বিশেষ প্রতিবেদন
দেশের সময়ঃ-গত লোকসভা নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মূলত টলি পাড়ার স্টারদের উপর ভর করেই এ রাজ্যের একাধিক লোকসভার আসন নিজের দলের দখলে নিয়ে এসেছিলেন।শুধু তাপস পাল,শতাব্দী রায় নন,দেব,মুনমুন সেন,থেকে সন্ধ্যা রায় সকলেই সাংসদ হয়ে যান।গ্ল্যামার ভাঙিয়ে রাজনীতিতে বাজিমাত করার অভিযোগ ওঠে মমতার বিরুদ্ধে।এমনকী রাজনীতিক হিসেবে এইসব অভিনেতা-অভিনেত্রীদের কার্যকারিতা নিয়েও নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করে।গোটা টালিগঞ্জের শিল্পীদের যে ভাবে তৃণমূলের সভা মঞ্চে দল বেঁধে উপস্থিত থাকতে দেখা যায় তা নিয়েও বিতর্ত শুরু হয়ে যায়।অভিযোগ ওঠে শাসক দলের সভা ও কর্মসূচিতে উপস্থিত না থাকলে কাজ পাওয়া যাবে না এই ত্রাস ছড়িয়ে দিয়েই সমস্ত শিল্পীদের নিজেদের দলের পক্ষে আনুগত্য দিতে বাধ্য করেছে তৃণমূল দল।এ রাজ্যের রাজনৈতিক চর্চায় কান পাতলে এমনটাও শোনা যায় যে,টালিগঞ্জ পাড়ার এক দাপুটে মন্ত্রী ও তাঁর ভাই এখন সমগ্র টালিগঞ্জের শিল্পীদের নিয়ন্ত্রণ করেন।তাঁদের কথা ও নির্দেশ ছাড়া কোন অভিনেতা বা অভিনেত্রীরা কাজ পান না,তাই তাদের যাবতীয় ইচ্ছে-অনিচ্ছে বাদ দিয়েই তাঁরা শাসক দলের সঙ্গে থাকতে বাধ্য হন।এইরকম একটা পরিস্থিতিতে আচমকাই তৃণমূলের অন্দরমহলের খবর,আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গত বারের লোকসভার নির্বাচনের মত টলি পাড়ার স্টারদের আর অতটা গুরুত্ব দেবেন না।শোনা যাচ্ছে গত বারের বিজয়ী অনেকে এবার শাসক দলের টিকিট নাও পেতে পারেন।একান্ত আলোচনায় মমতা নাকি দলের নেতাদের জানিয়ে দিয়েছেন লোকসভায় কে কী ভূমিকা পালন করেছেন তা খতিয়ে দেখেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।শুধুমাত্র শোভা বাড়াতে এবার কাউকে আর লোকসভার টিকিট দেওয়া হবে না বলেই খবর।লোকসভার টিকিট পাওয়ার ক্ষেত্রে এবার প্রথম বাদ যাওয়া নাম হতে যাচ্ছে বোধহয় অভিনেতা তাপস পাল।তাঁকে আর টিকিট দিতে চাইছে না দল।বছর কয়েক আগে নিজের নির্বাচনী এলাকায় গিয়ে যে ভাষায় ও ভঙ্গিতে তাপস সিপিএমের বাড়ির মহিলাদের বাইরের লোক ঢুকিয়ে রেপ করিয়ে দেবো বলেছিলেন,যা নিয়ে রাজ্য ও দেশ জুড়ে আলোড়ন হয়েছিল তাতে দলের ভাবমূর্তির যথেষ্টই ক্ষতি হয়েছে বলে মনে করেন মমতা।তাছাড়া রোজভ্যালি কান্ডে নাম জড়িয়েছে তাপসের,তিনি গ্রেপ্তারও হয়েছিলেন,এখন জামিন পেলেও,যে গতিতে রোজভ্যালি তদন্ত চলছে তাতে তাপসের আবারও বিপদে পড়ার সম্ভাবনা যথেষ্ট,তাই তাঁকে নিয়ে আর বিব্রত হতে চায় না তৃণমূল।আর সেই কারণেই মমতার সঙ্গি হিসেবে টলিপাড়া থেকে যিনি সবার আগে এগিয়ে এসেছিলেন সেই তাপস পাল এবার বাদ পড়তে যাচ্ছেন মমতার তালিকা থেকে।নির্বাচনে আর দাঁড়াতে নাও পারেন অভিনেতা দেবও,এমনিতেই তিনি তাঁর কেরিয়ার নিয়েই ব্যস্ত থাকতে চান,তার উপর ছবি প্রযোজনা নিয়ে শ্রীকান্ত মেহতার সঙ্গে নানা সমস্যা হওয়ায় মমতা দেবের প্রতিও আগের মত সহৃদয় নয় বলেই খবর।তাই তালিকা থেকে বাদ পড়তে পারেন তিনিও।দেব নিজেও আর রাজনীতির মঞ্চে থাকতে চাইছেন না।বর্ষীয়ান অভিনেত্রী সন্ধ্যা রায়ও নাকি বাদের তালিকাতেই আছেন।এমনিতেই তিনি সংসদে কোন বিতর্কে অংশ নেন না,এলাকার সমস্যা নিয়ে খুব একটা কথাও তাঁকে বলতে শোনা যায় নি,মোটের উপর সাংসদ হিসেবে তিনি ব্যর্থ বলেই দলের পর্যবেক্ষণ।তবে বয়স ও তাঁর প্রতি মমতার ব্যক্তিগত ভালবাসা শেষ পর্যন্ত সক্রিয় হয়ে না উঠলে এবার সন্ধ্যা রায়ও লোকসভার টিকিট পাচ্ছেন নাই বলা যায়।তবে শতাব্দী রায় এখনও মমতার গুড বুকেই আছে।কিন্তু সে ক্ষেত্রেও প্রশ্ন শতাব্দীর সঙ্গে অনুব্রতর সম্পর্ক ভাল নয়,নিজের নির্বাচনী এলাকায় তিনি অনুব্রতকে গুরুত্ব দেন না বলে অভিযোগ।অন্যদিকে অনুব্রত জেলার সর্বসর্বা।তাই শতাব্দীর ভাগ্যও আপাতাত ঝুলে আছে সেই দ্বন্দ্বের জেরেই।মুনমুন সেনও সাংসদ হিসেবে কোন কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারেন নি,তবে বাঙালির সুচিত্রা প্রীতির কথা মাথায় রেখেই হয়তো এখনই সুচিত্রা তনয়ার বিরুদ্ধে কোন কড়া অবস্থান নেবেন না মমতা।সব মিলিয়ে এবার লোকসভা আসনে প্রার্থী দেওয়ার চিত্রনাট্য যে তৃণমূল একেবারে বদলে ফেলতে চলেছে তার ইঙ্গিত নানা স্তর থেকেই মিলতে শুরু করেছে।