দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ করোনা সংক্রমণের জেরে লকডাউন চলছে কয়েক মাস ধরে। রোজগার নেই বহু পরিবারের। ফলে পেটের জ্বালায় অতিষ্ঠ মানুষ। কাজের খোঁজে নানা রকম চেষ্টা চলছে। এমনই পরিস্থিতিতে উত্তরপ্রদেশের এক করুণ চিত্র সামনে এল। সামান্য মজুরির বিনিময়ে খনি বা খাদানে কাজ করতে হচ্ছে কিশোরীদের। শুধু তাই নয়, সেই মজুরি পাওয়ার জন্য ধর্ষণেরও শিকার হতে হচ্ছে তাদের!
অভিযোগ, যোগী রাজ্যের এই অমানবিক ঘটনা দীর্ঘদিন ধরে চলছে। একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হয়েছে, প্রাপ্য মজুরির টাকা পাওয়ার জন্য আপস করতে হচ্ছে কিশোরীদের। এমনকি তাতে রাজি না হলে, পাহাড় থেকে ছুড়ে ফেলারও হুমকি দেওয়া হচ্ছে!
পরিস্থিতি বুন্দেলখণ্ডের চিত্রকূট অঞ্চলের এই ঘটনা সামনে আসার পরে লজ্জায় ও বিস্ময়ে আঁতকে উঠেছে গোটা দেশ। রাজধানী দিল্লি থেকে এই এলাকার দূরত্ব ৭০০ কিলোমিটার। এই এলাকার একটা বড় অংশ জুড়ে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বাস। এলাকার খনি ও খাদানে কাজ করেই তাঁদের জীবন নির্বাহ হতো। দারিদ্র ছিলই।
তবে ইদানীং বন্ধ সব, ফলে খাবার জুটছে না মানুষের। তার মধ্যেই কিছু মানুষ অবৈধ খনন শুরু করেছে। আর সেখানেই কাজে লাগানো হচ্ছে কিশোরীদের। পয়সার অভাবে তাতেই রাজি নিরুপায় এলাকাবাসী। পেট চালানোর অন্য পথ নেই যে।
সারা দিন কাজ করে ১০০-১৫০ টাকা মিলবে, এই শর্তে খনির বিপদে নামছে কিশোরীরা। কিন্তু বিপদ শুধু খনিতেই নয়, তার বাইরেও। কাজ শেষের পরেই নির্মম নির্যাতনের শিকার হতে হয়। তবে মেলে টাকা। রাজি না হলেই হুমকি। টাকার অভাবে এক দুঃসহ পরিস্থিতির মুখে তারা।
এসব কিছু যে খুব গোপনে বা না জানিয়ে হয়, তাও নয়। বাড়ির মেয়েদের কাজে পাঠানোর পরে তারা কী অবস্থায় ফেরে, তা ভালই জানে পরিবার। কিন্তু তাঁরাও নিরুপায়! সব জেনেও যেন বাধ্য হয়ে নরকে পাঠিয়ে দিতে হয় মেয়েদের। নষ্ট হয় তাদের কৈশোর, হয়তো গোটা জীবন।
চিত্রকূটের একটি পরিবারের এক কিশোরীর মা সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘৩০০-৪০০ টাকা রোজ হিসেবে কাজে ঢোকার কথা হয়। আমরা তো নিরুপায়, খাব কী টাকা না পেলে। কিন্তু শেষে ১৫০-২০০ টাকা দেয়। মেয়ে বাড়ি ফিরলে জানতে পারি, কতটা অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে। আমার ঘরে স্বামী অসুস্থ, তার চিকিৎসার খরচ রয়েছে। এতগুলো পেট চালাতে হবে। সব জেনেও মেয়েকে তাই পাঠাতেই হয়।’’
এক নির্যাতিত নাবালিকার কথায়, “কাজে ঢোকার সময়ে যে টাকা দেওয়ার কথা বলে, সেই টাকা দেয় না কখনও। তার ওপর রোজ ‘খুশি করতে হয়’ ম্যানেজার থেকে ড্রাইভারদের। ভয় দেখায় ওরা আমাদের। বাড়ির কথা ভেবে আমরাও…”
ঘটনার কথা জানাজানি হতেই বেআইনি খনি এবং খাদানগুলির পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন চিত্রকূটের জেলাশাসক শেশমণি পান্ডে। পাশাপাশি, উত্তরপ্রদেশ শিশু অধিকার ও নিরাপত্তা কমিশনের চেয়ারপার্সন বিশেষ গুপ্তও বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন।
কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, এসবে কিছুই হওয়ার নয়। কারণ সবাই সব জানে। অসহায়ত্বের ও দারিদ্রের সুযোগ নেওয়া হয় ইচ্ছে করেই। এর কোনও প্রতিকার নেই।