দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ এমন যে হতে পারে সে আশঙ্কা ছিলই। যে কারণে আতসবাজি বিক্রি কেনার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল। কিন্তু, সেই নিষেধাজ্ঞাকে ফুত্কারে উড়িয়ে শনিবার, দীপাবলির রাতে একশ্রেণির মানুষ নিয়মভাঙার খেলায় মেতে উঠেছিলেন। প্রতিবারের মতো তীব্র আকারে আতসবাজির চমকানি ঝলকানি না-থাকলেও দিওয়ালির রাতে দিল্লিকে সম্পূর্ণ বাজি-মুক্ত করা যায়নি।
গুটিপয় কিছু মানুষের নিয়মভাঙার মাশুল দিতে হবে রাজধানীবাসীকে। আশঙ্কা মতোই আলোর উত্সবের পর রাজধানীর বাতাসে বিষের মাত্রা ‘গুরুতর’ পর্যায়ে পড়ল! রবিবার ভোর থেকেই দিল্লির আকাশ ঢেকেছে ঘন ধোঁয়ায়। দীপাপলির পরদিন দিল্লির বাতাসে তীব্র দূষণ ব্যতিক্রমী ঘটনা নয়। প্রতিবারই ঘটে। কিন্তু, করোনা সংকটের প্রেক্ষিতে রাজধানীবাসীর কাছে অনুরোধ করা হয়েছিল। শুধু আর্জিতে কাজ হবে না জেনে নিষেধাজ্ঞাও জারি হয়। তার পরেও একটা শ্রেণির মানুষের জন্য দিল্লির বাতাসকে বিষমুক্ত রাখতে ব্যর্থ কেজরি সরকার।
শনিবার রাতের পর থেকে দিল্লিতে এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স ছিল ৪১৪। এই এয়ার কোয়ালিটি সিভিয়ার ক্যাটেগরিতে পড়ে। শুক্রবার এই এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স ছিল ৩৩৯। অর্থাত্ একদিনে তা অনেকটাই বেড়েছে। অন্য দিকে বৃহস্পতিবার তা ছিল ৩১৪।
আবহাওয়াবিদদের বক্তব্য উল্লেখ করে সংবাদ সংস্থা জানাচ্ছে, এই দূষণের ৩২% খড়কুটো পোড়ানোর ফলে হয়েছে। শনিবার রাতের পর দিল্লির সব জায়গাতেই পিএম ২.৫-এর মাত্রা ৪০০-র বেশি ছিল। কোথাও তা ৫০০-র কাছেও পৌঁছে যায়। এই পিএম ২.৫-এর মাত্রা ৬০-এর উপর হয়ে গেলেই তা সাধারণ মানুষের জন্য খারাপ। দিল্লির একাধিক এলাকার বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন, তাঁদের চোখে জ্বালা, গলায় ব্যথা ও শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যা হচ্ছে।
দিল্লি দূষণ নিয়ন্ত্রণ কমিটি-র তথ্য অনুযায়ী, রবিবার ভোর থেকে দিল্লি-এনসিআর অঞ্চলে বাতাসের গুণগত মান ‘সিভিয়ার’ ক্যাটেগরিতে পৌঁছেছে। এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স অনুযায়ী, দূষণকারী পিএম ২.৫ এর মাত্রা আনন্দ বিহারে ৪৮১, ইন্দিরা গান্ধী বিমানবন্দর অঞ্চলে ৪৫৭, আইটিও’তে ৪৫৭ এবং লোধি রোডে তা পৌঁছয় ৪১৪-য়। এই মাত্রাগুলি দূষণের ‘সিভিয়ার’ ক্যাটেগরিতে পড়ে।
আবহাওয়াবিদদের কথা অনুযায়ী, শীতকালে এমনিতেই হাওয়া স্থির হয়। তার ফলে বাতাসে ধূলিকণার পরিমাণ এমনিতেই বেশি থাকে। তার মধ্যে বাজি পোড়ানোর ফলে দূষণ আরও বেড়েছে। এই দূষণের জেরে করোনায় ভোগান্তি আরও বাড়বে বলে আগেই সতর্ক করেছিলেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
জানা গিয়েছে, রাত ১টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত সবথেকে বেশি দূষণ দেখা যাচ্ছে দিল্লিতে। গত বছর দীপাবলির দিনে দিল্লির এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স ছিল ৩৩৭। তার পরের দু’দিনে তা বেড়ে হয় ৩৬৮ ও ৪০০। অর্থাত্ এ বছর আরও বেড়েছে দূষণের মাত্রা।
তবে, মৌসম ভবন আশ্বস্ত করছে, দিল্লিতে কিছু দিনের মধ্যেই পশ্চিমী ঝঞ্ঝা আসার কথা। এই পশ্চিমী ঝঞ্ঝা এলে বাতাসের গতিবেগ বাড়তে পারে। ফলে এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স আগের থেকে ভালো হওয়ার আশা রয়েছে।
এয়ার কোয়ালিটি ইনডেস্ক বা একিউআই শূন্য থেকে ৫০ এর মধ্যে থাকলে তাকে নিরাপদ মাত্রা বলে ধরা হয়। ৫১ থেকে ১০০-র মধ্যে ইনডেক্স হল ‘সন্তোষজনক’। ১০১ থেকে ২০০ পর্যন্ত হল ‘সহনীয়’, ২০১ থেকে ৩০০ ইনডেক্সকে ‘খারাপ’, ৩০১ থেকে ৪০০ কে ‘অতি খারাপ’ এবং ৪০১ থেকে ৫০০ পর্যন্তকে ‘সিভিয়ার’ বলে ধরা হয়। ৫০০-র ঊর্ধ্বে পৌঁছে গেলে তা ইমার্জেন্সি ক্যাটেগরিতে পৌঁছে যায়।
শনিবার রাতের দিকে সদর বাজার এলাকায় দূষণের মাত্রা কিছুটা কমাতে জল ছিটোয় উত্তর দিল্লি পুরসভা।মেয়র জয়প্রকাশ অভিযোগ করেন, দিল্লি সরকার তাদের দায়িত্ব পালন না করায় তাঁরাই উদ্যোগী হয়েছেন এব্যাপারে। ৯ তারিখ থেকে দিল্লি এবং সংলগ্ন অঞ্চলে আতশবাজি বিক্রি এবং পোড়ানোয় নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছিল। যা জারি থাকবে আগামী ৩০ তারিখ পর্যন্ত। কিন্তু দিল্লি পুলিশ এবং দিল্লি সরকারের ঢিলেঢালা নজরদারির ফলে নিষেধাজ্ঞাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বাজি ফাটল রাতভর।