দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ : ২১ জুলাই দুপুর দুটোর সময় শহিদ দিবস উপলক্ষে ভার্চুয়ালি বক্তব্য রাখবেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ট্যুইট করে নিজেই এই কর্মসূচির কথা জানালেন তৃণমূল সুপ্রিমো। ট্যুইটারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লিখেছেন, “বাংলার মানুষের আশীর্বাদে তৃতীয় বারের জন্য সরকার গড়েছি আমরা। আমি আমার ভাই বোনেদের জন্য শহীদ দিবসে বক্তব্য রাখব ওই দিন দুপুর দুটো নাগাদ। তবে প্রকাশ্য সমাবেশ নয়, বক্তব্য রাখা হবে ভার্চুয়ালি। করোনা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
একুশের ভোটের ফল প্রকাশের পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলীয় কর্মীদের এক্ষুণি বিজয় উৎসব করতে নিষেধ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, এখন করোনার সংক্রমণ বাড়ছে। তা মোকাবিলাতেই নজর দেওয়া হোক। পরে ব্রিগেডে বড় করে বিজয়োৎসব হবে।
কিন্তু বিজয় উৎসব পরের কথা, কোভিডের সংক্রমণের কারণে গত বছরের মতো এ বারও ২১ জুলাই ধর্মতলায় দলের শহিদ সমাবেশ হচ্ছে না বলে মঙ্গলবার জানিয়ে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। টুইট করে তিনি জানিয়েছেন, ভার্চুয়াল ব্যবস্থায় তিনি দলের কর্মীদের উদ্দেশে ওই দিন বক্তৃতা দেবেন। দুপুর ২ টো নাগাদ হবে তাঁর বক্তৃতা।
আরও একটি ট্যুইটে তৃণমূল নেত্রী ফিরে গিয়েছেন ইতিহাসে তিনি লিখেছেন, “১৯৯৩ সালে রাজনৈতিক বর্বরতার কারণে ১৩ জন সাহসী কর্মী দিয়েছিলেন। ২১ জুলাই তাঁদেরই স্মরণ করার দিন। আমরা প্রতি বছর এই মহৎ বলিদানকে স্মরণ করি।”
#ShahidDibas on every 21st July is a solemn occasion for us to remember our 13 bravehearts who were brutally killed in a politically orchestrated violence back in 1993.
— Mamata Banerjee (@MamataOfficial) July 6, 2021
We take this occasion every year to pay our respects for their heroic sacrifice. (1/2)
গত বছর কোভিডের কারণে ভার্চুয়াল ব্যবস্থায় কালীঘাটের বাড়ি থেকেই একুশের বক্তৃতা দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তা বৈদ্যুতিন ও সামাজিক মাধ্যমে সম্প্রচার হয়েছিল। জেলায় জেলায় পার্টি অফিসে তা বড় স্ক্রিনে দেখানো হয়েছিল। এবারও সেই দিকেই বিষয়টি গড়াচ্ছে বলে অনেকের ধারণা। ব্রিগেডে বিজয়োৎসবও আপাতত অনিশ্চিত। দলের একাংশের মতে, পুজোর আগে এ সব সভা সমাবেশের কোনও সম্ভাবনাই হয়তো নেই।
১৯৯৩ সালে যুব কংগ্রেসের সভানেত্রী থাকার সময়ের সচিত্র ভোটার কার্ডের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছিলেন মমতা। জঙ্গলমহল থেকে যাত্রা শুরু করেছিলেন তিনি। আন্দোলনের চূড়ান্ত রূপ হিসেবে সেবছর ২১শে জুলাই মহাকরণ অভিযান ডেকেছিল যুব কংগ্রেস।
সেই কর্মসূচিতেই বামফ্রন্ট সরকারের পুলিশের গুলিতে ১৩ জন যুব কংগ্রেস কর্মীর মৃত্যু হয়েছিল। তারপর থেকে প্রতি বছর শহিদ দিবস পালিত হয়। কংগ্রেস ভেঙে তৃণমূল তৈরি হওয়ার পরে একুশে জুলাইয়ের কর্মসূচি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরই হয়ে যায়। তৃণমূল কর্মীদের আবেগের কর্মসূচি একুশের সমাবেশ। যদিও খাতায় কলমে যুব তৃণমূলের নামে এই কর্মসূচি হয়।
গত বছর একুশে জুলাইয়ের এক দিন পর অর্থাৎ ২৩ তারিখ তৃণমূলের সাংগঠনিক রদবদল হয়েছিল। একাধিক জেলা সভাপতি বদল, জেলাগুলি থেকে পর্যবেক্ষক পদ তুলে দেওয়ার মতো সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কালীঘাট। যদিও এবার আগেই সংগঠনে একপ্রস্থ রদবদল হয়ে গিয়েছে। যুব তৃণমূলের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সায়নী ঘোষকে।
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। গত সাত-আট বছর ধরে প্রতিবারই অভিষেক একুশের মঞ্চে বক্তৃতা করেন অভিষেক। তবে এতদিন তা করতেন কখন ও তৃণমূল যুবা কখনও যুব তৃণমূলের সভাপতি হিসেবে। এবার প্রথম দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বলবেন ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ। যুব সভানেত্রী হিসেবে বক্তৃতা দেওয়ার কথা সায়নীরও।
গত প্রায় এক দশক ধরেই একুশের মঞ্চ তৃণমূলে যোগদানের মহামঞ্চ হয়ে ওঠে। বিভিন্ন দলের নেতারা ‘উন্নয়নে শামিল’ হতে তৃণমূলে যোগ দেন ওই মঞ্চে। সেদিক থেকে একুশের একুশে জুলাই অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। তৃণমূল ছেড়ে যাওয়া কারা ওই দিন পুরনো দলে ফিরছেন বা অন্য দল থেকে কারা আসছেন সেদিকেও নজর থাকবে রাজনৈতিক মহলের।
রাজনৈতিক মহলের মত, এই বছর ২১ জুলাইয়ের শহিদ তর্পণ অনুষ্ঠান নিয়ে বড় পরিকল্পনা ছিল তৃণমূলের। জল্পনা, এই মঞ্চ থেকে বিরোধী জোটের সলতে পাকানোর ইঙ্গিতও ছিল। হয়তো দেখা যেত ভিন রাজ্যের বিজেপি বিরোধী দলের বড় মুখদেরও । কিন্তু বিধি বাম। সোমবারই তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানান, এবার হয়তো ২১ জুলাই ব্রিগেডের সমাবেশ হবে না। আজ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও শিলমোহর দিলেন সেই সিদ্ধান্তেই। স্পষ্টই জানালেন শহিদ স্মরণে ভার্চুয়াল বক্তব্য রাখবেন তিনি।