দেশের সময় , কলকাতা: দুর্নীতিকে ইডি-র এক আইনজীবী পেঁয়াজের খোসার সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। তবে রেশন দুর্নীতিও কিছু কম নয়! তদন্ত যত এগোচ্ছে ততই পরতে পরতে বেরিয়ে আসছে নিত্য-নতুন অভিযোগ। এবার আনিসুর রহমান ও আলিফ নুর গ্রেফতার হওয়ার পর আরও কিছু নতুন তথ্য গেল তদন্তকারী সংস্থার হাতে। বৃহস্পতিবার দিনভর জেরার পর মধ্যরাতে দেগঙ্গার তৃণমূল কংগ্রেসের ব্লক সভাপতি আনিসুর রহমান ও তাঁর ভাই আলিফ নুরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শুুক্রবার দুপুরে তাদের আদালতে পেশ করা হয়।
তাদের তরফে জামিনের আবেদন করা হয়েছে। ইডি আদালতে দাবি করেছে, জ্যোতিপ্রিয়ের চিঠি পাওয়ার পর এই রেশন দুর্নীতিকাণ্ডে বিভিন্ন বিষয় প্রকাশ্যে আসছে। তাদের দাবি, সেই চিঠিতে একটি নাম ছিল ‘মুকুল’। ঘটনাচক্রে, ধৃত আলিফের আর এক নাম মুকুল।
ইডির আরও দাবি, সূত্র মারফত তারা জানতে পেরেছে, জ্যোতিপ্রিয় ওরফে বালুকে ১০ লক্ষ টাকা সুদ দিতে হত। বিচারক জানতে চান, এর সঙ্গে রেশন দুর্নীতির কী সম্পর্ক? ইডির তরফে জানানো হয়, বালুর সিএ (চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট) শান্তনু ভট্টাচার্যের দফতর ডায়মন্ড হেরিটেজে তল্লাশিতে গিয়েছিল তারা। সেখান থেকে কিছু ডিজিটাল ডেটা উদ্ধার হয়। তার মধ্যে একটি ফোল্ডার ছিল ধৃতের নামে। ফাইলে লেখা ছিল ‘মুকুলদা’।
ইডি আরও জানিয়েছে, জ্যোতিপ্রিয়র হিসেব রক্ষক শান্তনু ভট্টাচার্যের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে সেইসব ডিজিটাল প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। একটি ফোল্ডারে উল্লেখ ছিল বিদেশ ও মুকুলের নাম। ১০ লক্ষ টাকা করে সুদ দেওয়ার বিষয়টিও ওই শান্তনুর থেকে পাওয়া নথিতেই মিলেছে। ইডি সূত্রের খবর, এই দুই ভাই ছিলেন জ্যোতিপ্রিয়র ‘মানি মেশিন’। তাদের মাধ্যমে ৪৫ কোটি টাকা গিয়েছে তিনটি সংস্থায়। অভিযোগ, মুকুল ও বিদেশ তাঁদের আত্মীয়দের ভুয়ো কৃষক বানিয়ে ধান কেনার টাকা নেন। এরপর তৎকালীন খাদ্যমন্ত্রীর ভাগের টাকা এই সব সংস্থায় পাঠিয়ে দেওয়া হত।
ইডির দাবি, সেখান থেকেই তারা জানতে পারে ধৃতেরা বালুর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত সংস্থায় টাকা দিয়েছিলেন। ধৃতদের সংস্থার ফাইলও ছিল সেখানে। সেখান থেকেই তারা তথ্য পেয়েছে বলে দাবি ইডির। জ্যোতিপ্রিয়ের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত সংস্থায় ১০ লক্ষ টাকা জমা করার কথাও ওই ফোল্ডার থেকে তারা জেনেছে বলে দাবি ইডির।
রাজ্যের প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় (বালু) মল্লিকের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত সংস্থায় টাকা দিয়েছিলেন ধৃত আনিসুর রহমান এবং আলিফ নুর ওরফে মুকুল রহমান। শুক্রবার আদালতে এমনটাই দাবি করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার দাবি, জ্যোতিপ্রিয়ের সংস্থাকে ১০ লক্ষ টাকা দিতেন আনিসুর এবং আলিফ। ইডির আরও দাবি, গত ডিসেম্বরে হাসপাতালে ভর্তি থাকার সময় রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রীর যে ‘চিঠি’ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল এবং তদন্তের সূত্রে পাওয়া দুই ফোল্ডারে লুকিয়ে রয়েছে রেশন দুর্নীতির রহস্য।
বিদেশ ও মুকুল নিজেদের কৃষক বলে দাবি করেন, কৃষক বলেই পরিচয় দেন সরকারের কাছে। এভাবেই তাঁরা টাকা হাতিয়ে নেন বলেও অভিযোগ ইডি-র। আধিকারিকদের দাবি, সরকারি আটার সিল ও স্ট্যাম্প পাওয়া গিয়েছে বিদেশের রাইস মিল থেকে। ইডি-র আইনজীবী বলেন, “আমরা অনেক কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে কাজ করে চলেছি হুজুর। এতে মানুষের টাকা জড়িত। টাকা বিদেশেও পাচার হয়েছে।”
প্রসঙ্গত,এসএসকেএম হাসপাতালে ডিসেম্বর মাসে চিকিৎসাধীন থাকার সময়ে জ্যোতিপ্রিয় তাঁর মেয়ে প্রিয়দর্শিনীর হাতে একটি চিঠি দেন বলে ইডি সূত্রের খবর। হাসপাতালে পাহারারত কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা ওই চিঠি বাজেয়াপ্ত করেন। ইডির দাবি, ওই চিঠিতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য রয়েছে। চিঠির সূত্রে রেশন বণ্টন দুর্নীতির মামলায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ সূত্র মিলেছে বলেও আদালতে দাবি করেছিল ইডি। এবার তারা দাবি করল, ওই চিঠিতেই একটি নাম ছিল ‘মুকুল’। ধৃত আলিফের আর এক নামও মুকুল।
বিচারক জানতে চেয়েছেন, ধৃত এই দু’জন যে রেশন দুর্নীতিতে যুক্ত, তার প্রমাণ কোথায়? তবে রেশন দুর্নীতিতে অভিযুক্ত আনিসুর ও আলিফ নূর অবশ্য জামিন চাননি এদিন। বিদেশ-মুকুলের ২০ দিনের ইডি হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আগামী ১২ অগস্ট ফের আদালতে তোলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।