বিশ্বকর্মা পুজো মানে দুর্গাপুজোর আনন্দ ঘুড়ির মতো আকাশে ডানা মেলে ওড়ার দিন শুরু। কিন্তু, এবছর যেন কেমন আগমনির আগেই বিজয়ার সুর ভেসে বেড়াচ্ছে কলকাতা শহর থেকে শহরতলির আনাচেকানাচে।
কলকাতার মন খারাপ। তাই তার রেশ লেগেছে বিশ্বকর্মা পুজোতেও। শিল্প-কারখানা, কারিগর দেবতার পুজো তাই নমো নমো করে চলছে শিল্পশহরগুলি সহ গোটা বাংলাতেই। দেখুন ভিডিও
তার উপরে তিনদিন ধরে মুখকালো আকাশেরও I তাই ব্যবসায়ীদের পুঁজিতে লেগেছে টান। বিশেষত আর জি কর কাণ্ড নিয়ে শহর কলকাতা থেকে সীমান্ত শহর বনগাঁ তথা গোটা বাংলা যেভাবে তেতে রয়েছে, তার ছাপ পড়েছে পাড়ার গলির মুখে থাকা রিকশ ও অটো স্ট্যান্ডগুলিতেও। সব মিলিয়ে উমার আগমনের আগে উৎসবের গা-ঘামানোর ম্যাচ বিশ্বকর্মা পুজো কেমন সোঁদাপড়া কালি পটকার মতো ফুসফুস করে জ্বলছে, ফাটতে চেয়েও ফাটছে না।
কোভিডকাল বাদ দিলে অন্যান্যবার বিশ্বকর্মা পুজোতে দুর্গাপুজোর স্বাদ মেলে হুগলি নদীর দুই কূল সহ আসানসোল, দুর্গাপুর, রানিগঞ্জ, মেদিনীপুর, হলদিয়া, কল্যাণী এলাকায়। এমনিতেই রাজ্যে শিল্পের হাল খুবই শোচনীয়। বহু বড় বড় শিল্প হয় বন্ধ হয়ে গিয়েছে, নয়তো ধুঁকছে। তাই যেসব কারখানায় এক সময় বিরাট আকারে বিশ্বকর্মা পুজো হতো, সেখানে এখন জোনাকিও জ্বলে না। এই মরা শিল্পের বাজারে বিশ্বকর্মা বেঁচে রয়েছেন আদতে বাস গুমটি, রিকশ, অটো-টোটো স্ট্যান্ড এবং ক্ষুদ্রশিল্পগুলির কুটীরঘরে।
বাজার ঘুরে দেখা গেল, এ বছর বিশ্বকর্মা পুজোয় তেমন কোনও টান নেই। প্রতিমার দামে খুব একটা হেরফের আসেনি। তিন ফুট থেকে সাত ফুট উচ্চতার প্রতিমা দেড় থেকে তিন-সাড়ে তিন হাজারের মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। তিনদিন বৃষ্টির পরেও ফুলের বাজারে যে আগুন জ্বলার আশঙ্কা করা গিয়েছিল তাও তেমন একটা নেই। পাইকারি বাজারে মোটামুটি ১৪০-১৫০ টাকা কেজিতে প্রায় সব ফুলই মিলছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, মঙ্গলবার বিশ্বকর্মা পুজো তারপর দুর্গা পুজোর আর দিন কয়েক বাকি। তাই গৃহস্থ থেকে খেটেখাওয়া শ্রমিক-মজদুর সকলেই এখন সামান্য হলেও কেনাকাটা করতে ব্যস্ত।
ফলে, বিশ্বকর্মার ঘুড়িতে একটু টান রেখে সংসারের ভোঁকাট্টা হয়ে যাওয়া বাঁচাতে শক্ত হাতে লাটাই মুঠোয় চেপে ধরেছেন আমবাঙালি।