

সকাল থেকে আকাশের মুখভার। আজ চড়া রোদে অস্বস্তি উধাও। আগামী সাতদিন বাংলা জুড়ে চরম দুর্যোগের ঘনঘটা। একটানা তাণ্ডব চালাবে কালবৈশাখী। কয়েকটি জেলায় হবে ভারী বৃষ্টিও। একটানা ঝড়বৃষ্টিতে কমবে তাপমাত্রার পারদ। মে মাসের মাঝামাঝি বাংলায় দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার বড় অ্যালার্ট জারি করল হাওয়া অফিস।
ভ্যাপসা গরমে জেরবার বাংলার জন্যে অবশেষে কিছুটা আশার কথা শোনাল আলিপুর হাওয়া অফিস। বাংলার পরিস্থিতি বদলের জন্যে প্রয়োজন ছিল একটা ওয়েদার সিস্টেমের, যা কয়েক দিন ধরেই বলে আসছিলেন আবহবিদরা।

অবশেষে সেই ‘সিস্টেম’ তৈরি হয়েছে। উত্তরপ্রদেশ ও সংলগ্ন বিহারের উপরে তৈরি হওয়া ঘূর্ণাবর্তই আজ, বৃহস্পতিবার থেকে রবিবার পর্যন্ত বাংলার উত্তর ও দক্ষিণ দু’প্রান্তেই বৃষ্টি নামাতে চলেছে বলে জানাচ্ছেন আবহবিদরা। দমকা হাওয়া ও বজ্রবিদ্যুৎ–সহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকাতেও।
বিহার ও হিমালয় সংলগ্ন উত্তরবঙ্গের উপরে তৈরি ঘূর্ণাবর্ত এবং দক্ষিণে ঝাড়খণ্ড হয়ে ছত্তিসগড় পর্যন্ত একটি নিম্নচাপ অক্ষরেখাও বিস্তৃত হয়েছে। তারই প্রভাবে বাংলার আকাশে বজ্রগর্ভ মেঘের সঞ্চার হতে শুরু করেছে।

ওই মেঘই সামনের কয়েক দিন গোটা রাজ্যকে কিছুটা স্বস্তি দেবে বলে আশা করা হচ্ছে। হাওয়া অফিসের পূর্বাভাস মতো আজ, বৃহস্পতিবার পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ, নদিয়া, ঝাড়গ্রাম এবং পশ্চিম মেদিনীপুরে ঘণ্টায় ৫০–৬০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো বাতাস এবং বজ্রবিদ্যুৎ–সহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির লাল সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে খবর, আজ, বৃহস্পতিবার কলকাতার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৫.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২৯.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগামী ২৪ ঘণ্টা পর থেকে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের জেলাগুলিতে তাপমাত্রা ২ থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমবে।

কলকাতা–সহ দক্ষিণবঙ্গের বাকি আটটি জেলার প্রতিটিতেই ঘণ্টায় ৪০–৫০ কিলোমিটার গতিতে হাওয়া এবং বজ্রপাত ও হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। উত্তরবঙ্গের দার্জিলিং, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার ও কালিম্পংয়ে ঘণ্টায় ৩০–৪০ কিলোমিটার বেগে দমকা হাওয়া ও বিক্ষিপ্ত ভাবে ৭–১১ সেন্টিমিটার পর্যন্ত ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে।
শুক্রবার, ১৬ মে উত্তরবঙ্গের প্রতিটা জেলাতেই বৃষ্টির পরিমাণ বাড়বে। ওই দিন কলকাতা–সহ দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতেও বিক্ষিপ্ত ভাবে হালকা ও মাঝারি বৃষ্টি হবে বলে জানানো হয়েছে।
শনিবার, ১৭ মে দক্ষিণবঙ্গে মুর্শিদাবাদ, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া এবং দুই বর্ধমানে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি, বাকি জেলায় বিক্ষিপ্ত হালকা বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। শনিবার উত্তরবঙ্গের দার্জিলিং, কালিম্পং, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ারেও বজ্রবিদ্যুৎ–সহ হালকা থেকে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা। ১৮ তারিখ রাজ্যের প্রতিটি জেলাতেই হালকা বৃষ্টির সম্ভাবনা।
গত দু’দিন ধরে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্ষিপ্ত ভাবে বৃষ্টির পরেও রাজ্যের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নীচে নামেনি। আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর বুধবার যে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে, তাতেও দেখা যাচ্ছে—পুরুলিয়ার তাপমাত্রা ৪০.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

কিন্তু, আজ বৃহস্পতিবার থেকে টানা অন্তত চার দিনের আবহাওয়ার যে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে, তাতে আশা করা হচ্ছে জেলাগুলির সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কিছুটা হলেও কমবে।
আগামী সাতদিন উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতেও ঝড়বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। সব জেলাতেই বজ্রবিদ্যুৎ সহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। এর মধ্যেই দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহারের কয়েকটি এলাকায় ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। ঘণ্টায় ৪০ কিমি বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে। আগামী তিনদিন উত্তরবঙ্গের সব জেলায় জারি হলুদ সর্তকতা।