দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ আশঙ্কা ছিলই। এবার তা সত্যি হল। ব্রিটেনে করোনার নতুন স্ট্রেন বা প্রজাতি এ বার ধরা পড়ল কলকাতাতেও। রাজ্যের এক স্বাস্থ্যকর্তার ছেলের শরীরে নতুন এই প্রজাতির ভাইরাসের উপস্থিতি মিলেছে বলে জানা গিয়েছে। শহরে এই প্রথম শনাক্ত হলেন নতুন এই প্রজাতির করোনা রোগী৷প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, রাজ্যের এক স্বাস্থ্যকর্তার ছেলে সম্প্রতি ব্রিটেন থেকে ফিরেছিলেন। তিনি উপসর্গহীন ছিলেন। কিন্তু নতুন প্রজাতির এই করোনা ভাইরাস যেহেতু ব্রিটেনেই সবচেয়ে বেশি ছড়িয়েছে, তাই তাঁর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো হয়। তখনই তাঁর শরীরে নয়া প্রজাতির ভাইরাসের জীবাণুর উপস্থিতি ধরা পড়ে।
বর্ষবরণের আগে কলকাতায় ব্রিটেন ফেরত যুবকের দেহে করোনার নয়া স্ট্রেনের হদিশ মেলায় সব মহলেই বাড়ছে আশঙ্কা। অন্যদিকে, এখনও পর্যন্ত দেশে ২০ জনের শরীরে ব্রিটেনের করোনা ভাইরাসের স্ট্রেনের হদিশ মিলেছে। মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, বেঙ্গালুরুর তিনটি, হায়দরাবাদের দু’টি এবং পুনের একটি নমুনায় করোনার প্রথম ‘ভ্যারিয়্যান্ট অফ কনসার্ন’-এর উপস্থিতি পাওয়া গিয়েছে। ছয় আক্রান্তকেই আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। সবমিলিয়ে ১১৪ জন ব্রিটেন ফেরত করোনা পজিটিভের নমুনা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের জন্য পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্র।
তাঁকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। হাসপাতাল সূত্রে খবর, সম্পূর্ণ আইসোলেশনে রাখা হয়েছে ওই রোগীকে। এই ভাইরাসের চরিত্র যেহেতু এখনও প্রায় অজানা, তাই সাধারণ করোনা ওয়ার্ডে রাখা হয়নি তাঁকে। কী ভাবে তাঁর চিকিৎসা শুরু করা হবে, তা নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দফায় দফায় বৈঠক করে পরবর্তী কর্মসূচি ঠিক করছেন। স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে নিরন্তর যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। স্বাস্থ্য দফতরও প্রয়োজনীয় সব রকম পদক্ষেপ করছে বলে জানা গিয়েছে
কলকাতা মেডিকেল কলেজে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে ওই যুবককে। তাঁর উপর চিকিত্সকরা প্রতি মুহূর্তে নজর রাখছেন বলে জানা গিয়েছে। সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকে দেশে করোনা সংক্রমণের রেখচিত্র ক্রমশ নিম্নগামী। গত সাতদিনে সংক্রমণের হার ছিল সবচেয়ে কম। গত সাতদিনের হিসেবে দেখা গিয়েছে প্রতি দশ লক্ষ মানুষের মধ্যে নতুন আক্রান্তদের সংখ্যা হাতে গোনা। গড় হিসেবে দেখা গেছে মাত্র ১১৯ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ২৫ শতাংশ বেড়েছে গোটা দেশে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ২০,৫৫০ জন। মোট করোনা ভাইরাসে সংক্রমণ বেড়ে হয়েছে ১,০২,৪৪,৮৫৩ জন।
এই সংখ্যাকে সামনে রেখেই অভয় দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের যুক্তি, সেপ্টেম্বরে প্রথম এই স্ট্রেনের কথা জানা যায় ব্রিটেনে। এই পর্বে বিমান পরিষেবা চালু থাকায় লক্ষাধিক যাত্রী ব্রিটেন থেকে এ দেশে এসেছেন। শুধু ব্রিটেন নয়, ইতালি, কানাডা, ডেনমার্ক, সুইডেন, ফ্রান্স, স্পেন, সুইৎজারল্যান্ড, নেদারল্যান্ডসের মতো বহু দেশেই এই স্ট্রেনের খোঁজ মিলেছে। ফলে ভারতেও এই স্ট্রেনের ছড়িয়ে পড়া একেবারে স্বাভাবিক ঘটনা। যদিও যে স্ট্রেনকে অতি সংক্রামক বলে মনে করা হচ্ছে, সংক্রমণ-চিত্রে তার বিন্দুমাত্র প্রতিফলন দেখা যায়নি।
কেন্দ্র এ দিন জানিয়েছে, ২৫ নভেম্বর থেকে ২৩ ডিসেম্বরের মধ্যে ৩৩ হাজার যাত্রী ব্রিটেন থেকে দেশে এসেছেন। এর মধ্যে ১১৪ জনের শরীরে করোনা পাওয়া যায়। এদের করোনাভাইরাসের জিনে চোখ রাখতে ১০টি প্রতিষ্ঠানের একটি কনসর্টিয়াম গড়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রক। এর মধ্যে বেঙ্গালুরুর নিমহ্যান্স, হায়দরাবাদের সিসিএমবি এবং পুনের এনআইভি থেকে প্রথম ব্রিটিশ স্ট্রেনের অস্তিত্বের কথা জানা গেল। প্রসঙ্গত, কল্যাণীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ বায়োমেডিক্যাল জিনোমিক্সে কলকাতা থেকে নমুনা পাঠানো হয়েছে। তারও রিপোর্ট দিনকয়েকের মধ্যে সামনে আসার কথা। সিসিএমবি-র অধিকর্তা রাকেশ মিশ্রও বলছেন, ‘এটি নতুন স্ট্রেন মাত্র। ভাইরাস সেই একই। তাই পুরোনো নিয়ম মানলেই যথেষ্ট।’
পাশাপাশি রাত পোহালেই বর্ষবরণের উৎসব। সেখানে যাতে কোনও ভাবেই এক জায়গায় বেশি ভিড় না-হয়, তা নিশ্চিত করতে রাজ্যকে অনুরোধ জানাল কলকাতা হাইকোর্ট। করোনা-বিধি মেনে কোনও জায়গায় যাতে বেশি মানুষের জমায়েত না-হয়, রাজ্যের মুখ্যসচিব ও স্বরাষ্ট্রসচিবকে তা নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছে বিচারপতি মৌসুমী ভট্টাচার্য ও বিচারপতি কৌশিক চন্দের ডিভিশন বেঞ্চ। আদালতের বক্তব্য, উৎসবের মরসুম শেষ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু বছর শেষে বহু মানুষ রাস্তায় বেরিয়ে পড়েছেন। বিভিন্ন জায়গায় ভিড় হচ্ছে বলে সংবাদমাধ্যমের মাধ্যমে নজরে আসছে। এই পরিস্থিতিতে করোনা-বিধি যাতে লঙ্ঘিত না-হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে রাজ্য সরকারকে। মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক এবং স্যানিটাইজারের ব্যবস্থাও করতে হবে।