

দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও তার পরবর্তী কয়েক বছরের রাজনীতিতে প্রবল পরাক্রমী গান্ধীবাদী কংগ্রেস নেতা সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের ১৫০-তম জন্মবার্ষিকী আজ, শুক্রবার। গুজরাতের কৃষক আন্দোলনের এই সর্দারের জন্মবার্ষিকী পালনে বল্লভভাই প্যাটেলকে কংগ্রেসের হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়েছেন মোদী-শাহ জুটি। বিজেপির রাজনৈতিক এই চালে দলীয় নেতার প্রতি শ্রদ্ধা দেখানোর বিষয়ে কংগ্রেস প্রায় কোণঠাসা হয়ে গিয়েছে। শুক্রবার প্যাটেলের জন্মবার্ষিকী পালনের মূল অনুষ্ঠানটি হয় গুজরাতে বিশ্বের সর্ববৃহৎ মূর্তি স্ট্যাচু অফ ইউনিটির সামনে।

সর্দার বল্লভভাইয়ের মূর্তিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করে ১৫০-তম জন্মবার্ষিকী অথবা রাষ্ট্রীয় একতা দিবসের সূচনা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এদিন সকালে নর্মদা জেলার একতা নগরে ১৮২ ফুট উঁচু স্ট্যাচু অফ ইউনিটির কাছে আসেন মোদী। সেখানে পুষ্পস্তবক দিয়ে প্যাটেলকে শ্রদ্ধা জানান। এখানেই এক বিশাল বর্ণাঢ্য প্যারেডে কুর্নিশ গ্রহণ করেন মোদী। শেষে বিমানবাহিনীর আকাশজয়ের মাধ্যমে মূল অনুষ্ঠান শেষ হয়।
https://x.com/narendramodi/status/1984082359202074762?t=tT2TzIvSRP4vMC5ii8Prbg&s=19

মোদী এখানে আসার আগেই একটি এক্সবার্তায় বলেন, সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের ১৫০-তম জন্মবার্ষিকীতে ভারত তাঁকে সম্মান জানায়। ভারতের সংহতি রক্ষায় তিনি নিরলস চেষ্টা করে গিয়েছেন। আমাদের জাতির ভাগ্য নির্ধারণ করেছিলেন দেশ গঠনের প্রাথমিক সময়ে। জাতীয় সংহতি রক্ষার কাজে তাঁর অনন্য দায়বদ্ধতা, সুশাসন এবং জনসেবা মূলক কাজ প্রজন্মের পর প্রজন্মকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। তিনিই আমাদের ঐক্যবদ্ধ, শক্তিশালী ও আত্মনির্ভর ভারতের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন।
অমিত শাহের কথায়, ‘কংগ্রেস সরকার সর্দার প্যাটেলকে সম্মান দেয়নি। বিজেপি তাঁর স্বপ্ন পূরণ করে ৩৭০ ধারা রদ করেছে।’তিনি আজন্ম কংগ্রেসের সঙ্গেই যুক্ত ছিলেন। কিন্তু কংগ্রেস সরকার তাঁকে যোগ্য সম্মান দেয়নি কোনও দিন। শুক্রবার এই অভিযোগেই হাত শিবিরকে তুলোধনা করলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সঙ্গে বিজেপিই তাঁর স্বপ্ন পূরণ করেছে বলে দাবি করেন তিনি।
২০১৪ সাল থেকে সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের জন্মদিনকে জাতীয় ঐক্য দিবস হিসেবে পালন করছে কেন্দ্রীয় সরকার। তাঁর ১৫০ তম জন্মদিন উপলক্ষ্যে দেশ জুড়ে পালিত হচ্ছে ‘ভারত পর্ব।’ আগামী ১৫ দিন ধরে প্যাটেলের স্মরণে হবে নানা অনুষ্ঠান।
এ দিন দিল্লিতে ‘ঐক্য দৌড়’-এর সূচনা করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। প্যাটেলের মূর্তিতে মালা দিয়ে শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের পরে কংগ্রেস সরকারকে আক্রমণ করে অমিত শাহ বলেন, ‘কংগ্রেস কোনও দিন সর্দার প্যাটেলকে যথাযোগ্য সম্মান দেয়নি। তাঁকে ভারতরত্ন দিতে ৪১ বছর লেগে গিয়েছে। নরেন্দ্র মোদী সরকার ৩৭০ ধারা রদ করে তাঁর অসমাপ্ত কাজ শেষ করেছে।’

স্বাধীনতার সময়ে ৫৬২টি স্বাধীন রাজ্যকে এক ছাতার তলায় আনায় প্যাটেলের ভূমিকার কথাও তুলে ধরেন শাহ। তাঁকে অখণ্ড ভারতের রূপকার আখ্যা দিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সর্দার প্যাটেলই ৫৬২টি রাজ্যকে একত্রিত করেছিলেন। তিনি ছিলেন অখণ্ড ভারতের রূপকার। স্বাধীনতা আন্দোলন এবং তার পর ভারতের মানচিত্র নির্মাণে তাঁর ভূমিকা ছিল অন্যতম। আজকের দিনটা আমাদের সবার কাছে তাৎপর্যপূর্ণ।’

গুজরাটের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের হয়ে ব্রিটিশ সরকারের করের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমেছিলেন বল্লভভাই প্যাটেল। কৃষক রমণীরাই তাঁকে সর্দার উপাধি দেন। বল্লভভাইও নিজেকে কৃষক বলেই পরিচয় দিতে পছন্দ করতেন। ইংল্যান্ডে ব্যারিস্টারি পড়েছেন। দেশে ফিরে ওকালতি শুরু করেন। সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন স্বাধীনতা সংগ্রামে। ১৯৫০ সালের ১৫ ডিসেম্বর দিল্লির বিড়লা হাউসে মৃত্যু হয় প্যাটেলের। ১৯৯১ সালে তাঁকে মরণোত্তর ভারতরত্ন সম্মাণে ভূষিত করে কেন্দ্রীয় সরকার।
 
                