দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ রবিবার ৭ ফেব্রুয়ারি বাংলায় আসছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। হলদিয়ায় কেন্দ্রীয় পেট্রলিয়াম মন্ত্রকের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন তিনি। তবে শুধু সরকারি অনুষ্ঠান নয়, একুশের ভোটের জন্য ওই দিনই প্রথম রাজনৈতিক সভা হবে মোদীর। মঙ্গলবার রাতে একথা জানিয়েছেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ।
জানা গিয়েছে, ওই দিন সরকারি অনুষ্ঠানের কয়েকশ মিটার দূরেই বিজেপির মঞ্চ থাকবে।
এমনিতে সরকারি অনুষ্ঠানে বাংলায় এসে রাজনৈতিক সভা করা মোদীর প্রথম নয়।লোকসভার আগে উত্তরবঙ্গের সার্কিট বেঞ্চ উদ্বোধন করতে এসে দলীয় সভা করে গিয়েছিলেন তিনি।
তবে যেহেতু হলদিয়ায় আসছেন প্রধানমন্ত্রী এবং তিনি দলীয় সভাও করবেন তাই কাঁথির শান্তিকুঞ্জ অর্থাত্ অধিকারী বাড়িতে ওইদিনই আরও পদ্ম ফুটবে কিনা তা নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়েছে। তা অনেকটা শুভেন্দু অধিকারীর কারণেই তৈরি হয়েছে। কেননা ইদানীং প্রায়ই তিনি বলছেন, আমার বাড়িতে আরও পদ্ম ফুটবে।
এমনিতে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি অনুষ্ঠানে হাজির থাকতে পারেন তমলুকের সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারী। জেলার অপর সাংসদ হিসেবে শিশির অধিকারীকেও দেখা যেতে পারে।
তবে এও ঠিক, সাধারণত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মঞ্চে যোগদান হয় না। অনেক সময়েই হয়, ভিন দলের কেউ তাঁর সঙ্গে আলাদা দেখা করার পর দলের দফতরে বা কোনও সভায় গিয়ে যোগদান করেন। অধিকারীদের ক্ষেত্রেও তা হতে পারে। মোদীর মঞ্চে দিব্যেন্দু থাকবেন। পরে সুবিধামতো সময়ে তিনি আনুষ্ঠানিক ভাবে বিজেপিতে সামিল হবেন।
নীলবাড়ি দখলের লড়াইয়ে নরেন্দ্র মোদীর অভিযান শুরু হয়ে যাচ্ছে আগামী রবিবার, ৭ ফেব্রুয়ারি। রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের আগে তিনি প্রথম জনসভা করবেন হলদিয়ায়। ওই দিন হলদিয়ায় একটি সরকারি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসছেন প্রধানমন্ত্রী। একই সঙ্গে পূর্ব মেদিনীপুরের শিল্পনগরীতে বিজেপি-র জনসভাতেও হাজির থাকবেন তিনি।
দিল্লিতে মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত চলা বঙ্গ বিজেপি-র কোর কমিটির বৈঠক শেষে এমনটাই জানিয়েছেন দলের বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘সরকারি অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এলেও, দলের তরফে জনসভা হবে। তাঁকে আমরা আমন্ত্রণ জানিয়েছি।’’ মোদীর তরফেও এ ব্যাপারে সম্মতি মিলেছে বলে দাবি দিলীপের৷
৭ ফেব্রুয়ারি মোদীর সফরের আগেই শনিবার, ৬ ফেব্রুয়ারি রাজ্যে আসছেন বিজেপি সভাপতি জেপি নড্ডা। এক দিনের সফর সেরে দিল্লি গিয়ে তিনি আবার আসবেন ৯ ফেব্রুয়ারি। অমিত শাহ আসবেন ১১ ফেব্রুয়ারি।
রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব চেয়েছিলেন ব্রিগেড সমাবেশ দিয়েই বাংলায় নির্বাচনী প্রচার শুরু করুন মোদী। কিন্তু তার আগে এখন মাত্র ৪ দিনের মধ্যে সারতে হবে প্রধানমন্ত্রীর জনসভার প্রস্তুতি। সংসদে অধিবেশন চলার কারণে এখন দিল্লিতেই রয়েছেন দিলীপ।
রাজ্যের অন্য শীর্ষনেতারাও মঙ্গলবার দিল্লি যান কোর কমিটির বৈঠকে যোগ দিতে। দিল্লিতে দিলীপের বাড়িতে মঙ্গলবার রাতের বৈঠকে হাজির ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ও। এছাড়াও ছিলেন বাংলার দায়িত্ব প্রাপ্ত ৩ কেন্দ্রীয় নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয়, শিব প্রকাশ এবং অরবিন্দ মেনন। সঙ্গে ছিলেন রাজ্যের সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তী ও সাংসদ সুভাষ সরকার। সেই বৈঠকেই মোদীর জনসভা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয় বলে জানা গিয়েছে৷
মঙ্গলবারের বৈঠকের প্রধান বিষয় ছিল রাজ্যে ‘পরিবর্তন যাত্রা’ নামে বিজেপি-র প্রস্তাবিত রথযাত্রার পরিকল্পনা। রাজ্য বিজেপি-র ৫টি সাংগঠনিক জোন থেকে ৫টি রথ বার হওয়ার কথা আগেই ঠিক ছিল। মঙ্গলবার সেগুলির সূচনায় কোন কেন্দ্রীয় নেতা কবে, কোথায় আসবেন তা-ও চূড়ান্ত হয়েছে। ৬ ফেব্রুয়ারি নড্ডা নবদ্বীপে প্রথম রথযাত্রার সূচনা করবেন।
৯ ফেব্রুয়ারি ঝাড়গ্রাম ও তারাপীঠ থেকে আরও দু’টি রথযাত্রার সূচনা করবেন তিনি। ১১ ফেব্রুয়ারি বঙ্গে আসবেন অমিত। তিনি কোচবিহার থেকে উত্তরবঙ্গের ওই কর্মসূচির সূচনা করবেন। কাকদ্বীপ থেকে কলকাতা জোনের যে রথটি বার হবে সেটির সূচনা কবে হবে তা অবশ্য এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
এখনও রাজ্য বিজেপি-র এমন পরিকল্পনা রয়েছে যে, প্রায় এক মাসের মধ্যে গোটা রাজ্যে ৫টি রথ ঘোরার পর হবে ব্রিগেড সমাবেশ। সেখানে মোদীর উপস্থিতিও চান রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব।
‘পরিবর্তন যাত্রা’ করার জন্য প্রশাসনিক অনুমতি পাওয়া নিয়ে এখনও অনিশ্চয়তা রয়েছে বিজেপি-র মধ্যে। ইতিমধ্যেই রাজ্যের মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে রথযাত্রার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছে পদ্ম শিবির। তবে গত লোকসভা নির্বাচনের আগে রথ বার করার উদ্যোগ নিয়েও পিছু হঠতে বাধ্য হওয়ার অভিজ্ঞতা ভাবাচ্ছে রাজ্য বিজেপিকে। প্রসঙ্গত ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগেও রথযাত্রার পরিকল্পনা করেছিল বিজেপি। ২০১৮ সালের ৭ ডিসেম্বর থেকে ২০১৯-এর ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত ‘গণতন্ত্র বাঁচাও যাত্রা’ নামে রথযাত্রার পরিকল্পনা থাকলেও, তা শেষ মুহূর্তে ভেস্তে যায়। প্রথমত, রথযাত্রায় রাজ্য প্রশাসনের অনুমতি মেলেনি। পরে আদালতের নির্দেশে যাত্রাভঙ্গ হয়৷
এ বার রথ বার করতে মরিয়া বিজেপি। মঙ্গলবার দিলীপ জানিয়েছেন, রাজ্য প্রশাসন অনুমতি না দিলে আদালতে যাওয়ার প্রস্তুতিও নিয়ে রাখছে বিজেপি।