গত ২৫ এপ্রিলই ৪৪ বছরের রেকর্ড ভেঙেছে কলকাতা। ৪১.৬ ডিগ্রিতে তাপমাত্রা উঠে গিয়েছিল। আজও আবহাওয়া দফতরের সেই পূর্বাভাস, তাতে আলিপুরের তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রিতে পৌঁছে যেতে পারে। এমনটা হলে ১৯৬০ সালের পর এই প্রথম এপ্রিলের কলকাতার তাপমাত্রা এতটা বাড়বে!
দেশের সময় কলকাতা গরমে কাহিল গোটা দক্ষিণবঙ্গ। টানা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে থাকছে তাপমাত্রা। তাপপ্রবাহ চলছে রোজই। তবে এপ্রিলের এই গরম শুধু বাংলাতেই নয়, দেশের অন্যত্রও অস্বস্তি বাড়িয়েছে। পূর্ব এবং দক্ষিণ ভারতের বিস্তীর্ণ অংশে গরমে নাজেহাল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। চলছে তাপপ্রবাহ। এমনকি, যে সমস্ত জায়গায় কখনও এমন গরম পড়তে দেখা যায় না, সেখানেও তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে। কোথাও কোথাও ৪০-এর গণ্ডিও অতিক্রম করে ফেলেছে পারদ।
গত ৬৪ বছরে এপ্রিলে ৪২ ডিগ্রি ছোঁয়নি কলকাতা। সাড়ে ৬ দশকের সেই রেকর্ড আজ ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা করছে হাওয়া অফিস।
জেলায় জেলায় তাপপ্রবাহের দাপট জারি। চলতি সপ্তাহেও তীব্র দহন জ্বালা বজায় থাকবে। আগামিকাল বিক্ষিপ্তভাবে উত্তরের কয়েকটি জেলায় বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। সপ্তাহান্তে দক্ষিণবঙ্গে আবহাওয়ার পরিবর্তন হতে পারে।
হাওয়া অফিস জানিয়েছে, আগামী রবিবার অর্থাৎ ৫ মে থেকেই বৃষ্টি শুরু হতে পারে দক্ষিণবঙ্গে। হু হু করে জলীয় বাষ্প ঢোকার ফলে উপকূলবর্তী এবং পশ্চিমের জেলাগুলিতে বৃষ্টি হবে। আগামী রবিবার ও সোমবার বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলায়।
আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে খবর, সোমবার কলকাতার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২৯.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আজ পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান, বীরভূম এবং বাঁকুড়ায় অতি তীব্র তাপপ্রবাহের লাল সতর্কতা জারি করা হয়েছে। কলকাতা সহ দক্ষিণবঙ্গের বাকি জেলাগুলিতে তাপপ্রবাহের কমলা সতর্কতা জারি।
ফলে তীব্র তাপপ্রবাহেরও সম্ভাবনা থাকছে। তীব্র তাপপ্রবাহ কাকে বলে? মূলত স্বাভাবিক যে তাপমাত্রা, তার থেকে অন্তত সাড়ে ৬ ডিগ্রি তাপমাত্রা বেশি হলে তাকে ‘সিভিয়ার হিট ওয়েভ’-এর পর্যায়ে ফেলা হয়। এখন কলকাতার তাপমাত্রা থাকার কথা ৩৫ ডিগ্রির আশেপাশে। সেটা বেড়ে যদি ৪২-এ পৌঁছয়, তাহলে সেটা ‘সিভিয়ার হিট ওয়েভ’ হবে। আজ সকালেই ৪০ ছুঁই ছুঁই তাপমাত্রা। ফলে সাড়ে ৬ দশকের রেকর্ড ভাঙতে পারে কলকাতা।
মঙ্গলবার দার্জিলিং, কালিম্পং, জলপাইগুড়িতে বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। ১ মে কোচবিহার এবং আলিপুরদুয়ারেও বৃষ্টি হতে পারে। আজ কয়েক পশলা বৃষ্টি হতে পারে পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম এবং দুই মেদিনীপুরে। যদিও তাতে তাপমাত্রার হেরফের হবে না।
মৌসম ভবনের পূর্বাভাস বলছে, আগামী পাঁচ দিন পূর্ব এবং দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলিতে গরমের পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই। বরং তাপপ্রবাহ চলবে। কেরল, তামিলনাড়ু, পশ্চিমঘাট সংলগ্ন মহারাষ্ট্র, বেঙ্গালুরুতে সাধারণত এই ধরনের গরম পড়ে না। সমুদ্রের ধারে সারা বছরই মনোরম নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া থাকে। সেখানেও এ বছরের এপ্রিলে তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৪১ ডিগ্রির মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। গরমে মৃত্যুর খবরও মিলেছে বেশ কয়েকটি এলাকা থেকে।
কেরলের আলপ্পুঝা মনোরম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং আবহাওয়ার কারণে পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয়। তামিলনাড়ুর উটি, মহারাষ্ট্রের মাথেরানের মতো এলাকায় খুব গরমেও তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি ওঠে না। চলতি এপ্রিলে আলপ্পুঝায় ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং মাথেরানে ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত পারদ উঠেছিল, যা ওই এলাকায় সর্বোচ্চ।
লক্ষদ্বীপের আমিনিদিভিতে এখনও পর্যন্ত এপ্রিলের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৬.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা বিরল। অন্ধ্রপ্রদেশের আরোগ্যভরমে তাপমাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছিল ৪১ ডিগ্রির গণ্ডিও। ওই এলাকায় এত গরম আগে পড়েনি।
এ ছাড়া, ওড়িশার কটক, তামিলনাড়ুর ধর্মপুরী, পশ্চিমবঙ্গের ক্যানিং, ডায়মন্ড হারবারে এপ্রিলের তাপমাত্রা ছিল ৪১ থেকে ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে। গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে তাপমাত্রা আগামী পাঁচ দিনে আরও বাড়তে পারে। মৌসম ভবনের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ১ মে-র আগে স্বস্তি মিলবে না। মে মাসে তাপমাত্রা কিছুটা কমতে পারে। সেই সঙ্গে পূর্ব এবং দক্ষিণ ভারতের কোথাও কোথাও বৃষ্টির দেখাও মিলতে পারে। যদিও এখনও পর্যন্ত বৃষ্টি নিয়ে নিশ্চিত করে কিছু জানাননি আবহবিদেরা।