![](https://deshersamay.com/wp-content/uploads/2021/05/DS-AD01-1024x853.jpeg)
দেশের সময় ওয়েব ভেস্কঃ শক্তি বাড়িয়ে বাংলার দিকে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। পূর্ব মধ্য বঙ্গোপসাগর ও উত্তর আন্দামান সাগরে ঘনীভূত গভীর নিম্নচাপ আজ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হল। আগামী ২৪ ঘণ্টায় শক্তি বাড়িতে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে ইয়াস এরপর উত্তর উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে বুধবার সকালে উত্তর ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে পৌঁছবে অতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়। ওই দিন দুপুরেই পারাদ্বীপ ও সাগরদ্বীপের মাঝে আছড়ে পড়তে পারে ইয়াস।
![](https://deshersamay.com/wp-content/uploads/2021/05/triveni-vapour-pic-01-1024x853.jpg)
সোমবার মৌসম ভবনের সন্ধ্যা সাড়ে ৮টার বুলেটিন অনুযায়ী, গত ৬ ঘণ্টা ধরে ঘণ্টায় ১২ কিলোমিটার গতিবেগে এগোচ্ছে ইয়াস। এই মুহূর্তে দিঘা থেকে ৫৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে এই ঘূর্ণিঝড়। গতিবেগ বাড়লেও গতিপথ একই রয়েছে ইয়াস-এর। অর্থাৎ বুধবার দুপুরে অতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় রূপে ওড়িশার পারাদ্বীপ ও পশ্চিমবঙ্গের দিঘার মধ্যবর্তী জায়গা ওড়িশার বালেশ্বরের কাছ দিয়েই ইয়াস অতিক্রম করবে বলে পূর্বাভাস।
![](https://deshersamay.com/wp-content/uploads/2021/05/DS-AD-03.jpg)
বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া ঘূর্ণিঝড় এই মুহূর্তে ১৭ ডিগ্রি ১ মিনিট উত্তর অক্ষাংশ ও ৮৯ ডিগ্রি ৩ মিনিট পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থান করছে। এই মুহূর্তে আন্দামানের পোর্ট ব্লেয়ার থেকে ৭১০ কিলোমিটার উত্তর উত্তর-পশ্চিম, ওড়িশার পারাদ্বীপ থেকে ৪৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ দক্ষিণ-পূর্ব, ওড়িশার বালেশ্বর থেকে ৫৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ দক্ষিণ-পূর্ব ও পশ্চিমবঙ্গের দিঘা থেকে ৫৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থান করছে ইয়াস।
মঙ্গলবার ইয়াস শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে বলেই জানিয়েছে মৌসম ভবন। তার পর আরও উত্তর উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে বুধবার সকালের মধ্যে অতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় রূপে পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশার স্থলভাগের কাছে পৌঁছনোর কথা ইয়াস-এর। বুধবার দুপুরে অতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় রূপে ইয়াস ওড়িশার বালেশ্বরের কাছ দিয়ে অতিক্রম করবে বলেই পূর্বাভাস। তার পর ঘূর্ণিঝড় চলে যাবে ঝাড়খণ্ডের দিকে।
![](https://deshersamay.com/wp-content/uploads/2021/05/DS-AD-04-scaled.jpg)
ইয়াস-এর প্রভাবে সোমবার থেকেই দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলায় শুরু হয়েছে বৃষ্টি। সঙ্গে বইছে হওয়া। ঘূর্ণিঝড় যত স্থলভাগের দিকে এগোবে তত ঝড়ের গতিবেগ বাড়বে বলেই জানিয়েছে আবহাওয়া দফতর। মঙ্গলবার থেকেই রাজ্যের উপকূলবর্তী জেলাগুলি অর্থাৎ পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর, উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, কলকাতা, হাওড়া, হুগলিতে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে মৌসম ভবন।
ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ আছড়ে পড়ার আগেই পূর্ব মেদিনীপুর জেলার দিঘা এবং তার সংলগ্ন এলাকায় দ্রুত আবহাওয়ার অবনতি হচ্ছে। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ভারী বৃষ্টি। সঙ্গে বাড়ছে ঝোড়ো হাওয়ার দাপট। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে আচমকাই পরিকল্পনা বদল করল জেলা প্রশাসন। মঙ্গলবার সকালের পরিবর্তে সোমবার রাতেই সমুদ্র উপকূলবর্তী গ্রামগুলিকে খালি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে স্থানীয় প্রশাসনকে।
সোমবার বিকেলে হাওয়া অফিস জানিয়ে দিয়েছে, বুধবার দুপুরের মধ্যে দিঘা-পারাদ্বীপের মাঝখানে ওড়িশার বালেশ্বরে আছড়ে পড়বে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস।
![](https://deshersamay.com/wp-content/uploads/2021/05/DS-AD-12X10-scaled.jpg)
কতটা শক্তিশালী হবে ইয়াস?
