দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ব্যালট ছাপা হয়েছে বাংলা ভাষায়! চমকে উঠলেন তো? হ্যাঁ, আশ্চর্য মনে হলেও সত্যি। আমেরিকার নিউইয়র্ক শহর, যেখানে অন্তত ২০০ ভাষাভাষির মানুষ বাস করেন, সেখানেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য ইংরেজি ছাড়াও আর যে চারটি ভাষায় ব্যালট ছাপা হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে বাংলা। শুধু তাই নয়, গর্বের বিষয় হল, ভারতীয় ভাষার মধ্যে একমাত্র নিউইয়র্কে ভোটের ব্যালটে একমাত্র ঠাঁই পেয়েছে বাংলা।
মার্কিন মুলুকে বাংলা ভাষার এই জয়জয়কারকে অনেকেই বলছেন ঐতিহাসিক। মার্কিন প্রশাসন সূত্রে খবর, নিউইয়র্কে ইংরেজি ছাড়াও স্প্যানিশ, চাইনিজ, কোরিয়ান এবং এশিয়ান ভাষা হিসেবে বাংলায় ভোটের ব্যালট ছাপা হয়েছে। নিউইয়র্কের বাংলাভাষী জনসংখ্যার মধ্যে যেমন ভারতীয়রা রয়েছেন, তেমনই রয়েছেন বাংলাদেশিরা। ব্যালটে বাংলা ভাষার অন্তর্ভুক্তি, নিউইয়র্কে থাকা বাংলা ভাষাভাষী মানুষজনকে ভোটদানে বাড়তি উৎসাহ জোগাবে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
রাত পোহালেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এবার লড়াই সেয়ানে সেয়ানে। শেষ মুহূর্তে যা কিছু ঘটতে পারে। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হলেও এবারের ভোটে বাংলাদেশে অস্থিরতা, ইজরায়েল প্যালেস্তাইন সংঘাত, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সরাসরি প্রভাব ফেলেছে। ভারতে ভোটের রাজনীতিতে হিন্দু ও মুসলিম এই দু’টি শব্দ যেভাবে ঘুরপাক খাচ্ছে, মার্কিন ভোটও সেই একই অক্ষরেখায় এবার পড়ে গেল বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ, রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ইতিমধ্যেই ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিসকে হিন্দু বিদ্বেষী বলে তোপ দেগেছেন।
বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর নির্যাতনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করতেও ছাড়েননি তিনি। ট্রাম্প অবশ্য এখানেই থামেননি, অতি দক্ষিণপন্থীদের ঢঙে কমলা হ্যারিসকে র্যাডিক্যাল লেফট বা অতি বামেদের মদতদাতা বলে নিশানা করতেও ছাড়েননি। ট্রাম্প জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি হোয়াইট হাউসে ফিরলে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে শুধু নয়াদিল্লি এবং ওয়াশিংটনকে কাছে টানবেন না, উদ্যোগী হবেন হিন্দুদের স্বার্থরক্ষায়।
বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ইজরায়েল নীতি এবং ‘ইহুদি বধূ’ কমলা হ্যারিসের প্যালেস্তাইন নিয়ে মুখ না খোলা মার্কিন প্রবাসী মুসলিমদের যথেষ্টই বিরক্ত করে রেখেছে। বিশেষ করে আরব মুসলিমদের। ডেমোক্র্যাট দলে যাঁরা প্রগতিশীল বলে পরিচিত, তাঁরা গত কয়েক মাসে বেশ কয়েকটি নির্বাচনে হেরেছেন ইহুদি লবির কাছে। সেকারণে ২০২০ সালে যেমন আরব মুসলিমরা উজাড় করে ডেমোক্র্যাটদের ভোট দিয়েছিলেন, এবার তেমন হওয়ার সম্ভাবনা কম বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সেক্ষেত্রে মুসলিমরা যদি সত্যিই মুখ ফিরিয়ে নেন, তাহলে স্যুইং স্টেট থেকে কমলা হ্যারিসের জেতা মুশকিল। আরও একটি ফ্যাক্টর মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কাজ করছে।
মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট গর্ভপাত নিষিদ্ধ করে দেওয়ার পর সেদেশে মহিলাদের মধ্যে রিপাবলিকান বা সেদেশের রক্ষণশীলদের উপর যে পরিমাণ ক্ষোভ রয়েছে, তার যদি বহিঃপ্রকাশ ঘটে, তাহলে কমলা হ্যারিসের হোয়াইট হাউসে পৌঁছে যাওয়া এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। এছাড়াও কৃষ্ণাঙ্গ মহিলা ও অনাবাসী এশিয়দের মধ্যে সমর্থনের দিক থেকে কমলা হ্যারিস অনেকটাই এগিয়ে রয়েছেন। শেতাঙ্গ মহিলাদেরও একাংশের সমর্থন পাবেন তিনি। এটা বলা যেতেই পারে, পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনের মতো আমেরিকায় যদি মহিলাদের ভোট নির্ণায়ক শক্তি হয়, সেক্ষেত্রে কমলা হ্যারিসের জয় অনিবার্য। কিন্তু তা কি হবে? অঙ্কটা এত সহজ নয়।
পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী, এলন মাস্ক অনেকটা ভোট কৌশলী প্রশান্ত কিশোরের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে ট্রাম্পের সমর্থনে প্রচারে নেমে যাওয়াও মার্কিন ভোটে এবার অন্যতম ফ্যাক্টর। এলন মাস্ক যে পলিটিক্যাল অ্যাকশন কমিটি তৈরি করেছেন, তাঁরা স্যুইং স্টেটগুলিতে ট্রাম্পের হয়ে প্রচার করে খেলা কতটা ঘোরাতে পারেন, তার উপরেই নির্ভর করছে হিসেব নিকেশ। তবে ফলাফল যাই হোক না কেন, আমেরিকায় তৃতীয় পক্ষ এভাবে কোনও প্রার্থীর হয়ে প্রচারের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছে, এমন ঘটনা কিন্তু অভাবনীয়।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এলন মাস্কের তৈরি করা পলিটিক্যাল অ্যাকশন কমিটি কত টাকা ঢালছে? এনিয়ে অবশ্য মার্কিন সংবাদপত্রগুলিও স্পষ্ট করে কোনও তথ্য দিতে পারছে না। ওই কমিটি আমেরিকার কত ভোটারের কাছে পৌঁছতে পারল, কতজনকে প্রভাবিত করতে পারল, সেটাই এখন লাখ টাকার প্রশ্ন। তবে এসব হিসেবনিকেশের মধ্যেই নিউইয়র্কের মিছিল থেকে পুয়ের্তো রিকো-র অধিবাসীদের সম্পর্কে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জাতিবিদ্বেষী রসিকতা এবং আচমকা জো বাইডেনের রিপাবলিকান সমর্থকদের আবর্জনা বলা নিয়েও প্রকাশ্যে ও আড়ালে চর্চা চলছে। ট্রাম্পের এই আলটপকা মন্তব্যের প্রভাব ভোটের বাক্সে কতটা পড়ল, সেটাও দেখার।
শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, জনমত সমীক্ষা বলছে, কমলা হ্যারিস ডোনাল্ড ট্রাম্পের থেকে মাত্র এক পয়েন্টে এগিয়ে রয়েছেন। তবে লড়াই টানটান। তথ্য বলছে, সাতটি স্যুইং স্টেটের মধ্যে পাঁচটিতে ট্রাম্পের পাল্লা ভারী। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কমলা হ্যারিস মিশিগান ও উইসকনসিন স্টেট দু’টিতে এগিয়ে রয়েছেন। কিন্তু তাঁকে যদি হোয়াইট হাউসে পৌঁছতে হয়, সেক্ষেত্রে শুধু এই দু’টি স্টেটে জিতলেই হবে না, কমলাকে জিততে হবে পেনসিলভেনিয়াও।