কলকাতা : নীতি আয়োগের বৈঠক নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মিথ্যা ভাষণ দিয়েছেন। অভিযোগ তুলে এবার বিধানসভায় ওয়াকআউট বিজেপির। শনিবার নীতি আয়োগের গভর্নিং কাউন্সিলের বৈঠক শেষে মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেছিলেন, তাঁর বক্তৃতা শুরুর পাঁচ মিনিটের মধ্যেই মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তার আঁচ যে সোমবার বিধানসভা অধিবেশনও পড়তে চলেছে, তা আগে থেকেই আঁচ করেছিলেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
তৃণমূল বিধায়ক, মন্ত্রীরাই এই নিয়ে শোরগোল করতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছিল। কিন্তু বিধানসভা অধিবেশন শুরু হতেই দেখা গেল উল্টোচিত্র। এদিন এবিষয়ে আলোচনার জন্য বাতিল করে দেওয়া হয় প্রশ্নোত্তর পর্বই। এরপর বিজেপি বিধায়করাই শোরগোল তৈরি করলেন। অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রী মিথ্যা ভাষণ রেখেছেন। প্রতিবাদে ওয়াকআউট করেন তাঁরা।
বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ বলেন, “এই দাবি সংসদীয় গণতন্ত্রের পক্ষে বেমানান। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নবান্ন থেকে সাংবাদিক সম্মেলন করেন, ওঁর ভুলে যাওয়া উচিত নয়, নবান্ন আর নীতি আয়োগ সরকারি সভা। এই মুখ্যমন্ত্রী ২০১১ সালের আগে এত এত দুর্নীতির ফাইল দেখাতেন, ২০১১ থেকে ২০২৪ হয়ে গিয়েছে, ওই ফাইল আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।” তাঁর বক্তব্য, “কেন্দ্রীয় অর্থ পাওয়ার বিষয়ে ওঁর কাছে কোনও তথ্য নেই, ফলে ওঁ মিথ্যা ভাষণ দেন। আর মুখ্যমন্ত্রী অর্থনৈতিক অবরোধের কথা বলেন, ২০১১ সালের পরে এই রাজ্যের সমস্ত পৌরসভা, পৌরনিগম, জেলা পরিষদ আর্থিকভাবে বঞ্চিত করে এগুলোকে দখল করেছে। কেন্দ্রের প্রকল্প থেকে বঞ্চিত করা হয়। মুখ্যমন্ত্রীর অসত্য ভাষণ, আর তা নিয়ে আলোচনার বিরোধিতায় আমরা বাইরে এসেছি।”
বিজেপি-র অভিযোগ, নীতি আয়োগের বৈঠকের ভিতরে কী ঘটেছে, তা না জেনেই, শুধুমাত্র সাংবাদিকদের সামনে এসে মুখ্যমন্ত্রী কী বললেন, তার প্রেক্ষিতে এই ধরনের আলোচনা বিধানসভায় করা উচিত হয়।
বিজেপি বিধায়করা ওয়াকআউট করায় বিরক্ত হন স্পিকার। স্পিকার বলেন, “বিরোধীরা ভুলে গিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী লিডার অফ হাউজ়। আমার এক্তিয়ারে এলে আলোচনা করতে পারি। প্রয়োজনে প্রিভিলেজ হবে।”
ফিরহাদ হাকিম বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলতা হ্যয় তো দিল্লি কাপতা হ্যয়… লজ্জার চোটে ওরা ওয়াক আউট করেছে। স্পিকার স্যর আপনি কিছু মনে করবেন না।”
প্রসঙ্গত,প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর পৌরোহিত্যে নীতি আয়োগের বৈঠকে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য পেশের সময় মাইক বন্ধ করার বিষয়টি সোমবার উঠল রাজ্য বিধানসভায়। এদিন সকালে রাজ্যের প্রবীণ মন্ত্রী মানস ভুঁইঞা একটি বিশেষ প্রস্তাব আনেন। সেখানে তিনি মাইক বন্ধ করার বিষয়টি নিয়ে আলোচনার দাবি জানালে স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় তাতে অনুমোদন দেন।
বিশেষ প্রস্তাবে বলা হয়েছে, নীতি আয়োগের বৈঠকে যা হয়েছে, তা মুখ্যমন্ত্রী মমতার বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে হেনস্তা। যার ফলে তাঁকে বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে আসতে বাধ্য করা হয়েছে। আলোচনার দাবি জানিয়ে আরও বলা হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী ওই বৈঠকে হাজির হয়েছিলেন কেবলমাত্র রাজ্যের বৃহত্তর স্বার্থে। যেখানে তিনি পশ্চিমবঙ্গ এবং অন্যান্য বিরোধী দল শাসিত রাজ্যের প্রতি কেন্দ্রীয় বঞ্চনার কথা তুলে ধরছিলেন। এবারের কেন্দ্রীয় বাজেটে এইসব রাজ্যকে বরাদ্দ না দেওয়ার কথাও বলার জন্য তিনি ওই বৈঠকে হাজির হয়েছিলেন।
মানস ভুঁইঞার আরও অভিযোগ, ওই বৈঠকে অন্যান্য ছোট রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে ১৪-২০ মিনিট পর্যন্ত বলার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, আমাদের মুখ্যমন্ত্রীকে পাঁচ মিনিটের বেশি সময় বলতে দেওয়া হয়নি। তাঁর বলার সময় ইচ্ছাকৃতভাবে তা আটকে দেওয়া হয়। এমনকী তাঁর কথা যাতে না শোনা যায়, তার জন্য মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। এর উদ্দেশ্য ছিল, বিরোধী স্বর রুদ্ধ করে দেওয়া। এ কারণে মুখ্যমন্ত্রীকে যথেষ্ট অপমান ও হেনস্তা করা হয়েছে বলে মানসের দাবি।
অতএব, এই সভা কেন্দ্রীয় এই আচরণে গভীরভাবে পীড়িত ও আহত বোধ করছে। এই সভার নেত্রীর বিরুদ্ধে যা করা হয়েছে তা প্রতিবাদে বেদনা প্রকাশ করছে এই সভা। যদিও বিজেপির তরফে মানস ভুঁইঞার এই দাবিকে নস্যাৎ করা হয়েছে। দলের মুখ্য সচেতক ওয়াকআউট করে বেরিয়ে এসে বলেন, তৃণমূল কংগ্রেস যা করছে তা সত্যের অপলাপ। এরকম কিছু ঘটেনি। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ করছি।