সংশোধিত ওয়াকফ আইনের (Waqf Bill) বিরোধিতায় উত্তাল পরিস্থিতি তৈরি হয় মুর্শিদাবাদে। শুধু সেই জেলা নয়, মালদহের বিস্তৃর্ণ জায়গাও কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নেয়। তবে সোমবার সাংবাদিক বৈঠক করে রাজ্য পুলিশের এডিজি আইনশৃঙ্খলা জাভেদ শামিম জানালেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার সবরকম চেষ্টা চলছে। গত ৩৬ ঘণ্টায় নতুন করে কোথাও কোনও রকম উত্তেজনা ছড়ায়নি।
ওয়াকফ-অশান্তির জেরে যে ঘটনা ঘটেছে তার জন্য ইতিমধ্যে ২০০-র বেশি জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, বাড়ছে এফআইআরের সংখ্যাও। এমনটাই জানিয়ে রাজ্য পুলিশ। এডিজি আইনশৃঙ্খলার স্পষ্ট বক্তব্য, যারা এই পরিস্থিতি তৈরি করেছে, যে যে এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত, তাদের প্রত্যেককে কঠোর থেকে কঠোরতম শাস্তি দেওয়া হবে। পুলিশ সেই মতোই তদন্ত করছে। জাভেদ শামিমের কথায়, ”কোনও রাজনৈতিক দলের সদস্য হোক, কোনও সংগঠনের হোক, আমরা দেখব না। যারা যারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের সকলকে শাস্তি দেওয়া হবে। দরকারে পাতাল থেকে খুঁজে বের করে আনব দোষীদের। কিন্তু শাস্তি দেবই।”

গত শুক্রবার থেকে ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদে লাগামছাড়া সংঘর্ষ হয় মুর্শিদাবাদে। বহু মানুষ আতঙ্কে ঘরছাড়া হন। তাদের অনেকে পড়শি জেলাগুলিতে আশ্রয়ও নিয়েছেন। তবে সোমবার রাজ্য পুলিশের তরফে জানানো হয়, পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার সম্পূর্ণ চেষ্টা হচ্ছে। আগের থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণেও এসেছে। ইতিমধ্যে ১৯ জন তাদের বাড়িতে ফিরেও গেছেন। বাকি যারা এখনও ঘরছাড়া তাঁদের বাড়ি ফিরিয়ে আনার কাজ শুরু হয়েছে।

জেলায় হিংসা রুখতে ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়েছিল, তাও আবার চালু করা হচ্ছে। কিন্তু সাধারণ মানুষকে সচেতন থাকার বার্তা দিয়েছেন এডিজি আইনশৃঙ্খলা। কারণ তিনি মনে করছেন, সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে অনেকেই ভুয়ো খবর ছড়িয়ে অশান্তি ছাড়ানোর চেষ্টা করছেন। জাভেদ শামিমের কথায়, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও মানসিকভাবে মানুষ স্বাভাবিক হতে পারছেন না ভুল খবরের জন্য। লাগাতার ভুয়ো ছড়ানোর চেষ্টা করছে একদল। সেগুলি বিশ্বাস করে মানুষ আরও বিপদে পড়ছেন। যারা এই ধরনের কাজ করছেন তাদেরকেও কড়া শাস্তি দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।

পুলিশ এও বলছে, নতুন করে যাতে হিংসা না ছড়িয়ে পড়ে ভুয়ো খবর বা তথ্যের জন্য, সেই কারণেই নেট বন্ধ রাখা হয়েছিল। কিন্তু তা আবার চালু করা হচ্ছে কারণ গত ৩৬ ঘণ্টায় পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক। আর এটাই পুলিশের আপাতত প্রধান লক্ষ্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা।
কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে মুর্শিদাবাদ জেলায় শনিবার রাত থেকে মোতায়েন করা হয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। সঙ্গে রুটমার্চে রয়েছে রাজ্য পুলিশও। আপাতত এই টহলদারি বজায় থাকবে জেলায়। রাজ্য পুলিশের দাবি, অন্যান্য রাজ্যে এমন পরিস্থিতি তৈরি হলে তা স্বাভাবিক করতে অনেক বেশি সময় লেগে যায়। কিন্তু বাংলায় অনেক তাড়াতাড়ি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, খুব দ্রুত ১০০ শতাংশ স্বাভাবিক হবে পরিষেবা।

গত শনিবার সামশেরগঞ্জে বাবা এবং ছেলের রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার ঘিরে শোরগোল পড়েছিল। অভিযোগ, তাঁদের ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে খুন করেছে দুষ্কৃতীরা। সামশেরগঞ্জের জাফরাবাদের এই ঘটনায় আলাদা করে তদন্ত করা হচ্ছে বলেও জানান জাভেদ শামিম। সংশোধিত ওয়াকফ আইনকে কেন্দ্র করে অশান্তি ছড়ায় মুর্শিদাবাদে।
