দেশের সময়:–লোকসভার ভোটের ফলে পরিষ্কার এ রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের রাশ আলগা হয়ে গেছে।গেটা উত্তরবঙ্গ ও জঙ্গলমহল এবং পাহাড় থেকে কার্যত নিশ্চিহ্ন রাজ্যের শাসক দল।ভোটের শতাংশের হিসেবেও ঘাড়ের কাছে নিশ্বাস ফেলছে বিজেপি।
এখন তাই এ রাজ্যের শাসক দলের সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে সামনে আসছে তাঁর দলকে ধরে রাখার বিষয়টাই।সূত্রের খবর তৃণমূলে বড়সড় ধস নামতে চলেছে।ভোটের আগেই ইঙ্গিত ছিল তৃণমূলের অন্দরে ভাঙনের চোরা স্রোত চলছে।সেই স্রোত এবার প্রবল হওয়ার ইঙ্গিত মিলতে শুরু করেছে।ভোটের ফালাফল প্রকাশিত হওয়ার পর ২৪- ৩০ ঘন্টা কেটে গেলেও সাংবাদিকদের মুখোমুখি হননি মুখ্যমন্ত্রী,তিনি ঘরবন্দি হয়ে বসে থেকেছেন।
একা এ প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ঘুরে প্রচার করেছেন,কিন্তু তাতেও দলের বিপর্যয় আটকাতে পারেন নি।কোথায় কে কী ভাবে কোন খেলা খেলা যাচ্ছে বুঝতে পারছেন না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়,কেউ কেউ বলছেন একেবারে বিভ্রান্ত দলনেত্রী,হতাশায় চোখমুখ একেবারে থমথমে।
এরই মধ্যে তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বি মুকুল রায় বার্তা দিতে শুরু করেছেন এ রাজ্যে তৃণমূলকে একেবারে শেষ করে তবে তিনি তাঁর রাজনৈতিক অভিযান শেষ করবেন।এই বার্তার নির্যাস বুঝতে অসুবিধা হয় না,রাজ্য শাসক দলের অনেকেই তাঁর সঙ্গে যাগাযোগ রাখছেন,তারা যে সময় মত মমতার ঘর ভাঙবেন তা না বোঝার মত বোকা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নন,আর তাই তাঁর কপালে চিন্তার বলিরেখা আর গাঢ় হয়ে উঠছে।
বৃহস্পতিবার ভোটের ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পরেই রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় তৃণমূলের পার্টি অফিস গুলিতে মমতার ছবি টাঙিয়ে বসে থাকা লোকজনদের ভিড় কমতে শুরু করেছে।ঠিকানা বদলের ধান্দা করছেন অনেকেই।মমতা যে ভাবে একসময় ক্ষমতা ও লোভ দেখিয়ে দল ভেঙেছিলেন এবার যে সেই কৌশলই তাঁর বিরুদ্ধে প্রয়োগ করবেন একদা তাঁরই ছায়া সঙ্গি মুকুল রায় তা ভালই বুঝতে পারছেন তৃণমূল সুপ্রিমো।
তাই এই মূহুর্তে তাঁর কাছে দল ধরে রাখাটাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।বিজেপি যে ভাবে কোন সংগঠন ছাড়াই এতগুলো আসন(১৮টি) পেল তা যে দলেরই কোন অংশের সহায়তা ছাড়া সম্ভব নয় তা বুঝতে পেরে মমতা চাইছেন সেই অংশটা চিহ্নিত করতে।কিন্তু সেই কাজটা করা এখনই ততটা সহজ হবে না,কারণ সেটা করতে গিয়ে দলে আচমকা ভাঙন ধরতে পারে,এবার সেটা চিহ্নিত করতে না পারলে বিপদ কোথা থেকে আসছে বোঝা যাবে না,তৃণমূল নেত্রীর কাছে এখন তাই উভয় সঙ্কট।
এদিকে ভোটের আগে যাদের যাদের দায়িত্ব দিয়ে বলা হয়েছিল নির্দিষ্ট লিড দিতে না পারলে পুরসভা বা স্থানীয় নির্বাচনে টিকিট দেওয়া হবে না,তাঁদের মধ্যেও শুরু হয়ে গেছে আতঙ্ক,এই ফল দেখে দল যদি তাদের ছেটে ফেলে,তার চেয়ে আগে থেকে বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ করে দল বদল করলেই হয় বলে কেউ কেউ সে চেষ্টাও শুরু করে দিয়েছে।ফলে রাজনৈতিক জীবনে অনেক ঝড় ঝাপটা কাটিয়ে আসা মমতার সামনে আবার নতুন এক চ্যালেঞ্জ।
খুব কঠিন এক চ্যালেঞ্জ,এই চালেঞ্জে তাঁকে মোকাবিলা করতে হবে ভারতের এই মুহুর্তে সবচেয়ে শক্তিশালী এক দলকে,যে দলে নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহের মত নেতা,আর মুকুল রায়ের মত এ রাজ্যের রাজনীতির চানক্য রয়েছেন।মমতার লড়াইটা তাই কঠিন,খুব কঠিন।নির্বাচনের আগের প্রতিবেদনেই আমরা বলে রেখেছিলাম এ রাজ্যে লড়াইটা আসলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও মুকুল রায়ের সঙ্গে সেই লড়াইতে প্রাথমিক ভাবে জিতে গেছেন মুকুল রায়,এবার রাজ্য রাজনীতিতে অনেক অদল-বদল হবে,প্রতিদিন রাজ্য রাজনীতির রঙ বদলাবে,নানা জন নানা খেলা খেলবে আর তাতে পরিষ্কার হবে এ রাজ্যের রাজনীতি কোন দিকে যাচ্ছে সেই বিষয়টি।
আবারও বলতে হয়,ভোটের ফল এ রাজ্যে আর এক পালা বদলের ইঙ্গিত দিচ্ছে,সেই পালা বদলকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আর আটকাতে পারবেন কিনা তার উপরই নির্ভর করছে তাঁর রাজনৈতিক ভবিষ্যত।যদি পালা বদল আটকাতে না পারেন তাহলে কিন্তু মমতার দলের একটা বড় অংশ মিশে যাবে বিজেপিতে,রাজ্য রাজনীতিতে ক্রমশই সিপিএমের মতই অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বাংলার রাজনীতির ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে তা সময়ই বলবে,তবে এখন নিশ্চিত করে শুধু এটুকুই বলা যায় গভীর সঙ্কটে মমতা ও তাঁর দল।তবে এখানে একটা কথা বলা যায়,রাজনীতিতে না থাকলেও জ্যোতি বসু,বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম বাংলার রাজনীতিতে রাজনীতিক হিসেবে চর্চিত হবে তবে বাংলার রাজনীতিতে পরিবর্তনের ভগিরথ বলে একজনের নামই লেখা থাকবে তিনি মুকুল রায়।এই মানুষটাকে প্রতিহত করতে পারাটাই এখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রধান চ্যালেঞ্জ।