বারাকপুর অবস্থিত কেন্দ্রীয় অন্তর্স্থলীয় মৎস্য গবেষণা সংস্থার উদ্যোগে সুন্দরবনের গোসাবা ব্লকের অন্তর্গত আমতলি ও কচুখালি দ্বীপে গত ৫ই এবং ৬ই জানুয়ারী আয়োজিত হলো দুটি গণ সচেতনতা শিবির। এই দ্বীপ দুটি সুন্দরবন অঞ্চলের ক্ষুদ্রতম ও দূরবর্তী দ্বীপ গুলির মধ্যে অন্যতম। এই এলাকাটি প্রায় ১৩০টি ভিন্ন প্রজাতির মৎস্য ছাড়াও বিভিন্ন প্রাকৃতিক সম্পদ ও জলজ সম্পদে সমৃদ্ধ। কৃষি ও সেচকার্যের জন্য এই অঞ্চলে বহু ক্যানেল নির্মাণ করা হয়েছে যা মৎস্য পালনের মাধ্যমে জীবিকা উন্নয়ন এবং জীববৈচিত্র সংরক্ষণের জন্য ব্যবহার করার বহুল সম্ভাবনা রয়েছে। আদিবাসী মহিলারা যেহেতু মৎস্যপালনের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকেন তাদের ক্ষমতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি বিশেষ ভাবে প্রয়োজনীয় এবং সেই প্রয়োজন অনুভব করেই এই সংস্থার মাননীয় নির্দেশক ডঃ বি কে দাস মহাশয় উপরোক্ত অনুষ্ঠানটি আয়োজন করার সিদ্ধান্ত নেন। “সুন্দরবন ড্রিম” নামক স্থানীয় একটি এন . জি. ও র সহায়তায় এই অনুষ্ঠানটি সফল ভাবে পালিত হয়। প্রায় ৬০০ জন আদিবাসী ও মহিলা মৎস্যজীবী অনুষ্ঠানটিতে অংশগ্রহণ করেন। দুটি আনুষ্ঠানের শুরুতেই মহিলা মৎস্যজীবীদের সাথে বিশদ আলোচনার মাধ্যমে তাদের বর্তমান অবস্থা, সমস্যা ও প্রয়োজন জেনে নেয়ার প্রচেষ্টা করেন সংস্থার বৈজ্ঞানিকেরা। সংস্থার নির্দেশক মহাশয় উৎফুল্ল ভাবে আগত মৎস্যজীবীদের সাথে আলোচনায় লিপ্ত হন এবং মৎস্যপালনের মাধ্যমে জীবিকা সংগ্রহের বিভিন্ন উপায় তাদের সাথে আলোচনা করেন। তিনি দেশী প্রজাতির মাছ চাষের মাধ্যমে নদীর জলের জীববিচিত্র সংরক্ষণের কথাও বিশেষ ভাবে উল্লেখ করেন। অনুষ্ঠানের শেষে তিনি তার সংস্থার অন্য বৈজ্ঞানিকদের সাথে মিলে আগত মৎস্যজীবীদের সমস্ত সমস্যা ও প্রশ্নের উত্তর দেয়ার যথাযত দায়িত্ব নেন। বিভাগীয় প্রধান ডঃ উত্তম কুমার সরকার মাছ চাষের ব্যবসায়িক দিকের প্রতি আলোকপাত করেন এবং রঙিন মাছ চাষ ইত্যাদি বিভিন্ন লাভজনক উপায়ের কথা আগতদের সামনে তুলে ধরেন। কেন্দ্রীয় সরকারের আদিবাসী উন্নয়ন প্রকল্পের কোঅর্ডিনেটর ডঃ প্রণয় কুমার পরিদা তার বক্তব্যে নিশ্চিত করেন যে প্রযুক্তিগত সমস্ত সুবিধা দেয়া হবে এই অঞ্চলটির ক্যানেল গুলির সদ্ব্যবহার করে মৎস্য পালন করার জন্য। কিন্তু সেই সুবিধে গ্রহণ করার জন্য প্রয়োজন বিশেষ দখ্যতা। তাই আগত মৎস্যজীবীদের বারে বারে অনুরোধ জানানো হয় বারাকপুরে এই সংস্থাটিতে এসে বিজ্ঞান সম্মত উপায়ে মৎস্য পালনের বিভিন্ন পদ্ধতি শিখে নেয়ার জন্য। আঞ্চলিক প্রতিনিধি ও সমাজসেবীরাও এই অনুষ্ঠানে সক্রিয়ভাবে যোগদান করেন। প্রতিটি অনুষ্ঠানের শেষে ভারত সরকারের “স্বচ্ছ ভারত অভিযান” এর কর্মসূচি ও পালন করা হয়। পরিচ্ছন্নতা রক্ষা ও স্বাস্থকর অভ্যেস গড়ে তোলার জন্য সংস্থার বৈজ্ঞানিকগণ আগত মহিলাদের কাছে অনুরোধ জানান। কেন্দ্রীয় অন্তর্স্থলীয় মৎস্য গবেষণা সংস্থার এই প্রচেষ্টা এবং তাতে আগত আদিবাসী মহিলাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ প্রমান করে যে আপাত দৃষ্টিতে অনধিগম্য এই দ্বীপগুলিতে নব প্রযুক্তি পৌঁছে দেয়া আসলে অসম্ভব নয়। এই প্রয়াসটি সুন্দরবনের আদিবাসী মৎস্যজীবীদের সার্বিক উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা যায়।