ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদে অশান্ত বাংলা। দিকে দিকে চলছে প্রতিবাদ। একেবারে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি মুর্শিদাবাদে। ব্যাপক অশান্তির ছবি দেখা যাচ্ছে সুতি, ধুলিয়ান, সামশেরগঞ্জের মতো এলাকাগুলিতে। অন্যদিকে অশান্তির ছবি দেখা যাচ্ছে জঙ্গিপুর, আমতলা, চাঁপদানিতেও। তছনছ করা হয়েছে রেলের সম্পত্তি। রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার যদিও বলছেন, পুলিশকে হালকাভাবে নেবেন না। কঠোরভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে সদা তৎপর রয়েছে পুলিশ। এরইমধ্যে এবার শান্তির বার্তা দিতে দেখা গেল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। এক্স হ্যান্ডেলে করলেন পোস্ট।
সম্প্রতি সংসদের দুই কক্ষে ওয়াকফ সংশোধন বিল পাশ হয়েছে। রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু সই করার পর তা এখন আইনে পরিণত হয়েছে। যে আইনকে কেন্দ্র করে বিক্ষিপ্ত ভাবে প্রতিবাদ, প্রতিরোধ ও হিংসার আগুন জ্বলছে বাংলায়। এহেন পরিস্থিতিতে শনিবার দুপুরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পরিষ্কার ভাবে জানিয়ে দিলেন, ওয়াকফ সংশোধন আইন বাংলায় লাগু হবে না।
মুখ্যমন্ত্রীর কথায়,“আমরা এ বিষয়ে আমাদের বক্তব্য সুস্পষ্টভাবে বলেছি – আমরা এই আইনকে সমর্থন করিনা। এই আইন আমাদের রাজ্যে লাগুও হবে না। তাহলে দাঙ্গা কিসের?”
এ ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, “মনে রাখবেন, যে আইনের বিরুদ্ধে অনেকে উত্তেজিত, সেই আইনটি কিন্তু আমরা করিনি। আইনটি কেন্দ্রীয় সরকার করেছে। তাই উত্তর যা চাওয়ার কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে চাইতে হবে”।
তবে মমতা একথা বললেও একটা বৃহত্তর প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। তা হল, কেন্দ্র নয়া আইন পাশ করার পর রাজ্য কি তা লাগু না করে থাকতে পারে। কেন্দ্রের আইনটি কি শুধু রাজ্যকে পথ দেখানোর জন্য? রাজ্যর কি এক্তিয়ার আদৌ রয়েছে তা না মানার?
এ বিষয়ে আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, “সেন্ট্রাল অ্যাক্ট লাগু হয়ে গেলে রাজ্যের নতুন করে কিছু আইন আনার এক্তিয়ার নেই।”
আবার অনেকের মতে, যেহেতু ল্যান্ড তথা জমি রাজ্যের বিষয়। তাই রাজ্যের সেই অধিকার রয়েছে।
সংসদে ওয়াকফ সংশোধন আইন পাশ করাটা বড় রাজনৈতিক জয় হিসাবেই দেখছেন নরেন্দ্র মোদীরা। অনেকের মতে, আইনের মূল লক্ষ্যই হল ওয়াকফ সম্পত্তিকে ঘিরে কিছু সংখ্যালঘু মাতব্বরের মাতব্বরি ও দুর্নীতি বন্ধ করা। আর মোদী সরকারের বক্তব্য, এই আইনের উদ্দেশ্য ও বিধেয় পরিষ্কার। তা হল, ভারতে ওয়াকফ সম্পত্তি ব্যবস্থাপনায় এক ধর্মনিরপেক্ষ, স্বচ্ছ কাঠামো গড়ে তোলা। ওয়াকফ সম্পত্তিগুলি যদি ধর্মীয় ও জনহিতকর উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়, তবে এগুলির ব্যবস্থাপনায় আইনি, আর্থিক ও প্রশাসনিক দায়-দায়িত্ব জড়িয়ে থাকে। সেই দায় সুনিশ্চিত করে একটি সুশৃঙ্খল শাসন কাঠামোর প্রয়োজন ছিল। সেটাই করা হয়েছে।
কেন্দ্রের এও বক্তব্য, ওয়াকফ বোর্ডসমূহ এবং কেন্দ্রীয় ওয়াকফ পরিষদ -এর ভূমিকা ধর্মীয় নয়, বরং নিয়ন্ত্রকের। সংশোধিত আইনের মাধ্যমে শক্তিশালী নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, সংশ্লিষ্ট অংশীদারদের ক্ষমতায়ন এবং প্রশাসনিক স্বচ্ছতা এনে ওয়াকফ ব্যবস্থাপনাকে আধুনিক, ন্যায়সঙ্গত ও কার্যকর করে তোলা হবে।
তবে সংসদে পাশ হওয়া ওই আইনের সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে তৃণমূল কংগ্রেস। দলের সাংসদ মহুয়া মৈত্র এ ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করেছেন। তাঁর বক্তব্য, নতুন আইনটি পাশে প্রক্রিয়াগত ত্রুটি ছিল। তা ছাড়া সংশোধিত আইনটি ভারতের সংবিধানের মৌলিক ধারাগুলিকে লঙ্ঘনের মাধ্যমে প্রণয়ন করা হয়েছে। তাঁর মতদে, এই আইন সংবিধানের ১৪ নম্বর অনুচ্ছেদ (আইনের দৃষ্টিতে সমতা), ১৫(১), ১৯(১)(ক) ও (গ) (মতপ্রকাশ ও সংগঠনের স্বাধীনতা), ২১ (জীবন ও ব্যক্তিগত স্বাধীনতার অধিকার), ২৫ ও ২৬ (ধর্মাচরণের অধিকার), ২৯ ও ৩০ (সংখ্যালঘুদের সাংস্কৃতিক ও শিক্ষাগত অধিকার), এবং ৩০০এ (সম্পত্তির অধিকার)– এইসব গুরুত্বপূর্ণ ধারাগুলিকে লঙ্ঘন করেছে।
মমতার সাফ কথা, “কিছু রাজনৈতিক দল ধর্মকে অপব্যবহার করে রাজনৈতিক সুবিধা নিতে চাইছেন। তাদের প্ররোচনায় পা দেবেন না।” তিনি আরও লিখছেন, “সব ধর্মের সকল মানুষের কাছে আমার একান্ত আবেদন, আপনারা দয়া করে শান্ত থাকুন, সংযত থাকুন। ধর্মের নামে কোনও অ-ধার্মিক আচরণ করবেন না। প্রত্যেক মানুষের প্রাণই মূল্যবান, রাজনীতির স্বার্থে অশান্তি করবেন না। অশান্তি যারা করছেন তারা সমাজের ক্ষতি করছেন।”
https://x.com/MamataOfficial/status/1910971726877405560?t=E1ih_pFJuLmJQtmXR6t2Tw&s=19