দেশের সময় , কলকাতা: আগে জুন-জুলাইয়ে বর্ষাকাল ছিল, সেপ্টেম্বর থেকেই আকাশে দেখা মিলত শরতের মেঘের। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যেন ঋতুর মেয়াদও বদলে গিয়েছে। এখন প্রায় বছর জুড়েই লেগে থাকে ঝড়-বৃষ্টি। অগস্ট মাস, বিশেষ করে শেষভাগে রাজ্য ভেসেছে ভারী বৃষ্টিতে। শুধু পশ্চিমবঙ্গই নয়, ভারী বৃষ্টির জেরে একদিকে যেমন ত্রিপুরায় বন্যা হচ্ছে, তেমনই আবার জলে ডুবে গিয়েছে গুজরাটও। আজ রবিবার ।নতুন মাস শুরু। সেপ্টেম্বরও কি ভাসাবে বৃষ্টি?
গুজরাট উপকূলের কাছে তৈরি হয়েছে ঘূর্ণিঝড় ‘আসনা’। কিন্তু, এর সরাসরি কোনও প্রভাব বাংলার আবহাওয়ার উপর পড়বে না, জানাচ্ছে আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর। আপাতত দক্ষিণবঙ্গে ভারী বৃষ্টিপাতের কোনও সম্ভাবনা নেই। উত্তরবঙ্গের উপরের পাঁচ জেলায় বিক্ষিপ্তভাবে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টিপাত হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় আসনা সৌরাষ্ট্র ও কচ্ছ উপকূল থেকে সরে প্রথমে পশ্চিম, উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হবে। এরপর তা পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে এগিয়ে যাবে। এই ঘূর্ণিঝড়ের অভিমুখ ওমানের দিকে। গুজরাট এবং কর্নাটক উপকূলে ভারী বৃষ্টিপাত ছাড়া আসনার সেভাবে কোনও প্রভাব ভারতের উপর পড়বে না।
রবিবার সকাল থেকেই মূলত ঝলমলে ছিল শহর কলকাতার আকাশ। বিক্ষিপ্তভাবে বৃষ্টিপাত হয়েছে বিভিন্ন অংশে। তবে আপাতত কলকাতায় ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। সোমবার থেকে রোদ বাড়তে পারে। সঙ্গে আপেক্ষিক আর্দ্রতাজনিত অস্বস্তি বৃদ্ধিরও সম্ভাবনা রয়েছে। এ দিন শহরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা থাকতে পারে ৩৩ ডিগ্রি এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা থাকতে পারে ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি।
গতকাল অর্থাৎ শনিবার শহরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩২.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা স্বাভাবিকের থেকে ০.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি এবং রবিবার সকালে শহরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২৭.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা স্বাভাবিকের থেকে ১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। এ দিন বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ সর্বাধিক ৯০ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন ৬৮ শতাংশ।
রবিবার দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ হালকা বৃষ্টিপাত হতে পারে। অপেক্ষাকৃত বেশি বৃষ্টিপাত হতে পারে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলাতে। আপাতত কোনও জেলাতেই ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই বলেই জানাচ্ছে আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর। তবে সোমবার থেকে তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে বলে হাওয়া অফিস সূত্রে খবর। সঙ্গে অস্বস্তি বাড়াবে আপেক্ষিক আর্দ্রতাও।
রবিবার উত্তরবঙ্গে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, উত্তর দিনাজপুরে। মঙ্গলবার কালিম্পঙে রয়েছে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা। বুধবার জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, কালিম্পং এই তিন জেলাতে ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে।
আবহাওয়াবিদ ও বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এত সহজে বৃষ্টি পিছু ছাড়ছে না। অগস্টের মতো সেপ্টেম্বর মাসেও বৃষ্টি হবে। তাও আবার স্বাভাবিকের থেকে বেশি। উত্তর-পূর্ব ভারতে স্বাভাবিক বা স্বাভাবিকের তুলনায় কম বৃষ্টি হলেও, দেশের অধিকাংশ রাজ্য়েই ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। উত্তরাখণ্ড, হিমাচল প্রদেশ, জম্মু ও কাশ্মীর, রাজস্থান এবং মধ্য প্রদেশের মতো রাজ্যের নাম এই তালিকায় রয়েছে।
পুজোর কেনাকাটাতেও জল ঢালবে বৃষ্টি। পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণের জেলাগুলিতে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। উল্টোদিকে উত্তরবঙ্গের আবার ৫ জেলায় অর্থাৎ দার্জিলিং, কালিম্পং, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহারে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টি হতে পারে।
আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, জলবায়ুর প্যাটানে পরিবর্তন ও আঞ্চলিক আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণেই বৃষ্টির এই খামখেয়ালিপনা চলবে। এর উপরে লা নিনা-র প্রভাব তো আছেই।
বৃষ্টি লেগে থাকলেও, তবে এত সহজে গরম থেকে মুক্তি মিলবে না। দেশের অধিকাংশ অংশেই সেপ্টেম্বর মাসে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি থাকবে। তবে উপকূলবর্তী অঞ্চল ও পূর্ব-মধ্য ভারতের কিছু অংশে তাপমাত্রা স্বাভাবিক বা তার তুলনায় কম থাকতে পারে। ন্যূনতম তাপমাত্রায় পরিবর্তন আসতে পারে হিমালয়ের পার্বত্য অঞ্চল ও দক্ষিণের উপকূলবর্তী অঞ্চলে।