দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের কন্যাশ্রী, সবুজসাথীর মতো সামাজিক কল্যাণ প্রকল্পগুলি আগেই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও সম্মান অর্জন করেছিল। এবার জয় বাংলা এবং দুয়ারে সরকারের মতো প্রকল্পের ভূয়সী প্রশংসা করল বিশ্বব্যাংক।পশ্চিমবঙ্গের সুসংহত সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পে এককালীন ১২ কোটি ৫০ লক্ষ ডলার (প্রায় ১,০০০ কোটি টাকা) অর্থ সাহায্যের সিদ্ধান্ত নিল বিশ্বব্যাঙ্ক।
সম্প্রতি রাজ্য সরকারকে চিঠি পাঠিয়ে বিশ্বব্যাঙ্কের তরফে এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে।
রাজ্য সরকারের কন্যাশ্রী, স্বাস্থ্যসাথীর মতো উন্নয়ন কর্মসূচিতে এটি বড় আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা।
প্রসঙ্গত, রাজ্যে ‘জয় বাংলা’র অধীনে প্রায় ৪০০-র বেশি প্রকল্প চলছে। যার মাধ্যমে শিশু, নারী, তপশিলি জাতি-উপজাতিদের উন্নয়নে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচির মাধ্যমে সরকারি পরিষেবা ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়েছে রাজ্য। উপকৃত হয়েছেন বহু মানুষ। আর রাজ্যের এই প্রকল্পগুলির প্রশংসা করে ঋণ দেওয়ার কথা জানিয়েছে বিশ্ব ব্যাঙ্ক।
রাজ্য সরকার শনিবার জানিয়েছে, বিশ্বব্যাংক তাদের ঘোষণাপত্রে বলেছে, পশ্চিমবঙ্গ সরকার সামাজিক সহায়তার লক্ষ্যে প্রায় চারশো প্রকল্প চালায়। জয় বাংলা নামে প্রকল্পটির আওতায় এক ছাতার তলায় সামাজিক সহায়তা, সুরক্ষা, সেবা এবং কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এগুলির মধ্য দিয়ে সমাজের প্রান্তিক অংশ বিশেষ করে আদিবাসী ও তফসিলি সম্প্রদায়, মহিলা, প্রবীণ, বিশেষভাবে সক্ষম মানুষ উপকৃত হচ্ছেন।
দুয়ারে সরকারের মতো অভিনব প্রকল্প চালু করে সরকার দ্রুত প্রাপক বাছাই এবং তাদের হাতে সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে, বলেছে বিশ্ব ব্যাংক। তারা আরও বলেছে তাদের ঋণ সহায়তা এই প্রকল্পগুলিকে ত্বরান্বিত করবে।
গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বাস্থ্যসাথী নামে বিমা প্রকল্প চালু করেন রাজ্যে। ওই প্রকল্পে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত চিকিৎসার খরচ মেটানোর কথা বলা হয়েছে। বিমার প্রিমিয়াম মেটাচ্ছে সরকার।
তখনই চালু হয় দুয়ারে সরকার প্রকল্প। সরকারি পরিষেবাগুলিকে এক ছাতার তলায় পাইয়ে দিতে ওই কর্মসূচি চালু করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তখনই ঘোষণা করা হয়েছিল, তৃতীয়বার ক্ষমতায় এসে তৃণমূল সরকার লক্ষ্ণীর ভাণ্ডার প্রকল্প চালু করবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দেন, হাতখরচ বাবদ তাঁর সরকার মহিলাদের মাসে মাসে পাঁচশো টাকা করে দেবে।
ভোট মিটতেই সেই প্রকল্প চালু হয়েছে রাজ্যে। বস্তুত, তৃণমূল সরকার প্রথম থেকেই আর্থিক সহায়তার নানা প্রকল্প হাতে নিয়েছে। সরকারের যাত্রা শুরুর পর চালু হয় কন্যাশ্রী প্রকল্প। মেয়েদের শিক্ষার হার বৃদ্ধি এবং কম বয়সে বিয়ে আটকাতে স্কুল ছাত্রীদের আর্থিক সহয়তা দেওয়ার প্রকল্প হল কন্যাশ্রী। চাল হয় স্কুল পড়ুয়াদের সাইকেল দেওয়ার প্রকল্প সবুজসাথী।
রাজ্যে প্রবীণ, বিধবা ভাতা আগেই চালু ছিল। আদিবাসী এবং তফসিলিদেরও নানাভাবে আর্থিক সহায়তার প্রকল্প ছিল। ২০১৯ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ষাটোর্ধ্ব আদিবাসী ও তফসিলিদের মাসে হাজার টাকা করে পেনসন চালু করেন। এছাড়া, খাদ্য সুরক্ষা আইনের বাইরে রাজ্য সরকার আদালা করে খাদ্যসাথী প্রকল্প চালু করে মধ্য আয়ের পরিবারগুলিকেও রেশনের আওতায় নিয়ে এসেছে।
উল্লেখ্য, এত প্রকল্পের জন্য অনেক টাকাই বহন করতে হয় রাজ্যকে। তবে এবার স্বাভাবিকভাবে বিশ্ব ব্যাঙ্কের থেকে ১ হাজার কোটি টাকা ঋণ পাওয়ায় এই সকল সামাজিক প্রকল্প আরও ভাল করে চালিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। গত আগস্ট মাসে বিশ্ব ব্যাঙ্কের কাছে ঋণের জন্যে রাজ্যের তরফে আবেদন করা হয়েছিল। এবার সেই আবেদন মঞ্জুর হল।
এই সব সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প চালাতে গিয়ে রাজ্য সরকারের কোষাগারে টান পড়েছে, সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী একাধিকবার তা প্রকাশ্যে বলেছেন। লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্প খাতেই সরকারের খরচ বেড়েছে বছরে প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা। এই আর্থিক অনটনের মুখে বিশ্ব ব্যাংকের সহজ শর্তের ঋণ বস্তুত পক্ষে সামাজিক কল্যাণ প্রকল্পগুলিকেই সুরক্ষা দেবে।