

জঙ্গলপ্রেমীরা মানেন তার প্রেমে আলাদা একটা অনুভূতি রয়েছে, প্রতিবার সে অন্য রূপে ধরা দেবে। সেই টানে যে একবার আটকে গেছে, সে জানে জঙ্গলের প্রেমে দুনিয়ার সব টান উপেক্ষা করা যেতে পারে। আর এমন একটা জীবনকেই বেছে নিয়েছেন বনগাঁর টুকাই। সঙ্গী একটা ক্যামেরা।

ছবি তোলা অনেকের কাছে নিছক শখ, কারও কাছে পেশা। কিন্তু কারও কারও কাছে এটা আজীবনের পুরনো না হওয়া প্রেম । সেই প্রেমকে তিনি বেছে নিয়েছেন বলার থেকে বোধহয় ওই প্রেমই তাঁকে গড়ে নিয়েছে, এমনটাই মনে হয় টুকাইয়ের।কোনও প্রথাগত ছবি তোলার শিক্ষা নেই, তার ওপর এমন একটা বিষয়! অনেক লোকে তো বোঝেই না ওয়াইল্ড লাইফ ফোটোগ্রাফি ঠিক কী জিনিস? বাড়ি ছেড়ে বনেবাদাড়ে ঘুরে বেড়াবে?

এই পথে কেরিয়ার গড়া এতটাও সহজ ছিল না টুকাইয়ের জন্য। সীমান্ত শহর বনগাঁ থেকে উঠে আসা ছেলেদের জন্য যেখানে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বা শিক্ষক হওয়াটাই ‘বেস্ট কেরিয়ার চয়েস’ ছিল, সেখানে ‘লক্ষ্মীছাড়া’ এমন পেশা মেনে নেবেই বা কেন আশপাশের মানুষ! তাছাড়া পরিবারেরও চিন্তা হয়ে দাঁড়িয়েছিল যে, জঙ্গলে নিরাপত্তাই বা কী। কিন্তু সব কিছুর ঊর্ধে প্রকৃতির প্রতি ভালবাসা তাঁকে টেনে এনেছিল বন্যপ্রাণ আর ক্যামেরার জগতে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা পাখি দেখতে ভালবাসত যে ছেলেটি, প্রকৃতির প্রতি তার ভালবাসাকে নিতান্তই ‘টাইমপাস’ বলে দাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ওই যে বলে সবকিছুর একটা সময় আছে।

‘ইনার কলিং’ উপেক্ষা করা সম্ভব হয়নি টুকাই -এর পক্ষে। সব ছেড়েছুড়ে পাড়ি দিয়েছিলেন অজানা এক কেরিয়ারের উদ্দেশ্যে যেখানে সামনে কী রয়েছে, সেই পথের কোনও হদিশ জানা নেই। সেদিন থেকেই টুকাই জানতেন এই পথে এগোতে গেলে রাস্তা তাঁকে নিজেকেই তৈরি করে নিতে হবে।জানেন না কীভাবে ছবি তুলতে হয়, হাতে ধরে শেখাবার কেউ নেই। তাতে কী হয়েছে, পৃথিবীর এত বড় পরিধি, জ্ঞান ছড়িয়ে রয়েছে আশেপাশে, কুড়িয়ে নিলেই হচ্ছে। যা ভাবা তাই কাজ। দেশ বিদেশের নামী সব ফোটোগ্রাফারদের ভিডিও দেখে শেখার সেই শুরু, সেই চেষ্টা আজও জারি। মাঝে অবশ্য সুদিন এসে ধরা দিয়েছে, নামডাক হয়েছে।

ক্যামেরায় ধরা পড়েছে দুর্লভ নানা পাখি, পশু আর নৈসর্গিক দৃশ্য। বিভিন্ন নামী দরবারে জায়গা করে নিয়েছে টুকাই -এর তোলা ছবি। দেখুন ভিডিও

দিনের পর দিন জঙ্গলে কাটানো, রোদ-জল-ঝড় উপেক্ষা করতে পারার শর্তপূরণ করতে হয়েছে টুকাই’কে। বন্য প্রকৃতি অবশ্য পরীক্ষা নিয়েছে, তবে তার থেকেও বেশি পরীক্ষা নিয়েছে আশপাশের চেনা পরিবেশ।




