দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ গত এক সপ্তাহ ধরেই কেমন যেন মন খারাপ করে দিচ্ছে সকালগুলো। মেঘলা আকাশের ভেজা শীতলতায় স্বজনবিয়োগ আরও শীতল করে দিচ্ছেন যেন। গত সপ্তাহে পর পর চলে গেলেন শাঁওলী মিত্র, পণ্ডিত বিরজু মহারাজ ও নারায়ণ দেবনাথ। সেই শোক এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি বাংলার শিল্প ও সংস্কৃতি জগৎ।
আজ থেকে আরও এক কর্মমুখর সপ্তাহের শুরু। অনেকেই হয়তো ইতিবাচক মন নিয়ে শুরু করেছিলেন। আর শুরুতেই ফের শোকের খবর এলো।
ফের নক্ষত্রপতন। মারা গেলেন বিখ্যাত চিত্রশিল্পী ওয়াসিম কাপুর। আজ, সোমবার বেলা ১১টা নাগাদ মারা যান তিনি। মৃত্যুর সময়ে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭১ বছর। প্রয়াণ সংবাদে শোকের ছায়া নেমে এসেছে শিল্পীমহলে।
মধ্য কলকাতার ওয়াটারলু স্ট্রিটে তাঁর বাড়ি। বড় পরিবার। মুক্তমনা এক শিল্পী ছিলেন ওয়াসিম। কেবল মুক্তমনাই নন, সরল ও মিষ্টি মানুষ। যেমনটা প্রকৃত শিল্পীর পরিচয়। সোমবার বাড়িতেই ব্রেন স্ট্রোকে মৃত্যু হয়েছে ওয়াসিমের। কাউকে সময় দেননি। তাঁর অকাল প্রয়াণে শোকের ছায়া শিল্প ও সংস্কৃতি জগতে। অনেকের কাছেই তাঁর মৃত্যু আচমকা শোকের মতো। মেনে নিতে পারছেন না প্রিয়জনেরা।
১৯৫১ সালে লখনউতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন শিল্পী। আর পাঁচ জন শিশুর মতো ছোটবেলা কাটেনি ওয়াসিমের। মাত্র ছ’মাস বয়সে খাট থেকে পড়ে গিয়ে বড় চোট পেয়েছিলেন তিনি। তারপর জীবনের প্রথম বারোটা বছর কাটে বিছানায়, প্লাস্টার বাঁধা অবস্থায়। কেবল হাসপাতাল আর বাড়ি। দু’বার বড় অপারেশনও হয়।
এই সময়ে বিছানায় শুয়েই কাটত ওয়াসিমের দিন। জানলা দিয়ে দেখতেন লোকজন, গাড়িঘোড়া। তখন থেকেই ছোট্ট ওয়াসিমের ইচ্ছা করত খাতার পাতায় ওইসব দৃস্য ধরে রাখতে। সেই সময়েই বাবার কাছে আবদার ছবি আঁকার। বাবা এনে দিয়েছিলেন কাগজ, পেন্সিল, রবার আর ক্রেয়ন রঙ। শুয়ে শুয়েই ছবি আঁকতেন ওয়াসিম।
সেইসময়ে তাঁর আঁকার প্রতি আগ্রহ দেখে বাবা অমর নন্দন নামের একজন অঙ্কণশিক্ষককে নিয়ে আসেন। তাঁর হাত ধরেই আঁকা শেখা শুরু ওয়াসিমের। তবে পরবর্তী কালে দেবীপ্রসাদ রায় চৌধুরী, অতুল বসু, যামিনী রায়, মকবুল ফিদা হুসেন, পরিতোষ সেন, বিকাশ রায়, গোপাল সান্যাল, চিত্ত দাস– প্রমুখ বহু চিত্রশিল্পীর সান্নিধ্য পান তিনি। তবে সেই প্রথম শুরু সময়ের অমর নন্দন স্যারের সান্নিধ্য ভুলতে পারেননি কোনওদিন।
তাঁরই সহযোগিতায় পনেরো বছর বয়সে আর্ট কলেজে। দু-বগলে ক্রাচ নিয়েই পৌঁছেছিলেন সেখানে। সঙ্গে ছোট্ট চামড়ার বাক্স ভর্তি রঙ। সেই প্রথম বাড়ির বাইরের জগতে পা রাখা। তার পরে রংতুলির ডানায় ভর করে খুলতে থাকে নতুন এক দুনিয়া। প্রথম বর্ষেই তাঁর আঁকা ছবি প্রদর্শনীতে জায়গা করে নেয়।
এর পরে আর পিছন ফিরে দেখতে হয়নি তাঁকে। একের পর এক প্রদর্শনীতে প্রশংসা আদায় করতে থাকেন তিনি। আজ দেশ-বিদেশের আঙিনায় তাঁর ছবি সুসজ্জিত রয়েছে। এ দেশের সংসদে, উর্দু অ্যাকাডেমিতে, ললিতকলা অ্যাকাডেমি ও আরও নানা জায়গায় তাঁর আঁকা ছবির সংগ্রহ রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভায় তাঁর আঁকা জ্যোতি বসুর তৈলচিত্র রয়েছে।