কলকাতার জলছবি: তুলেছেন রতন সিনহা৷
দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ দক্ষিণবঙ্গে দুর্যোগ অব্যাহত। শক্তিশালী নিম্মচাপে পরিণত হয়েছে ঘূর্ণাবর্ত। দক্ষিণবঙ্গে আজও বিক্ষিপ্ত ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। বৃষ্টির সঙ্গে ৩০-৪০ কিমি বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইবে। গতকাল রাত দুটোর পর থেকেই দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। একটানা বৃষ্টি এখনও চলছে। পশ্চিম বর্ধমান, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রামে দিনভর ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর পাশাপাশি কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের বাকি জেলাগুলিতেও আজ ভারী বৃষ্টি হবে বলে জানাচ্ছে হাওয়া অফিস।
প্রবল বৃষ্টিতে আহিরিটোলায় পুরনো বাড়ির একাংশ ভেঙে পড়ে। ধ্বংসস্তূপের ভিতর থেকে আট জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে এক শিশুও রয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, বুধবার সকাল সাড়ে ৬টা নাগাদ ৯ নম্বর আহিরিটোলা স্ট্রিটে দোতলা বাড়ির একাংশ ভেঙে পড়ে ৷ বিকট শব্দ শুনে ছুটে আসেন স্থানীয়রা এবং পুলিশে খবর দেন। সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে এসে উদ্ধারকাজ শুরু করে পুলিশ। আসে দমকল ও বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। ঘটনাস্থলে যান স্থানীয় বিধায়ক শশী পাঁজা, দমকল মন্ত্রী সুজিত বসু ও কলকাতার পুলিশ কমিশনার সৌমেন মিত্র৷
পুলিশ সূত্রে জানাগিয়েছে, বেশ কিছুক্ষণের চেষ্টায় প্রথমে এক দম্পতিকে উদ্ধার করা হয়। পরে চাঙড় সরিয়ে আরও দু’জনকে বার করে আনা হয়। ৪ জনকেই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তখনও ধ্বংসস্তূপের মধ্যে কয়েক জন আটকে ছিলেন। আরও কয়েক ঘণ্টার চেষ্টায় ১ শিশু-সহ আরও ৪ জনকে উদ্ধার করে পুলিশ। তাঁদেরও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পুরো বাড়িটিই বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ৷
টানা বৃষ্টিতে জেরবার গোটা দক্ষিণবঙ্গ। উপকূল সংলগ্ন জেলা গুলিতে রাত থেকেই শুরু হয়েছে তুমুল বৃষ্টি। সঙ্গে দোসর ঠান্ডা ঝোড়ো হাওয়া। এর মাঝেই বড় বিপত্তি পশ্চিম মেদিনীপুরে। দেওয়াল ধসে চাপা পড়ে মৃত্যু হল এক মহিলার। বুধবার সকালে মর্মান্তিক এই ঘটনার সাক্ষী থাকল চন্দ্রকোণা।
জানা গেছে একটানা বৃষ্টিতে মাটির দেওয়াল নরম হয়ে এসেছিল। হঠাৎই সেই দেওয়াল ধসে যায় এদিন সকালে। রাজ্যে দুর্যোগের বলি হলেন আরও একজন। মৃতের নাম প্রতিমা বাগ (৩৭)। তিনি চন্দ্রকোনা থানার করঞ্জি গ্রামের বাসিন্দা। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার সকালে গৃহপালিত পশুদের খাবার দিতে গিয়েছিল প্রতিমা। সে সময় বাড়ির একটি দেওয়াল ভেঙে পড়ে। স্থানীয়রা ছুটে গিয়ে উদ্ধার করেন। হাসপাতালে নিয়ে গেলে মৃত বলে ঘোষণা করে পুলিশ। ময়না তদন্তের পর দেহ তুলে দেওয়া হবে পরিবারের হাতে।
প্রসঙ্গত, দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুত প্রশাসন। কয়েকদিন আগেই বৃষ্টিতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে একের পর এক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে রাজ্যে। তাই এবার দুর্যোগ মোকাবিলায় তৎপর বিদ্যুৎ দপ্তর। বিদ্যুৎ ভবনে খোলা হয়েছে ২৪ x ৭ কন্ট্রোল রুম। ৩ দিন খোলা থাকবে এই কন্ট্রোল রুম। বিদ্যুৎ দপ্তরের অতিরিক্ত মুখ্য সচিবের তরফে থেকে সব জেলার জেলাশাসক, পুলিশ সুপার, কর্পোরেশন, জেলা পরিষদ ও সিইএসসি-কে পোস্ট, ফিডার বক্স, মিটার বক্স ও বিদ্যুতের তার যুদ্ধকালীন তৎপরতায় পরীক্ষা করার জন্য নির্দেশিকা পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। ট্রান্সফর্মার, ফিডার বক্স, সাব-স্টেশনে জল জমে থাকলে, সেখানে বিদ্যুৎ পরিষেবা বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া নিম্নচাপের জেরে আগামী কয়েকদিন দক্ষিণবঙ্গে তুমুল বৃষ্টি হবে তা নিয়ে আগেই সতর্ক করেছিল আবহাওয়া দফতর। সেই পূর্বাভাস মতোই বৃষ্টিতে ভাসছে কলকাতা-সহ দক্ষিণের জেলাগুলি। মঙ্গলবার রাত থেকেই বৃষ্টি শুরু হয়েছে। বুধবার দিনভর ভোগান্তি চলবে। এর মাঝে কলকাতার বিস্তীর্ণ অংশও জলমগ্ন। ভেঙে পড়েছে পুরনো বাড়ি। রাস্তার মাঝে উপড়ে পড়েছে গাছ। দুর্যোগ জারি জেলাতেও।
আলিপুরের হাওয়া অফিস বলছে, নিম্নচাপ ক্রমশ পশ্চিমে সরে যাচ্ছে। এর ফলে বাংলার পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলিতে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টি হবে।