দেশের সময় , বনগাঁ: দীর্ঘদিনের সম্পর্ক। এক সাথে খাওয়া-দাওয়া, ওঠাবসা, রাত কাটানো। সম্পর্কের রঙ গাঢ় হয়েছিল অনেকটাই। এমনকি ঘরেই প্রেমিকার সিঁথিতে সিঁদুরও পরিয়ে দিয়েছিলেন প্রেমিক। কিন্তু হঠাৎ করে তাঁর মনে হতে থাকে, প্রেমিকা ‘বুড়ি বুড়ি দেখতে…’ তারপর আচমকাই যোগাযোগ বন্ধ করে দিতে শুরু করে প্রেমিক। অনেক চেষ্টা করেও প্রেমিকের কাছে ‘সুন্দর’ হয়ে উঠতে পারেননি প্রেমিকা। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিয়ো পোস্ট করেই চরম সিদ্ধান্ত নিলেন বছর পঁচিশের তরুণী। গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মঘাতী প্রেমিকা। চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে বনগাঁর ছয়ঘরিয়া এলাকায়। আত্মঘাতী ছাত্রীর নাম রিয়া দাস।
পরিবারের সদস্যরা জানাচ্ছেন, কয়েক বছর আগে এলাকারই যুবক সুরাজ বিশ্বাসের সঙ্গে সম্পর্ক হয় রিয়ার। প্রথমে বন্ধুত্ব। তারপর সম্পর্কের রঙ গাঢ় হতে থাকে। সুরাজ রিয়াকে প্রেমের প্রস্তাব দেন। তাতে রাজি হয়ে যান রিয়া। ধীরে ধীরে তাঁদের সম্পর্ক গাঢ় হতে থাকে। রিয়ার সঙ্গে সুরাজ একাধিক রাত কাটান বলেও পরিবারের দাবি। নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে একটি পোস্ট করেও তাঁদের সম্পর্কের নানান কথা জানিয়ে গিয়েছেন রিয়া।
পরিবারের অভিযোগ, আচমকাই রিয়া জানতে পারেন, সুরাজের আরও একটি মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে। সুরাজ রিয়াকে বলতে থাকেন, তাঁকে ‘বুড়ি বুড়ি দেখতে’, তাই তাঁর পরিবারের আপত্তি রয়েছে। মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন রিয়া। সুরাজকে একাধিকবার বোঝানোর চেষ্টা করেন তিনি।
রিয়ার পরিবারের দাবি, এরই মধ্যে রিয়াকে একবার সিঁদুর পরিয়ে দিয়েছিলেন সুরাজ। মনে মনে সুরাজকেই স্বামী হিসাবে মানতে শুরু করেছিলেন রিয়া। কিন্তু সুরাজ তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে চাইছিলেন না। নানা অছিলায় তাঁর সঙ্গে দূরত্ব বাড়াচ্ছিলেন সুরাজ। রিয়ার পরিবারের সদস্যরাও একাধিকবার সুরাজকে বোঝানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু কিছুতেই বিয়ে করতে রাজি হচ্ছিলেন না তিনি।
শেষ ১১ মাস ধরে সম্পর্কের টানাপোড়েনে বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছিলেন রিয়া। রবিবার রাতে খাবার পর নিজের ঘরে শুতে চলে গিয়েছিলেন। পরিবারের সদস্যরা জানাচ্ছেন, হঠাৎ একটা আওয়াজ পাওয়ায় তাঁরা উঁকি দিয়ে দেখেন, গলায় ওড়নায় ফাঁস লাগিয়ে ঝুলছেন রিয়া। সামনেই পড়েছিল রিয়ার মোবাইল। মোবাইলের ভিডিয়োটা তখনও চলছিল। ভিডিয়োতে ধরা ছিল গোটা দৃশ্য়। হাসতে হাসতে কীভাবে গলায় ফাঁস লাগিয়েছেন রিয়া, শিউরে উঠেছেন প্রতিবেশীরা৷
রিয়াকে দ্রুত উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। এরপরই ক্ষোভে ফেটে পড়েন রিয়ার পরিবারের সদস্যরা। বনগাঁ থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। সুরাজের বাড়ির সামনেও বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন তাঁরা। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।