দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ এক দিনে রেকর্ড সংখ্যক করোনা ভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ল দেশে। বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার রাত পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে কোভিড-১৯ পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে ৪৭৮ দিনের। এক দিনে এটাই সর্বোচ্চ আক্রান্তের সংখ্যা। এই নিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হল ২৫৪৭। আবার শুধু শুক্রবারের হিসেবেও উদ্বেগ বেড়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের। শুক্রবার সকালে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের দেওয়া হিসেবে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২৩০১। সেখান থেকে ১২ ঘণ্টায় এক লাফে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে ২৪৬।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের বুলেটিনে জানানো হয়েছিল, পশ্চিমবঙ্গে তখনও পর্যন্ত ৫৩ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পাওয়া গিয়েছে। চব্বিশ ঘন্টা পর শুক্রবার সন্ধ্যা ৬ টায় কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, বাংলায় করোনা পজিটিভের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৩। যার অর্থ গত চব্বিশ ঘন্টায় বাংলায় আরও দশ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পাওয়া গিয়েছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রকের ওই বুলেটিনেই বলা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গে করোনা সংক্রমণে এখনও পর্যন্ত তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। সেই সঙ্গে তিন জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
এ প্রসঙ্গে বলে রাখা ভাল, স্বাস্থ্য কেন্দ্র-রাজ্য যৌথ বিষয়। করোনা সংক্রমণের ব্যাপারে সব রাজ্য কেন্দ্রকে যে পরিসংখ্যান জানাচ্ছে তার ভিত্তিতেই কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক সন্ধ্যার বুলেটিন প্রকাশ করছে।
তাৎপর্যপূর্ণ হল, শুক্রবার বিকেলে নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, “বাংলায় আরও চারজন পজিটিভ রোগী বেড়েছে। অর্থাৎ অ্যাকটিভ পজিটিভের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৮”। সেই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী আরও জানিয়েছেন, এ দিনই ৯ জন রোগীকে সুস্থ বিবেচনা করে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়ার কথা।
মুখ্যমন্ত্রীর কথা অনুযায়ী, তা হলে বাংলায় এখনও পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১২ জন। কারণ, ইতিমধ্যেই লন্ডন ফেরত আমলা-পুত্র, বালিগঞ্জের করোনা আক্রান্ত যুবকের বাবা ও হাবরার তরুণীকে সুস্থ ঘোষণা করে ডিসচার্জ করেছে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতাল। এ ছাড়া করোনা সংক্রমণে বাংলায় এখনও পর্যন্ত করোনা সংক্রমণে মৃত্যু হয়েছে ৩ জন।
ফলে ৬৩ থেকে এই ১৫ জনকে বাদ দিলে হয় ৪৮। অর্থাৎ কেন্দ্রের হিসাব অনুযায়ী বাংলায় এখন করোনা অ্যাকটিভ ৪৮ জন।
কেন্দ্র রাজ্য হিসাবে এই ফারাকটা কেন হচ্ছে তা এখনও স্পষ্ট নয়। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য দফতরের প্রতিক্রিয়ার অপেক্ষা করা হচ্ছে। তবে চিকিৎসকদের একাংশের মতে, প্রথমত মুখ্যমন্ত্রী সাংবাদিক সম্মেলনে আরও যে ৯ জনের সুস্থতার কথা বলেছিলেন, তা দেখা যাচ্ছে কেন্দ্রের বুলেটিনে আপডেট করা নেই। আবার এও হতে পারে মুখ্যমন্ত্রীর সাংবাদিক বৈঠকের পর নতুন টেস্ট রেজাল্ট এসেছে।
এমনিতেই সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন,”শুনছি কালিম্পংয়ের একটি পরিবারের আরও ছ’জনের মধ্যে সন্দেহজনক উপসর্গ দেখা দিয়েছে। তাঁদের পরীক্ষা করা হচ্ছে। পজিটিভ হলে একই পরিবারের ১০ জন করোনা আক্রান্ত হয়ে পড়বেন।” ফলে স্বাস্থ্য ভবন তথা রাজ্য সরকার রাতে বুলেটিন প্রকাশ করলে এই বিভ্রান্তি কেটে যাবে বলেই তাঁরা আশা করছেন।
মৃত্যুর হারেও চিন্তার ভাঁজ চওড়া হয়েছে কেন্দ্র তথা রাজ্য সরকারগুলির। ২৪ ঘণ্টায় মৃত বেড়েছে ৯ জন। গতকালের ৫৩ জন থেকে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৬২। আর এ দিন সকালে মৃতের সংখ্যা ছিল ৫৬। ১২ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ৬ জনের। তবে আশার কথা আক্রান্তের সংখ্যার সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে ওঠার সংখ্যাও বাড়ছে দেশে। বর্তমানে সেই সংখ্যা ১৬২, সকালে ছিল ১৫৬।
আক্রান্তের সংখ্যায় এখনও পর্যন্ত শীর্ষস্থানে রয়েছে মহারাষ্ট্র। সেখানে আক্রান্ত হয়েছেন ৩৩৫ জন। মহারাষ্ট্রের পরই ছিল কেরল। তার পরে ছিল তামিলনাড়ু। কিন্তু গত দু’দিনের মধ্যে প্রায় পাঁচ গুণ সংক্রমণ বেড়েছে তামিলনাড়ুতে। ৩১ মার্চ ওই রাজ্যে সংক্রমণের যে সংখ্যাটা ছিল মাত্র ৭৪। সেটাই ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০৯। এই অল্প সময়ে সংক্রমণের একটা বিশাল লাফ এক ধাক্কায় দেশের মোট সংক্রমণের সংখ্যাও বাড়িয়ে দিয়েছে। সংক্রমণের সংখ্যার নিরিখে তৃতীয় স্থানে চলে এসেছে কেরল। সেখানে ২৮৬ জন আক্রান্ত হয়েছেন।
মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু এবং কেরলের পর রয়েছে দিল্লি(২৯১), তার পর রাজস্থান(১৩৩), উত্তরপ্রদেশ(১১৩), অন্ধ্রপ্রদেশ(১৩২) এবং তেলঙ্গানা(১০৭)। করোনায় মৃত্যুর নিরিখে প্রথম স্থানেও মহারাষ্ট্র। সেখানে ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর পরে রয়েছে গুজরাত। সেখানে মৃত্যু হয়েছে ৭ জনের। মধ্যপ্রদেশে মৃত্যু হয়েছে ৬ জনের। দিল্লি ও পঞ্জাবে ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।