দেশের সময় ওয়েব ডেস্কঃ তাপমাত্রার পারদ চল্লিশের গণ্ডি পার করতেই প্রাণ ওষ্ঠাগত, গরমে হাঁসফাঁস করছে সাধারণ মানুষ। তাপপ্রবাহের জেরে বহু মানুষের মৃত্যুও হচ্ছে। শুধুমাত্র উত্তর বা পূর্ব ভারত নয়, প্রায় গোটা দেশজুড়েই এবার তাপপ্রবাহের দাপট দেখা গিয়েছে।
পশ্চিমী ঝঞ্চার কারণে হালকা থেকে মাঝারি পরিমাণ বৃষ্টিপাতে বিগত কয়েক দিন স্বস্তি মিললেও, ফের বাড়তে চলেছে গরমের দাপট। এরইমধ্যে তাপপ্রবাহ নিয়ে ভয়ঙ্কর পূর্বাভাস দিল জাতীয় আবহাওয়া দফতর। বর্তমানে যে তাপপ্রবাহ চলছে, তা আগামিদিনে আরও ভয়ঙ্কর রূপ নিতে চলেছে।
২০৬০ সালের মধ্যেই দেশে তাপপ্রবাহের মেয়াদ ১২ থেকে ১৮ দিন বাড়তে চলেছে। শুধুমাত্র দেশের নির্দিষ্ট কোনও একটি প্রান্ত নয়, দক্ষিণ ভারতের উপকূল অঞ্চল থেকে শুরু করে উপকূলবর্তী সমস্ত রাজ্য়গুলিতেও এই তাপপ্রবাহের প্রভাব টের পাওয়া যাবে। এই তাপপ্রবাহ মোকাবিলায় প্রাতিষ্ঠানিক, প্রযুক্তগত ও ইকোসিস্টেম ভিত্তিক বিভিন্ন পরিকল্পনা অনুসরণের পরামর্শ দিয়েছে আবহাওয়া দফতর।
মঙ্গলবারই “হিট অ্যান্ড কোল্ডওয়েভস ইন ইন্ডিয়া প্রসেসস অ্যান্ড প্রেডিক্টেবিলিটি” নামক একটি রিপোর্ট প্রকাশ করা হয় আবহাওয়া দফতরের তরফে। সেখানেই তাপপ্রবাহ, তার আগাম সতর্কতা এবং মোকাবিলায় শীতল ছাউনি তৈরির মতো বিভিন্ন বিষয়ের উল্লেখ করা হয়েছে।
আইএমডির প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড় বাদ দিয়ে অন্যান্য প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের তুলনায় তাপপ্রবাহেই দেশে সবথেকে বেশি মৃত্যু হয়েছে। ১৯৬১ সাল থেকে ২০২০ সালের তথ্যের ভিত্তিতে এই রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে। আবহাওয়া দফতরের তরফে জানানো হয়েছে, যখন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হয় এবং স্বাভাবিক তাপমাত্রার থেকে সাড়ে ৪ ডিগ্রি বেশি হয়, তখন তাকে তাপপ্রবাহ বলা হয়।
যখন তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে সাড়ে ৬ ডিগ্রি বেশি থাকে, তখন তীব্র তাপপ্রবাহের সতর্কতা জারি করা হয়। সাধারণত মার্চ থেতে জুন মাসের মধ্যে মধ্য ও উত্তর-পশ্চিম ভারতে তাপপ্রবাহ হয়। এছাড়া অন্ধ্র প্রদেশ ও ওড়িশার উপকূলেও তাপপ্রবাহ প্রবাহিত হয়, তবে তা মধ্য ভারতের তুলনায় কম শক্তিশালী হয়।
দেশের উত্তর অংশ ও অন্ধ্র প্রদেশ-ওড়িশা উপকূলে গড়ে দুটি তাপপ্রবাহ প্রবাহিত হয়। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে চারটি তাপপ্রবাহও প্রবাহিত হয়। আবহাওয়া দফতরগুলির পূর্বাভাসে দেখা গিয়েছে, আগামী ৬০ বছরের মধ্য়ে তাপপ্রবাহ আরও বাড়তে চলেছে। এর মেয়াদ যেমন বৃদ্ধি পাবে, তেমনই তাপপ্রবাহের প্রভাবও গুরুতর হবে। আগামী ৩০ বছরের মধ্য়েই তাপপ্রবাহের গড় মেয়াদ নুন্যতম তিনদিন বাড়তে চলেছে। অর্থাৎ আগে যেখানে ৭ থেকে ১১ দিন ধরে জারি থাকত তাপপ্রবাহ, তা এবার থেকে বেড়ে ১২-১৮ দিনে পৌঁছতে চলেছে।
বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য বিষয়টি হল, আগে যেখানে দক্ষিণ ভারত ও উপকূলবর্তী অঞ্চলগুলিতে সেভাবে তাপপ্রবাহ হত না , আগামী ২০-৩০ বছরের মধ্যে সেখানেও তাপপ্রবাহ বইতে চলেছে।
এদিকে বাংলায় স্বস্তির দিন শেষ। দু’দিনের মনোরম আবহাওয়া শেষে ফের একবার অস্বস্তিকর গরম। কলকাতায় বাড়বে তাপমাত্রা। গলদঘর্ম পরিস্থিতি তৈরি হবে জেলায় জেলায়। সামগ্রিকভাবে গোটা দক্ষিণবঙ্গ জুড়েই ফের একবার গরম বাড়তে চলেছে বলে জানিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর। যদিও আপাতত তাপপ্রবাহের পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আর কোনও সম্ভাবনা নেই বঙ্গে।
জানা গিয়েছে, কলকাতা ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে সামান্য বৃষ্টি হতে পারে তবে। আকাশ আংশিক মেঘলা থাকবে। মঙ্গলবার কলকাতা শহরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৩.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা স্বাভাবিকের থেকে দুই ডিগ্রি কম। বুধবার সকালের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২৬.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসে আপেক্ষিক আর্দ্রতার পরিমাণ থাকবে ৫০ থেকে ৮৬ শতাংশ।
স্বস্তির দিন শেষ। দু’দিনের মনোরম আবহাওয়া শেষে ফের একবার অস্বস্তিকর গরম। কলকাতায় বাড়বে তাপমাত্রা। গলদঘর্ম পরিস্থিতি তৈরি হবে জেলায় জেলায়। সামগ্রিকভাবে গোটা দক্ষিণবঙ্গ জুড়েই ফের একবার গরম বাড়তে চলেছে বলে জানিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর। যদিও আপাতত তাপপ্রবাহের পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আর কোনও সম্ভাবনা নেই বঙ্গে।
হাওয়া অফিস জানাচ্ছে, আবারও দক্ষিণবঙ্গের তাপমাত্রা বাড়তে চলেছে। তিন থেকে চার ডিগ্রি তাপমাত্রা বাড়বে দিনের বেলায়। আগামী পাঁচদিনের মধ্যেই আরামদায়ক আবহাওয়া চলে গিয়ে ফিরবে জ্বালাপোড়া গরম। বুধ এবং বৃহস্পতিবার স্থানীয় ভাবে মেঘ তৈরি হয়ে বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি হতে পারে বেশ কিছু জেলায়। কিন্তু, তা স্থায়ী হবে না বলেই জানাচ্ছে আলিপুর। তারপর আবার সেই ভ্যাপসা গরম ফিরবে।
এদিকে উত্তরবঙ্গের উপরের পাঁচটি জেলা অর্থাৎ জলপাইগুড়ি, কালিম্পং, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার এবং দার্জিলিঙে হালকা বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা। বাকি দুই দিনাজপুর এবং মালদায় বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা খুব কম ৷