দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ বিজেপি নেতারা রোজই অভিযোগ করেন, রাজ্য সরকারের পুলিশ তাঁদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা সাজাচ্ছে। তাঁদের হেনস্থা করা হচ্ছে। এ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতা অরবিন্দ মেনন। সেই মামলার শুনানিতে শুক্রবার দেশের শীর্ষ আদালত নির্দেশ দিয়েছে, কৈলাস বিজয়বর্গীয়, মুকুল রায়, অর্জুন সিং-সহ মোট পাঁচ জনের বিরুদ্ধে রাজ্য সরকার বা পুলিশ কোনও রকম কঠোর আইনি ব্যবস্থা নিতে পারবে না।
এ রাজ্যে কোনও বিজেপি নেতার বিরুদ্ধে আপাতত কোনও রকম দমনমূলক ব্যবস্থা নিতে পারবে না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার। নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। মিথ্যে মামলায় তাঁদের ফাঁসানোর চেষ্টা করছে রাজ্য সরকার, এই অভিযোগ তুলে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন বিজেপি সাংসদ তথা পশ্চিমবঙ্গে দলের কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়-সহ রাজ্যের নেতারা। শুনানি ছিল শুক্রবার। শীর্ষ আদালত রাজ্যকে নোটিশ দিয়ে নির্দেশ দিয়েছে, ‘২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে মামলার পরবর্তী শুনানি না হওয়া পর্যন্ত সরকার বিজেপির কোনও নেতার বিরুদ্ধে কোনও দমনমূলক পদক্ষেপ করতে পারবে না
অরবিন্দ মেনন সুপ্রিম কোর্টে জানিয়েছিলেন এই নেতাদের বিরুদ্ধে বাংলার বিভিন্ন থানায় ১১৪টি মামলা দায়ের হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট এদিন বলেছে, পুলিশ চাইলে তদন্তের জন্য বড়জোর তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে কিন্তু কোনও কঠোর পদক্ষেপ অর্থাত্ গ্রেফতার করা যাবে না।
২০১৯ সালে সরস্বতী পুজোর আগের রাতে দুষ্কৃতীদের গুলিতে খুন হয়েছিলেন নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক সত্যজিত্ বিশ্বাস। কয়েক সপ্তাহ আগে সেই মামলার চার্জশিট পেশ হয়েছে। তাতে রয়েছে মুকুল রায়ের নাম।
ভাটপাড়া সমবায় ব্যাঙ্ক কেলেঙ্কারি মামলায় ব্যারাক্পুরের বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিংয়ের বাড়িতে একাধিকবার তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ। এই মামলাতেই অর্জুনের ভাইপোসৌরভ সিংকে গ্রেফতার করেছিল ব্যারাকপুর কমিশনারেট।পরে তিনি জামিন পান। পাঁচ জনের মধ্যে সৌরভের নামও রয়েছে। কৈলাস বিজয়বর্গীয়র বিরুদ্ধেও একাধিক মামলা রয়েছে।
বিজেপি নেতাদের বক্তব্য, তৃণমূল যে ভাবে ভাঙছে তাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার আরও হিংস্র হয়ে উঠতে পারে। গ্রেফতার করে জেলে ঢোকাতেও রেয়াত করবে না। তা ঠেকাতেই আদালতের হস্তক্ষেপ চাওয়া হয়েছিল।
সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশকে স্বাগত জানিয়ে রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ শুক্রবার বলেন, ‘‘এটা হওয়া খুব দরকার ছিল। বিজেপি নেতা, কর্মীদের ভোটে কাজ করতে না দেওয়ার জন্য জেলায় জেলায় মিথ্যা মামলা সাজিয়েছে রাজ্য সরকার। পুলিশ আর আদালতের ভয় দেখিয়ে বাধা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। এ বার মুখ পুড়ল সরকারের।’’ শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরেই বারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিংহকে পাশে নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতি মুকুল রায়। বলেন, ‘‘অর্জুন ১ বছর হল বিজেপিতে এসেছে। আমি এসেছি ৪ বছর আগে। রাজ্য সরকার একের পর এক মামলা করছে। অর্জুন বা আমি যখন তৃণমূল করেছি, তখন কোনও মামলা ছিল না। এটা বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের অবস্থা।’’ বাংলায় গণতন্ত্র বিপদের মুখে থাকার কারণেই সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশ বলে দাবি মুকুলের।
SC issues notice to West Bengal govt & orders no coercive action should be taken by govt against BJP leaders till next date of hearing in Jan 2021.
— ANI (@ANI) December 18, 2020
SC was hearing petitions filed by BJP MPs Kailash Vijayvargiya, Arjun Singh & others alleging foisting of false cases on them. https://t.co/tsy94VTPfN
সম্প্রতি বিধায়ক সত্যব্রত বিশ্বাসকে খুনের ঘটনায় দ্বিতীয় সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট জমা দেয় সিআইডি। সেই চার্জশিটে তৃণমূল বিধায়কের হত্যাকাণ্ডে অন্যতম মূল অভিযুক্ত হিসেবে মুকুল রায়ের নাম ছিল। মুকুলের অভিযোগ ছিল, তাঁর বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা দায়ের করছে রাজ্য। একই অভিযোগ তুলেছেন দিলীপ ঘোষ, কৈলাস বিজয়বর্গীয়র মতো নেতারাও৷
রাজনৈতিক মহলের মতে, সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশ একদিকে যেমন মুকুল রায়দের ক্ষেত্রে স্বস্তি তেমনই রাজ্য সরকারের কাছে ধাক্কা।