দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃবৃহস্পতিবার বিকেলে রাজ্যের সব সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সিনিয়র ডাক্তারদের চিঠি লিখে মুখ্যমন্ত্রী আবেদন করে বলেছেন, ‘দয়া করে রোগীদের কথা ভাবুন। সব জেলা থেকে গরিব মানুষরা আসছেন। আমি কৃতজ্ঞ এবং সম্মানিত বোধ করব যদি আপনারা হাসপাতালগুলির দিকে পূর্ণ নজর দেন। হাসপাতালগুলি সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হওয়া উচিত।’
এদিকে এদিন বিকেলে ফের উত্তেজনা বাড়ে এনআরএস হাসপাতাল চত্বরে। মূল গেটে তালা দিয়ে যখন বিক্ষোভ চালাচ্ছিলেন জুনিয়র ডাক্তাররা, সেসময় একদল বহিরাগত তালা ভেঙে ঢোকার চেষ্টা করে বলে অভিযোগ। তাদের ঠেলে সরিয়ে গেট বন্ধ করে দেন জুনিয়র ডাক্তাররা। তাঁদের অভিযোগ, ‘পুলিসের সামনেই বহিরাগতরা আমাদের লক্ষ্য করে ইট, জলভর্তি বোতল ছুড়েছে।
পুলিস তাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।’ ইটের ঘায়ে এক জুনিয়র ডাক্তার জখম হয়েছেন বলে খবর। এদিন সন্ধ্যায় ফের বৈঠক করেন আন্দোলনকারীরা। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, মুখ্যমন্ত্রীকে অন্তত একবার অবশ্যই এনআরএস–এ আসতে হবে। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলতে হবে।
তাঁদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে। তারপরেই তাঁরা আন্দোলন প্রত্যাহারের কথা ভাববেন। না হলে আন্দোলন চলবে। রোগী পরিষেবার ব্যাপারে কোনও নির্দিষ্ট জবাব না দিয়ে আন্দোলনকারীরা বলেছেন, এবিষয়ে তাঁদের কর্তৃপক্ষই জবাব দেবে। নিজেদের আন্দোলনে সিনিয়রদেরও পাশে পেয়েছেন জুনিয়র ডাক্তাররা।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপো আবেশ বন্দ্যোপাধ্যায় ও ফিরহাদ হাকিমের মেয়ে শাব্বা হাকিমের পরে এ বার বারাসতের সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদারের ছেলে বৈদ্যনাথ ঘোষ দস্তিদার।
কাকলির ছেলেও অন্য দুজনের মতোই পেশায় চিকিৎসক। জুনিয়র ডাক্তারদের উপর হামলা, তার থেকে তৈরি হওয়া অস্থিরতা, আন্দোলন, রাজনীতি এই সবের মধ্যে তাঁর নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছেন বৈদ্যনাথ। সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি স্পষ্টই বলেছেন, তিনি এনআরএসের সঙ্গে আছেন, রাজনীতি গোল্লায় যাক!
বৈদ্যনাথ ফেসবুকে লিখেছেন, রীতিমতো এক, দুই করে অনেকগুলি পয়েন্ট দিয়ে তিনি লিখেছেন কেন তিনি তৃণমূলের কট্টর সমর্থক ও এক সাংসদের পুত্র হওয়া সত্ত্বেও আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারদের পাশে রয়েছেন। তিনি লিখেছেন, দুশো জন উর্দুভাষী জনতা হাসপাতালে ঢুকে তাণ্ডব করে, এক ডাক্তারকে প্রায় মৃত্যুর দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছে। এটা কোনওমতেই মেনে নেওয়া যায় না। সেই দুশো হামলাকারীর মধ্যে মাত্র পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, এটাও মেনে নেওয়া যায় না। তিনি লিখেছেন, হাসপাতালে ডাক্তারেরা নিরাপদ নন, তাঁদের কুপিয়ে হত্যা করা হতে পারে এই আশঙ্কা থেকেই যায়। ডাক্তারেরা যেখানে মানুষের জীবন বাঁচাচ্ছেন, সেখানে তাঁদের বিরুদ্ধে অন্যায় ভাবে রাজনীতির রং দেওয়া হচ্ছে। তিনি নিজে গিয়ে আন্দোলনরত ডাক্তারদের খাবার ও জল পৌঁছে দেবেন বলে জানিয়েছেন বৈদ্যনাথ। তিনি এ-ও বলেছেন, বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে মহিলা ডাক্তারদের দুষ্কৃতীরা যৌনাঙ্গ দেখিয়ে অসভ্যতা করেছে। অ্যসিড ছোড়া ও ধর্ষণ করার হুমকিও দিয়েছে।
তিনি আন্দোলনকারী ও চিকিৎসক-মহলের কাছে ক্ষমা চেয়ে লিখেছেন, তাঁর দলের কেউ যদি ডাক্তারদের বা তাঁদের আন্দোলনের সমালোচনা করে থাকেন, তার জন্য তিনি লজ্জিত। ‘আমায় তোরা ক্ষমা করে দে ভাই’, লিখেছেন বৈদ্যনাথ। বলেছেন, মানুষ যখন অসুস্থ হয়, তাঁদের বাঁচান ডাক্তারেরা। রাজনীতিক, পুলিশ বা টলিউডের স্টাররা নয়। আর ডাক্তাররা তো সামরিক বা পুলিশ প্রশিক্ষণ নিয়ে ডাক্তারি করতে আসেন না, তাই বিপদের মুখে তাঁদের নিরাপত্তা দিতেই হবে।
ছবি সংগৃহীত,