তার কী ভয়াবহতা হতে পারে এদিন নবান্নের সাংবাদিক বৈঠকে সে ব্যাপারেই রাজ্যবাসীকে সতর্ক করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেইসঙ্গে রাজ্য সরকার ইয়াস মোকাবিলায় কী কী পদক্ষেপ করেছে, ঝড় হয়ে যাওয়ার পর যে অভিঘাত তৈরি হবে তার জন্যই বা রাজ্য সরকারের কী পরিকল্পনা তাও এদিন বিশদে ব্যাখ্যা করেন মুখ্যমন্ত্রী।
এদিন মমতা বলেন, “একটা সিভিয়ার সাইক্লোনের আশঙ্কা করা হচ্ছে। ৭২ ঘণ্টা এটা চলার সম্ভাবনা রয়েছে। আমাদের রাজ্যের ২০টি জেলায় এর ব্যাপক প্রভাব পড়বে। এটা আমফানের থেকেও বড় হতে চলেছে।” প্রসঙ্গত আমফানের প্রভাব পড়েছিল উপকূলবর্তী বাংলার তিন জেলা ও দক্ষিণ বঙ্গে। নদিয়ার পর থেকে তেমন বড় কোনও প্রভাব দেখা যায়নি। কিন্তু বাংলার ২০টি জেলায় যদি ইয়াস তাণ্ডব চালায় তাহলে বুঝতে হবে কতটা বিধ্বংসী হতে চলেছে। সেক্ষেত্রে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিরও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
মোট ১০ লক্ষ মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে বলে জানিয়েছেন মমতা। ইতিমধ্যেই সেই কাজ যলছে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় শুরু হয়ে গিয়েছে। ইয়াস মোকাবিলার জন্য ৫১টি বিপর্যয় মোকাবিলা দল গড়েছে রাজ্য সরকার। তারা ইতিমধ্যেই উপকূলবর্তী এলাকা সহ জেলাগুলিতে পৌঁছে গিয়েছে।
মোট ৪০০ সাইক্লোন শেল্টারে মানুষকে আশ্রয় দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। কোভিডের সময়ে সেওসব শেল্টারগুলিতে যাতে দূরত্ব বিধি বজায় থাকে তা নিশ্চিত করার বিষয়েও এদিন জেলা প্রশাসনগুলির উদ্দেশে নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী।
আমফানের পর দেখা গিয়েছিল শহর কলকাতা কার্যত লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছে। গাছ পড়ে, বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে সে বীভৎস চেহারার স্মৃতি এখনও টাটকা। পানীয় জলের সঙ্কট, বিদ্যুৎহীন হয়ে চূড়ান্ত দুর্ভোগের মধ্যে পড়তে হয়েছিল মানুষকে। জেলাগুলির পরিস্থিতি ছিল আরও ভয়ঙ্কর। কোথাও কোথাও ১০-১২ দিন বিদ্যুৎ সংযোগ ছিল না। সে সময় কলকাতা থেকে শহরতলিতে গণ বিক্ষোভ দাবানলের মতো ছড়িয়ে ফেলেছিল। হতে পারে সে কথা মনে করেই এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, “বিপর্যয়ের ৪৮ ঘন্টার মধ্যেই সব কিছু আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়া কারও পক্ষেই সম্ভব নয়। সবাইকে অনুরোধ করবো একটু ধৈর্য্য ধরবেন।”
মুখ্যমন্ত্রী এদিন ঝড় পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য সামাজিক সংগঠন, ক্লাব, এনজিও, পুজো কমিটিগুলিকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। মমতা আরও জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হলে তা পুনর্বহালের জন্য ১০০০টি দল, টেলিকম পুনর্বহালের জন্য ৪৫০ টি দল তৈরি রাখা হয়েছে।
আমফানের রাতেও নবান্নের কন্ট্রোল রুমে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন তিনি জানিয়েছেন, বুধবার রাতেও নবান্নেই থাকবেন। পরিস্থিতি বুঝলে সারা রাতই সেখানে কাটাতে পারেন তিনি।
