অর্পিতা বনিক, বনগাঁ : যে-গাছ ছায়া দেয়, যে-গাছে পাখির আশ্রয় তার বংশবৃদ্ধির দরকার। পাশাপাশি বৃক্ষ রোপণের উদ্যোগেই উত্তর২৪পরগনার বনগাঁর ঢাকা পাড়ায় বট-অশ্বত্থের বিয়ে দিল স্থানিয়বাসিন্দারা৷
প্রায় ১৬ বছর আগের কথা বনগাঁর ঢাকা পাড়ার বাসিন্দা শিখা বসু দেবী সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখেন তাঁদের বাড়ির উঠোনে দুটো গাছের চারা উঠেছে। তারপর জানতে পারেন একটি বট অন্যটি অশ্বত্থ ৷
এর পর প্রায় ১৬ বছর ধরে ধীরে আশ্চর্যজনক ভাবে ওই বটগাছের পাশেই অশ্বত্থ গাছটিও বেড়ে উঠেছে৷ দুজনের বয়স প্রায় ১৬ বছর হয়ে গিয়েছে।
এলাকার অনেক বয়স্ক মানুষ এই বট ও অশ্বত্থ গাছ দেখে বিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দেন। তারপরই ফোনে ফোনে নিমন্ত্রণপর্বও সারা হয়েছে কয়েকদিন আগেই ছেলের বাবা মহাদেব কুণ্ডু ও মেয়ের মা শিখা বসু উদ্বিগ্নছিলেন এই বিয়ে নিয়ে৷ তাই তড়িঘড়ি পুরোহিত খোঁজেন ৷ পুরোহিত ছেলের নাম দিয়েছেন ভোলা ও মেয়ের নাম পার্বতী । প্রায় ৩০০ লোক নিমন্ত্রিত। শুধু দুই বাবা মা ই নন, স্থানীয় বাসিন্দাদের উদ্যোগেই বসেছিল বিয়ের আসর ৷ দেখুন ভিডিও
স্থানীয় দুজন পুরোহিত বিপুল ব্যানার্জি, ও সুকান্ত মুখার্জি। বিয়ের মন্ত্র পড়াতে রাজি হন। তবে পুরোহিতরা তাঁদের বলেন, আর পাঁচটা বিয়ের মতোই বট ও অশ্বত্থকে বিয়ে দিতে হবে। কারণ ওটাই বিয়ের রীতি। উদ্যোক্তারাও আর পিছিয়ে আসেননি। পুরোহিতদের কথা মতো তাঁরাও ছেলে মেয়ের বিয়ের জোগাড় করতে নেমে পড়েন।
বিয়ের দিন রবিবার সারাদিন বর ও কনের বাবা ও মা উপোস থাকতে হবে জেনেও এহেন বিয়ের আয়োজনে তাঁরা বেজায় খুশি। মেয়ের মা শিখা দেবী বলেন, ‘কোনওরকম যৌতুক ছাড়াই তিনি তাঁর কন্যা পার্বতীকে পাত্র ভোলার হাতে দান করেন। বট-অশ্বত্থের বিয়েতে পরিবেশ হবে দূষণমুক্ত।’ পাত্রর বাবা মহাদেব কুন্ডু জানিয়েছেন, হাসি মুখে বৌমা পার্বতীকে গ্রহণ করেছেন তিনি।
নিয়ম মেনে বর কনের বাবা ও মা ঠিক করা হয় ৷ শিখা দেবীর বাড়িতেই উঠোন জুড়ে তৈরি করা হয় বিয়ের মণ্ডপ। বট পড়েছে শাড়ি। অশ্বত্থের গায়ে উঠেছে ধুতি। কারণ ৯ জুলাই রবিবার ওদের বিয়ের দিক্ষণঠিক হয় ৷ সেই মতো এদিন সন্ধ্যায় গোধূলি লগ্নে বিয়ের আসর বসে ছিলব্যান্ড পার্টি। কিন্তু তার আগে সকালে আর পাঁচটা বিয়ের মতো হয় জলদান পর্ব। মহিলারা ফুলে সাজানো গাড়ি নিয়ে ব্যান্ড পার্টির সানাইয়ের তালে তালে যান জল তুলতে। সারা হয় গায়ে-হলুদ পর্বও।
প্রায় ৩০০ নিমন্ত্রিতের জন্য পাত পেড়ে খিচুড়ি, সব্জির ঘ্যাঁট, চাটনি, পাপড় ও পায়েসের ব্যবস্থা ছিল। সকাল থেকে রাত বিয়ে শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্যাণ্ডেলে বাজল বিয়ের সানাই। উলুধ্বনিতে মুখোরিত হল বনগাঁর ঢাকা পাড়া এলাকা৷ বট ও অশ্বত্থের বিয়ের উদ্যোক্তারা বলেন, বট ও অশ্বত্থের বিয়ে হলে পরিবেশ বাঁচে। বিয়ের বাজেট প্রায় লক্ষ টাকা।