দার্জিলিঙে মৃতদের পরিবার পিছু ৫ লক্ষ টাকা এবং একজনের হোমগার্ডের চাকরি ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রী মমতার

0
4

প্রায় ১২ ঘণ্টার টানা বৃষ্টিতে  বিপর্যস্ত উত্তরবঙ্গের পাহাড় ।উত্তরবঙ্গের দুর্যোগে এখনও অবধি বাংলার ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর দাবি, এই প্লাবন পরিকল্পিত, ‘ম্যান মেড’। সিকিম, ভুটান থেকে জল এসেছে। সেই জলে ভেসেছে উত্তরবঙ্গ। সোমবার উত্তরবঙ্গের উদ্দেশে রওনা হওয়ার আগে কলকাতা বিমানবন্দর থেকে মমতা এ কথা জানিয়েছেন। উত্তরবঙ্গের পরিস্থিতিতে তিনি ‘ম্যান মেড বন্যা’ বলেও উল্লেখ করেছেন।ডিভিসি ইচ্ছে করে জল ছেড়ে বন্যা করে দিয়েছে। ঠিক করে ড্রেজিং হলে এমনটা হত না।

এ দিন মৃতদের পরিবারকে ৫ লক্ষ টাকা করে আর্থিক সহযোগিতা ও প্রতি পরিবারের একজনকে হোমগার্ডের চাকরি দেওয়ার কথাও ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী। সোমবার উত্তরবঙ্গে যাওয়ার আগে মুখ্যমন্ত্রী জানান, একে তো ভারী বৃষ্টি। তার উপরে সিকিম, ভুটান থেকে জল এসেছে। তাতেই দার্জিলিং, মিরিক, কালিম্পং, নাগরাকাটার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত। একই সঙ্গে জানান, পাহাড়ে বেড়াতে যাওয়া পর্যটকদেরও উদ্ধার করা হয়েছে। ধসে কোথাও ঘরবাড়ি, কোথাও সেতু ভেঙে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাটও। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে আজ অর্থাৎ সোমবার উত্তরবঙ্গে রওনা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, শনিবার থেকে উত্তিরবঙ্গের দিকে নজর রাখছি। ভুটান অসম থেকে জল ঢুকছে। ভুটানের জলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত নাগরাকাটা, মিরিক। এখনও যাঁরা সেখানে আতকে আছেন তাঁদের ফিরিয়ে আনতে ৪৫টি ভলভো বাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাঁদের ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব আমাদের।

মমতা জানান, রবিবার নবান্নে পরিস্থিতি পর্যালোচনার পরই রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসকে আগেই ধূপগুড়িতে পাঠানো হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী নিজে সোমবার সকালে পৌঁছে প্রথমে যাবেন হাসিমারা, তারপর নাগরকাটা। যতদূর যাওয়া সম্ভব, ততদূর গিয়ে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি। সঙ্গে থাকছেন রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ। মঙ্গলবার মমতা পৌঁছাবেন মিরিকে, যেখানে দার্জিলিংয়ের এই বিপর্যয়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি ঘটেছে। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, সেখানকার দুর্গতদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলবেন তিনি।

রাজ্য সরকারের প্রাথমিক হিসাবে, এখনও পর্যন্ত ২৩ জনের মৃত্যুর খবর এসেছে। তার মধ্যে ১৮ জন মিরিক ও কালিম্পঙে, এবং নাগরাকাটায় আরও পাঁচ জন প্রাণ হারিয়েছেন। নিহতদের পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “টাকা কখনও জীবনের বিকল্প হতে পারে না। এটা আমাদের মানবিক কর্তব্য। মৃতদের পরিবারকে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে ৫ লক্ষ টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। পাশাপাশি, পরিবারের একজনকে স্পেশ্যাল হোমগার্ড হিসেবে চাকরি দেওয়া হবে, যাতে তাঁদের কাউকে অন্যের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে না হয়।”

মুখ্যমন্ত্রী আরও জানান, প্রশাসনের সব স্তরে ত্রাণ ও উদ্ধার কাজ জোরকদমে চলছে। রাস্তা, যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং বিদ্যুৎ সংযোগ যত দ্রুত সম্ভব স্বাভাবিক করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

নবান্নের কন্ট্রোল রুমে রবিবার সকালে মুখ্যমন্ত্রী উত্তরবঙ্গের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে পর্যালোচনা করেন। তিনি ভার্চুয়াল মাধ্যমে উত্তরবঙ্গের পাঁচটি জেলার জেলাশাসকদের সঙ্গে বৈঠক করেন।

সোমবার কলকাতা বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানান, উত্তরবঙ্গে বন্যা হয়েছে ভূটান ও সিকিম থেকে আসা জলের জন্য। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মাত্র ১২ ঘণ্টায় প্রায় ৩০০ মিলিমিটার প্রবল বৃষ্টি। তিনি একে ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি মানুষের সৃষ্টি বন্যা’ বলেও উল্লেখ করেন। তাঁর কথায়, ‘‘এত জল কোথায় যাবে? আমরা বিহার, উত্তরপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ডের জলও সহ্য করি। কিন্তু আর কতটা সামলানো সম্ভব?’’

পর্যটকদের নিরাপত্তার বিষয়েও মুখ্যমন্ত্রী আশ্বাস দেন। তিনি জানান, পাহাড়ে যাঁরা আটকে পড়েছিলেন, তাঁদের নিরাপদে নিচে নামিয়ে আনার কাজ চলছে। ইতিমধ্যেই ৪৫টি ভলভো বাস এবং উত্তরবঙ্গ রাজ্য পরিবহণ দফতরের আরও কিছু বাস পাঠানো হয়েছে। প্রায় ২৫০ জনের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে শিলিগুড়িতে।

এছাড়া, এখনও যারা বিভিন্ন জায়গায় আটকে রয়েছেন, তাদের যাতে হোটেলগুলো অতিরিক্ত টাকা না নেয়, সেই নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘‘অনেকের টাকা-পয়সা, নথিপত্র জলে ভেসে গেছে। আমাদের মানবিক হতে হবে। পর্যটকদের নিরাপত্তার দায়িত্ব আমাদের।’’

তিনি আরও জানান, মিরিক ও নাগরাকাটায় ইতিমধ্যেই কমিউনিটি কিচেন চালু করে দেওয়া হয়েছে, যাতে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের খাবারের সমস্যা না হয়।

Previous articleবিপর্যস্ত উত্তরবঙ্গে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী , কেমন থাকবে কলকাতা- সহ উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের আবহাওয়া?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here