![](https://deshersamay.com/wp-content/uploads/2021/05/CAR-BAZAR-1024x512.jpg)
আলিপুর আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানা যাচ্ছে, বুধবার ঘণ্টায় ১৫৫-১৬৫ কিমি বেগে আছড়ে পড়তে পারে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। সর্বোচ্চ বেগ হতে পারে ঘণ্টায় ১৮৫ কিমি। মঙ্গলবার ইয়াসের গতিবেগ থাকতে পারে ঘণ্টায় ১০০-১১০ কিমি। সর্বোচ্চ বেগ হতে পারে ঘণ্টায় ১২০ কিমি। ওই দিন অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার পর ইয়াসের গতিবেগ থাকতে পারে ঘণ্টায় ১৩৫-১৪৫ কিমি। সর্বোচ্চ বেগ হতে পারে ১৬০ কিমি। আবহবিদদের মতে, গত বছরের ঘূর্ণিঝড় আমফানের থেকে দাপট কম হবে ইয়াসের।
ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের জেরে রাজ্যজুড়ে বৃষ্টি চলবে। আজ কোথাও কোথাও বৃষ্টি হতে পারে। মঙ্গলবার দুই মেদিনীপুর, দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলিতে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। পরের দিন, অর্থাৎ বুধবার ঝাড়গ্রাম, দুই মেদিনীপুর, দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি, কলকাতায় অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস জারি করা হয়েছে। ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টি হতে পারে নদিয়া, দুই বর্ধমান, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ, মালদা, দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায়। বৃহস্পতিবার ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে মালদা, দার্জিলিং, দুই দিনাজপুর, কালিম্পং, জলপাইগুড়ি জেলায়।
![](https://deshersamay.com/wp-content/uploads/2021/05/arka-music-house-add-1024x341.jpg)
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উত্তাল হবে সমুদ্র। মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
![](https://deshersamay.com/wp-content/uploads/2021/05/NEW-AD-1024x853-1.jpg)
ঘূর্ণিঝড়ের নাম কে রাখল? নামের মানে কী?
জানা যাচ্ছে, এই ঘূর্ণিঝড়ের নাম রেখেছে ওমান। এই ঝড়ের নাম ইয়াস। যার মানে হল দু:খ। পারসি ভাষা থেকে এই শব্দটি এসেছে। ভারত, বাংলাদেশ, মায়ানমার, ওমান, পাকিস্তান, কাতার, সৌদি আরব, শ্রীলঙ্কা-সহ ১৩টি দেশ নিয়ে গঠিত কমিটি এই নাম ঠিক করেছে। আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী, যে মহাসাগরে ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়, তার অববাহিকায় থাকা দেশগুলি নামকরণ করে। পৃথিবীতে মোট ১১টি সংস্থা ঝড়ের নাম ঠিক করে। ওয়ার্ল্ড মেটেরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশন ও ইউনাইটেড নেশনস ইকোনমিত অ্যান্ড সোশ্যাল কমিশন ফর এশিয়ার সদস্য দেশগুলি ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ শুরু করে। যশের পর আরও যে ঘূর্ণিঝড়ের নাম ঠিক করা হয়েছে, সেগুলি হল গুলাব, সাহিন, জাওয়াদ, অশনি, সীতরাং, মানদৌস, মোচা।
![](https://deshersamay.com/wp-content/uploads/2021/05/DR-1024x853.jpg)