কেউ কি ভেবে দেখেছেন, স্টুডিও ঘিবলি স্টাইলে উত্তম-সুচিত্রার কোনও ছবি রূপান্তরিত করা হলে তা দেখতে কেমন হবে? সপ্তপদী সিনেমার সেই ‘পথ যদি না শেষ হয়’ গানের সঙ্গে যে আইকনিক বাইক যাত্রা, সে ছবি এআই-এর কাছে দিতেই মিষ্টি ঘিবলি-রূপ পাওয়া গেল। দেখে নিন সেই ছবি।
জাপানের কিংবদন্তি শিল্পী হায়াও মিয়াজাকির অনন্য শিল্পশৈলীর অ্যানিমেশন স্টুডিও ঘিবলি-র ছবির স্টাইল হঠাৎই খুব ভাইরাল হয়ে পড়েছে। তার প্রভাব এখন এআই জগতে ছড়িয়ে পড়েছে। নরম, স্বপ্নিল ব্যাকগ্রাউন্ড, আবেগপ্রবণ চরিত্রের মজার চিত্রণ এবং মায়াবী পরিবেশের জন্য পরিচিত এই স্টাইল সোশ্যাল মিডিয়ায় রীতিমতো ঝড় তুলেছে।
ব্যবহারকারীরা এআই-জেনারেটেড ইমেজ ব্যবহার করে নিজেদের ও জনপ্রিয় দৃশ্যগুলিকে ঘিবলি স্টাইলে রিমেক করছেন। শুধু নিজেদের ছবি নয়, সিনেমার দৃশ্য থেকে খেলার ফ্রেম– কোনও কিছুই আর ঘিবলিতে রূপান্তর করতে বাকি রাখেনি মানুষ।

কিন্তু কেউ কি ভেবে দেখেছেন, স্টুডিও ঘিবলি স্টাইলে উত্তম-সুচিত্রার কোনও ছবি রূপান্তরিত করা হলে তা দেখতে কেমন হবে? সপ্তপদী সিনেমার সেই ‘পথ যদি না শেষ হয়’ গানের সঙ্গে যে আইকনিক বাইক যাত্রা, সে ছবি এআই-এর কাছে দিতেই মিষ্টি ঘিবলি-রূপ পাওয়া গেল।
দেখুন সেই ছবি।


ছবি দেখে অনেকেরই প্রশ্ন, এই ছবি আদৌ উত্তম-সুচিত্রার মতো হয়েছে কি? উত্তরটা সরাসরি দেওয়া যায়, না। হয়নি। এমনকি আসল ছবিটার কথা না বলে যদি কেবল এই ছবি সামনে রাখা যায়, তাহলে হয়তো অনেকে বুঝতেও পারবেন না, এই ছবি উত্তম-সুচিত্রার বলে!
অনেকেই অভিযোগ করছেন, প্রথম প্রথম ঘিবলি ছবিগুলি আরও যত্ন নিয়ে বানাচ্ছিল এআই। এখন অতিব্যবহারেই হোক বা ছবির চাপেই হোক, ঘিবলি স্টাইলে বানানো ছবিগুলি বেশ সাধারণ মানের হতে শুরু করেছে। চরিত্রগুলি যেন কোনও রকমে এঁকে দেওয়া হচ্ছে।

অভিযোগ মিথ্যে নয়। কারণ ব্যবহারকারীদের আকাশছোঁয়া উন্মাদনার কারণে ওপেনএআই-এর সার্ভারে চাপ বেড়ে যাওয়ায়, চ্যাটজিপিটি-র সিইও স্যাম অল্টম্যান এক্স-এ পোস্ট করে লিখেছেন, ‘তোমরা একটু কম ছবি বানাতে পারবে? এটা অবিশ্বাস্য! আমাদের টিমেরও ঘুম দরকার।’
এই বক্তব্য থেকেই বোঝা যাচ্ছে, চাহিদা এতটাই বেড়েছে যে ওপেনএআই-এর ইঞ্জিনিয়াররা বিশ্রাম নিতেও পারছেন না।

হায়াও মিয়াজাকি ও ইসাও তাকাহাতার প্রতিষ্ঠিত স্টুডিও ঘিবলি তাদের হ্যান্ড-ড্রন অ্যানিমেশন ও দৃষ্টিনন্দন চিত্রকল্পের জন্য বিশ্বজুড়ে সমাদৃত। Spirited Away, My Neighbor Totoro, Howl’s Moving Castle-এর মতো কালজয়ী সিনেমাগুলো ঘিবলির অনন্য শৈলীর নিদর্শন। প্রতিটি সিনেমার এক একটি দৃশ্য আঁকতে পর্যন্ত অনেকটা করে সময় লাগে! উদাহরণস্বরূপ, The Wind Rises-এর এক ব্যস্ত বাজারের দৃশ্য হ্যান্ড-পেইন্টেড ওয়াটার কালারে তৈরি হতে এক বছরেরও বেশি সময় লেগেছিল।
২০২৪ সালে, হায়াও মিয়াজাকি রামন ম্যাগসাইসাই পুরস্কারে সম্মানিত হন, যা তাঁর অবিস্মরণীয় কাজের স্বীকৃতি। তবে তাঁর স্টুডিও ঘিবলির মায়াবী শৈলী এখন শুধু অ্যানিমেশনে সীমাবদ্ধ নেই। সোশ্যাল মিডিয়ায় এটি একটি নস্টালজিক ট্রেন্ড হয়ে উঠেছে, যেখানে ব্যবহারকারীরা এআই ব্যবহার করে নিজেদের ছবি ও দৃশ্যগুলোকে ঘিবলি স্টাইলে রূপান্তর করছেন।

কিন্তু এই প্রবণতা এতটাই দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে যে ওপেনএআই-এর সার্ভারগুলো প্রায় ধসে পড়ার উপক্রম। অল্টম্যানের বার্তা থেকে স্পষ্ট, প্রযুক্তিগত সক্ষমতার বাইরে গিয়ে মানুষের সৃজনশীলতার নতুন তরঙ্গ এআই জগতে ব্যাপক প্রভাব ফেলছে!