একটা স্বপ্ন দেখে যে ভারত আরও সামনের দিকে এগিয়ে চলবে।”
এই সময়ের মধ্যে তাঁদের সরকারের উল্লেখযোগ্য তিনটি সিদ্ধান্তের কথাও জানিয়েছেন মোদী। প্রথম হল জম্মু-কাশ্মীরের উপর থেকে স্পেশ্যাল স্ট্যাটাস তুলে নেওয়া। চিঠিতেও মোদী লিখেছেন, এই সিদ্ধান্ত সেখানকার মানুষের উন্নতিতে আরও সাহায্য করবে। দ্বিতীয় সিদ্ধান্ত নাগরিকত্ব আইন নিয়ে আসা। মোদী বলেন, এই আইনের ফলে দেশের মানুষের মধ্যে একতার শক্তি আরও বাড়বে। তৃতীয় সিদ্ধান্ত হিসেবে অযোধ্যা মামলার রায় ঘোষণার কথা উল্লেখ করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, হিন্দু-মুসলিম একতা বজায় রেখে এত বছর ধরে চলে আসা সমস্যার সমাধান হয়েছে। এই রায় দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতীক।
শুধু তাই নয়, দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে তাঁর সরকার বেশ কয়েকটি প্রকল্পও চালু করেছে। তার মধ্যে রয়েছে রয়েছে প্রধানমন্ত্রী সম্মান নিধি, জল জীবন মিশন, কৃষক, কৃষি শ্রমিক, ছোট দোকানদার এবং অসংগঠিত ক্ষেত্রে শ্রমিকদের জন্য মাসিক পেনশন চালু করা হয়েছে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করেছেন মোদী।