দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ একুশের মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী দেখিয়েছিলেন, তিনি নিজের মোবাইল ফোনের ক্যামেরা প্লাস্টার দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছেন। সেই প্রসঙ্গে বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, ফোনে লিউকোপ্লাস্ট লাগিয়ে কিছুই হবে না। এটা প্রতীকী প্রতিবাদ। আসলে ওদের মুখে লিউকোপ্লাস্ট লাগানো উচিত।” ভোট পরবর্তী হিংসা প্রসঙ্গেও মুখ খুললেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি এদিন সাফ বললেন, বিজেপি মিথ্যে অভিযোগ করছে। তাঁর কথায়, “ভোট পরবর্তী কোনও হিংসা হয়নি। যা অশান্তি হয়েছে তা নির্বাচনের আগে। অন্যায় ভাবে রাজ্যকে দোষারোপ করা হচ্ছে।”
নতুন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনসুখ মাণ্ডবিয়া সংবাদমাধ্যমে বলেছেন, দেশে অক্সিজেনের অভাবে কারও মৃত্যু হয়নি। তা নিয়ে এদিন সরাসরি মোদী সরকারকে মিথ্যেবাদী বলে তোপ দাগলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেইসঙ্গে একটি হিন্দি গানের লাইন ও সিনেমার উদ্ধৃত করে বললেন, ‘ঝুট বোলে, কাউয়া কাটে!’
পর্যবেক্ষকদের মতে, মমতা জনতাকে মোদী জমানার বিপদ বোঝাতে ওই প্রবাদটি সুন্দর ব্যবহার করেছেন। মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ মোদী সরকার ও বিজেপির সবটাই ঝুটো। এরা সর্বদা মিথ্যা কথা বলে।
এর আগে মমতা একবার বলেছিলেন, বিজেপি হল “মিথ্যে পোকার ঢিপি। উই পোকার যেমন ঢিপি হয় তেমন এদের মাথায় মিথ্যে পোকার ঢিপি রয়েছে। সারাক্ষণ মিথ্যে বলে। মিথ্যে পোকাগুলো সারাক্ষণ কিলবিল করে।”
ঝুট বোলে কাউয়া কাটে ১৯৭৩ সালে রিলিজ হওয়া জনপ্রিয় হিন্দি সিনেমা ববির একটি সারা ফেলে দেওয়া গানের প্রথম লাইন। রাজ কাপুরের পরিচালনায় ঋষি কাপুর এবং ডিম্পল কপাডিয়া অভিনীত ওই সিনেমা দেখতে সিনেমা হলে হামলে পড়েছিল মানুষ। জনপ্রিয় হয়েছিল ববি প্রিন্ট শাড়ি, ফ্রক ইত্যাদি পোশাক।
ঝুট বোলে কাউয়া কাটে নামে একটি জনপ্রিয় হিন্দি সিনেমাও আছে। সেটি রিলিজ করেছিল ১৯৯৮ সালে। হৃষিকেশ মুখার্জী পরিচালিত সেই সিনেমার জুটি ছিল অনিল কাপুর এবং জুহি চাওলা। সেটিও সারা ফেলেছিল সিনেমাপ্রেমীদের মধ্যে। আসলে ঝুট বোলে কাউয়া কাটে একটি জনপ্রিয় হিন্দি প্রবাদ। যার বাংলা অর্থ হলো মিথ্যে কথা বললে কাকে ঠোকরাবে।
কিন্তু এদিন আক্রমণ শানাতে গিয়ে হিন্দি প্রবাদ ব্যবহার করলেন মুখ্যমন্ত্রী। অনেকের মতে, একুশের মঞ্চেই তিন ভাষায় বক্তৃতা করে জাতীয় রাজনীতির আঙিনায় নিজেকে তুলে ধরা শুরু করে দিয়েছেন মমতা। হতে পারে সে কারণেই এদিন হিন্দি প্রবাদটিকে সচেতন ভাবেই ব্যবহার করেছেন তিনি।
মুখ্যমন্ত্রী কঠিন বিষয় সহজভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেন। এদিন মুখ্যমন্ত্রী এমন দুটি রোম্যান্টিক সিনেমা সম্পর্কিত প্রবাদটি ব্যবহার করেছেন যার অর্থ গোটা দেশ জানে এবং বহুল প্রচলিত ৷
পেগাসাস নিয়ে এদিন ফের কেন্দ্রকে করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সাংবাদিক বৈঠকে বৃহস্পতিবার মমতা বললেন, “ওয়াটার গেট কেলেঙ্কারির থেকেও ভয়ংকর এই পেগাসাস কেলেঙ্কারি।” সরাসরি কেন্দ্রকে তোপ দেগে তিনি আরও বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার এটা কিনেছে মানুষের কন্ঠ রোধ করতে।
কেন্দ্রের বিরুদ্ধে জোট বদ্ধ হয়ে লড়ার পরামর্শ দিলেন তিনি। মমতার কথায়, জুমলা বাজি, জুলুম বাজি করে দেশ চালানো যায় না। একইসঙ্গে তিনি বলেন আগামী ২৬জুলাই দিল্লি সফরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করবেন তিনি। ইতিমধ্যেই তাঁর সময় পেয়েছেন বলেও জানান মুখ্যমন্ত্রী। ইচ্ছা প্রকাশ করেন সময় পেলে দেখা করবেন রাষ্ট্রপতির সঙ্গেও।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, বিরোধী নেতা থেকে শুরু করে শিল্পপতি, সাংবাদিকদের ফোন হ্যাক করার অভিযোগ উঠেছে ইজরায়েলী স্পাইওয়্যার পেগাসাসের বিরুদ্ধে। অভিযোগের আঙুল উঠছে কেন্দ্র তথা শাসক বিজেপির বিরুদ্ধেও।
তোলপাড় গোটা দেশ। পেগাসাস প্রসঙ্গে বৃহস্পতিবার নবান্ন থেকে বিজেপিকে তীব্র আক্রমণ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বললেন, “পেগাসাস মোদিবাবুর নাভিশ্বাস। সকলের কন্ঠ বন্দি করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে এসব করে কোনও লাভ নেই। একটা ফোন রয়েছে, কিন্তু সেটা ট্যাপ করা। কারও সঙ্গে কথা বলা যাচ্ছে না। জগত এভাবে চলতে পারে না।
সুপার এমারজেন্সির থেকেও ভয়ংকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তবে ভয় দেখিয়ে কতদিন?” মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, বিজেপি নিজের দলের নেতা-মন্ত্রীদেরও বিশ্বাস করেন না। আরএসএস এর নেতাদের ফোনও ট্যাপিং করা হচ্ছে বলেই অভিযোগ তাঁর।
কিছু দিন আগে নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, দিল্লি সফরে গিয়ে সময় পেলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন তিনি। বৃহস্পতিবার মমতা জানিয়ে দিলেন, প্রধানমন্ত্রী তাঁকে সাক্ষাতের সময় দিয়েছেন। তবে কবে, কখন তিনি মোদীর সঙ্গে দেখা করবেন সেই বিষয়ে এখনও কিছু জানাননি মমতা।
তৃণমূল সূত্রে খবর, চলতি মাসের ২৬ তারিখ দিল্লি যেতে পারেন মমতা। ওই দিন বিকেল তিনটের বিমানে কলকাতা থেকে দিল্লি রওনা হতে পারেন তিনি। ২৭, ২৮ ও ২৯ তারিখ দিল্লিতেই থাকতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী। নিজের যাবতীয় কর্মসূচি সেরে ৩০ তারিখ রাজধানী থেকে কলকাতায় ফিরতে পারেন তিনি।