জুলাই শেষেই ভারতের বায়ুসেনার হাতে আসছে চারটি রাফাল ফাইটার জেট

0
934

দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ প্রথম রাফাল এসেছিল গত বছরই। মে মাসের মধ্যে আরও পাঁচটি রাফাল ফাইটার জেটের বায়ুসেনার হাতে আসার কথা ছিল। তবে বিশ্বজুড়ে করোনা সতর্কতা জারি হওয়ার পরে এই ফাইটারজেটের নির্মাতা সংস্থা ফ্রান্সের দাসো অ্যাভিয়েশনের তরফে জানানো হয়েছিল ৩১ মার্চ পর্যন্ত রাফালের প্রোডাকশন বন্ধ রাখবে তারা। কাজেই মে মাসে রাফাল হাতে পাওয়ার কোনও সম্ভাবনাই নেই ভারতের। তবে জুলাইয়ের শেষে প্রথম চারটি রাফাল ফাইটার জেট ভারতের হাতে তুলে দিতে পারবে বলে জানিয়েছে ফরাসি যুদ্ধবিমান নির্মাতা সংস্থা।

২০১৬-র সেপ্টেম্বরে ফ্রান্সের সরকারের সঙ্গে চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল ভারত। মোট ৩৬টি রাফাল কেনার বিষয়ে চুক্তি হয়েছিল। ফ্রান্সের রাফাল নির্মাতা সংস্থা ‘দাসো অ্যাভিয়েশন’ জানিয়েছিল, মোট ৫৯ হাজার কোটি টাকা দামের ৩৬টি রাফাল যুদ্ধবিমান তারা তুলে দেবে ভারতের হাতে। তার প্রথম ইউনিট চলে আসবে চলতি বছরেই। বায়ুসেনা সূত্রে জানানো হয়েছে, জুলাই মাসের শেষেই চারটি রাফাল ফাইটার জেট পৌঁছবে ভারতে। তার মধ্যে তিনটি দুই আসনের ট্রেনার এয়ারক্রাফ্ট ও একটি এক আসনের ফাইটার এয়ারক্রাফ্ট পৌঁছবে আম্বালা বায়ুসেনা ঘাঁটিতে। ট্রেনার এয়ারক্রাফ্টগুলির টেল নম্বর হবে এয়ার চিফ মার্শাল আরকেএস ভাদুরিয়ার নামে। ফ্রান্স থেকে কেনা প্রথম রাফাল যুদ্ধবিমানের টেল নম্বর রাখা হয়েছিল তাঁর নামেই ‘আরবি ০১’।  পুণের ন্যাশনাল ডিফেন্স অ্যাকাডেমি থেকে ভারতীয় বায়ুসেনার ফাইটার স্ট্রিমে যোগ দিয়েছিলেন ১৯৮০ সালে । ২৬ রকমের যুদ্ধবিমান ওড়ানোর প্রশিক্ষণ রয়েছে তাঁর। প্রায় ৪২৫০ ঘণ্টা আকাশে যুদ্ধবিমান ওড়ানোর অভিজ্ঞতা রয়েছে। তিনি একাধারে ক্যাটেগরি ‘এ’পর্যায়ের ফ্লাইং ইনস্ট্রাকটর, অন্যদিকে পাইলট অ্যাটাক ইনস্ট্রাকটর। ভারতীয় বায়ুসেনার তরফে তাঁকে‘সোর্ড অব অনার’সম্মান দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া, বায়ু সেনা মেডেল ও পরম বিশিষ্ট মেডেলও পেয়েছেন তিনি।

রাফাল বিমান কেনার সময় ফরাসি সরকারের সঙ্গে মধ্যস্থতাকারী দলের সদস্য ছিলেন ভাদুড়িয়া। বিমান বাহিনীর প্রথম অফিসার হিসাবে রাফাল চালানোর অভিজ্ঞতাও রয়েছে তাঁর। বায়ুসেনা সূত্র জানাচ্ছে, ভারতীয় বায়ুসেনার প্রধান এই বর্ষীয়াণ ও অভিজ্ঞ এয়ার মার্শালের নামেই তাই তিনটি ট্রেনার রাফাল এয়ারক্রাফ্টের টেল নম্বর রাখা হবে।

সেই ২০০৭ সাল থেকেই মাঝারি ওজনের যুদ্ধবিমান কেনার প্রক্রিয়া শুরু হয়। আমেরিকা, রাশিয়া, সুইডেনের মোট ছ’টি বিমান সংস্থা প্রতিযোগিতায় নেমেছিল। লকহিড মার্টিনের এফ-১৬ ফ্যালকন, বোয়িংয়ের এফ-১৮ হর্নেট, সাব গ্রিপেন, মিগ-৩৫-কে বাদ দিয়ে শেষে প্রতিযোগিতা এসে দাঁড়ায় ইউরোফাইটার সংস্থার টাইফুন এবং রাফালের মধ্যে। কিন্তু ইউরোফাইটার-এর তুলনায় কম দর হেঁকে বাজি ছিনিয়ে নেয় দাসো।

সামরিক পরিভাষায় রাফালকে বলে ‘মাল্টিরোল কমব্যাট এয়ারক্র্যাফ্ট’। অনেক উঁচু থেকে হামলা চালানো, যুদ্ধজাহাজ ধ্বংস করা, মিসাইল নিক্ষেপ এমনকি পরমাণু হামলা চালানোর ক্ষমতাও রয়েছে রাফালের। রাফালকে আরও শক্তিশালী করার জন্য ‘মেটিওর’ এবং ‘স্কাল্প’ নামে দুটি মিসাইলও যোগ করা হতে পারে বলে জানিয়েছে বায়ুসেনা। লক্ষ্যসীমার বাইরে নিপুণ আঘাত হানতে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্র ‘মেটিওর’।  আর ‘স্কাল্প’  হল লো-অবজার্ভর ক্রুজ মিসাইল। এটি ব্যবহার করে ব্রিটিশ ও ফরাসি বায়ুসেনা।

পাকিস্তান ও চিনের আগ্রাসন বন্ধ করতে রাফাল ফাইটার জেট বায়ুসেনার অন্যতম অস্ত্র হয়ে উঠবে বলেই জানিয়েছেন এয়ার চিফ মার্শাল ভাদুরিয়া। দেশে ইতিমধ্যেই ‘লাইট কমব্যাট এয়ারক্রাফ্ট’ (এলসিএ)তেজস ফাইটার জেট তৈরি হচ্ছে। হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স লিমিটেডের (হ্যাল)কাছ থেকে তেজস যুদ্ধবিমান কিনছে বায়ুসেনা। এর মধ্যে রাফালও হাতে এসে এলে দেশের প্রতিরক্ষা আরও অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠবে বলেই মনে করছেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা।

Previous articleরতন টাটা ট্রাস্ট গড়ছে চার কোভিড হাসপাতাল,পরিষেবা শুরু জুনে
Next article১৫৭ জন পরিযায়ী শ্রমিককে ঘরে ফেরার ব্যবস্থা করল শান্তিনিকেতন থানা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here