দেশের সময়ওয়েবডেস্ক: দ্বিতীয় দফার লকডাউনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ৩ মে। রেড জোন এলাকাগুলিতে তার পরেও যে লকডাউন উঠবে না, তার ইঙ্গিত মিলেছিল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীদের সর্বশেষ বৈঠকেই। কিন্তু অরেঞ্জ এবং গ্রিন জোনগুলিতে কীভাবে বা কতটা শিথিল করা হবে লকডাউন, তা ঠিক করতে নতুন রেড, অরেঞ্জ ও গ্রিন জোনের তালিকা ঘোষণা করল কেন্দ্র।
এই মর্মে রাজ্যগুলিকে চিঠি পাঠানো হয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের তরফ থেকে। পাশাপাশি রেড, অরেঞ্জ ও গ্রিন জোনের নয়া তালিকা সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলিকেও পাঠানো হয়েছে।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব প্রীতি সুদানের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রতি সপ্তাহে সংক্রমণের হার, কতদিনে সংক্রমণের সংখ্যা দ্বিগুণ হচ্ছে, কতজন ব্যক্তি সংক্রমিতের সংস্পর্শে আসছেন, তা পর্যালোচনা করে এই তালিকা তৈরি করা হয়েছে। যা পাঠানো হয়েছে রাজ্যগুলির মুখ্যসচিবের কাছে।
কেন্দ্রের নির্দেশিকায় আগে বলা হয়েছিল, ২৮ দিনের মধ্যে নতুন করে কেউ কোভিড আক্রান্ত না হলে সেই এলাকাকে গ্রিন জোন হিসেবে ধরা হবে। তবে নতুন নির্দেশিকায় সেই সময়সীমা কমিয়ে ২১ দিন করা হয়েছে। অর্থাৎ ২১ দিনের মধ্যে নতুন আক্রান্তের সন্ধান না মিললে সেই জেলা গ্রিন জোন তালিকায় পড়বে। আক্রান্তের সংখ্যা কম হল সেই জেলা অরেঞ্জ জোনের আওতায় পড়বে। আর আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেশি হলে সেই জেলা পড়বে রেড জোনের আওতায়।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক যে তালিকা দিয়েছে, তাতে কলকাতা–সহ দেশের সব কটি মেট্রো সিটিই থাকছে রেড জোনের মধ্যে। কলকাতা ছাড়া তালিকায় রয়েছে দিল্লি, মুম্বই, চেন্নাই হায়দরাবাদ, বেঙ্গালুরু এবং আমেদাবাদ। তার মধ্যে ১০ বা তার বেশি রেড জোন রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ, দিল্লি, মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু ও উত্তরপ্রদেশে। তবে রাজ্য সরকারগুলি সরেজমিনে খতিয়ে দেখে নতুন কোনও জেলা রেড, অরেঞ্জ বা গ্রিন জোনে রাখতে পারে বলেও জানিয়েছে কেন্দ্র। প্রতি সপ্তাহে এই তালিকা খতিয়ে দেখা হবে বলেও কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের তরফে বলা হয়েছে।
কেন্দ্রের তালিকা অনুযায়ী দেশের ১৩০টি জেলা রয়েছে রেড জোনে। ২৮৪টি জেলা অরেঞ্জ এবং ৩১৯টি জেলা গ্রিন জোন তালিকাভুক্ত হয়েছে। বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখে এই তালিকা তৈরি হয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা এবং তা দ্বিগুণ হওয়ার সময়সীমা, টেস্টের অনুপাত, নজরদারির ব্যবস্থা–এই সব বিষয় মাথায় রেখে রেড জোন বা অরেঞ্জ জোনের তালিকা তৈরি হয়েছে।
দিল্লির ১১টি জেলাকেই রেড জোন হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। অর্থাৎ এখানকার সব জেলাতেই করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রয়েছে এবং ৩ মে–র পরেও সর্বত্র চূড়ান্ত নজরদারি থাকবে।
জেলার সংখ্যা ধরলে দেশের মধ্যে উত্তরপ্রদেশে রয়েছে সবচেয়ে বেশি রেড জোন। যোগীর রাজ্যে ৭৫টির মধ্যে ১৯টি রেড জোন জেলা, ৩৬টি অরেঞ্জ জোন এবং ২০টি গ্রিন জোন তালিকাভুক্ত।
মহারাষ্ট্রে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজারেরও বেশি। এই রাজ্যে ১৪টি রেড জোন জেলা। অরেঞ্জ তালিকায় ১৬টি এবং গ্রিন জোনে রয়েছে ৬টি জেলা। তামিলনাড়ুর ১২টি জেলা রেড জোনের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এ ছাড়া গুজরাট ও মধ্যপ্রদেশে ৯টি করে এবং মধ্যপ্রদেশে ৮টি রেড জোন জেলা রয়েছে। অরেঞ্জ তালিকায় রয়েছে বিহারের ২০টি, তামিলনাড়ুতে ২৪, রাজস্থানে ১৯, পাঞ্জাবে ১৫টি এবং মধ্যপ্রদেশের ১৬টি জেলা। গ্রিন জোন সবচেয়ে বেশি উত্তর–পূর্বের রাজ্য অসমে (৩০) টি। আবার উত্তর–পূর্বেরই আর এক রাজ্য সিকিমের চারটির সবক’টি জেলাই গ্রিন জোন তালিকাভুক্ত হয়েছে। অর্থাৎ সিকিমে কোনও করোনা আক্রান্ত রোগী নেই। ছত্তীশগড়ে ২৫, অরুণাচল প্রদেশে ২৫, মধ্যপ্রদেশে ২৪, ওডিশায় ২১, উত্তরপ্রদেশে ২০ এবং উত্তরাখণ্ডে ১০টি জেলা গ্রিন জোন রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের ২৩টি জেলার মধ্যে ১০টি রয়েছে রেড জোনের তালিকায়। ৫টি জেলা অরেঞ্জ এবং ৮টি জেলায় কোনও সংক্রমণ নেই, অর্থাৎ গ্রিন জোন।
পশ্চিমবঙ্গের জেলাগুলির মধ্যে রেড জোন রয়েছে দার্জিলিং, কালিম্পং, জলপাইগুড়ি, মালদা, উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর, হাওড়া ও কলকাতা। অরেঞ্জ জোনে রয়েছে মুর্শিদাবাদ, পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিম বর্ধমান, নদিয়া ও হুগলি। আর গ্রিন জোনে রয়েছে আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার, উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর, বীরভূম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া ও ঝাড়গ্রাম।