
লড়াইয়ের অপর নাম টুম্পা! স্বপ্ন দেখে ডব্লবিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর
সংসারের বোঝা তাঁর দুই কাঁধে। বইয়ের ভারে ঝুঁকে পড়লেও, সেই বোঝা কাঁধে নিয়ে মাথা উঁচু করে দিব্যি প্রতিদিন কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। হাসি মুখে বয়ে চলেছেন পাঁচটি মানুষের দায়িত্ব। সয়ংসিদ্ধা সেই মেয়ের গল্পই রইল দেশের সময় – অনলাইন এ।
রাস্তা দিয়ে যেতে গিয়ে হঠাৎই চোখে পড়ে গায়ে সুতির কালো রঙের টি শার্ট লেপ্টে, এক গাল হাসি মুখে রুটি বিক্রি করছেন। রুটিতো অনেকেই বিক্রি করে সংসার চালান। তিনি কেন বিশেষ?

তাঁর কাছে আরও দু পা এগিয়ে যেতেই উত্তরটা মিলল ।
কেন এই পেশায় এলেন? প্রশ্ন করতেই লজ্জা জড়ানো হাসি নিয়ে বলে ফেললেন, নাম টুম্পা রায়। বাড়ি বনগাঁর শিমুলতলা। ছয়ঘরিয়া ঠাকুরহরিদাস গার্লস স্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্রী। ‘সংসারে তো আর কেউ কিছু করে না। বাবার মৃত্যুর পর আয় নেই বললেই চলে। সংসার সামলাতে তাই রুটি বিক্রি শুরু।’ ইউটিউব -এ দেখেছি বিভিন্ন ধরনের খাবার তৈরীর পদ্ধতি । তারপরই এভাবেই এই পরিকল্পনা মাথায় আসে।
বনগাঁ মতিগঞ্জের ঘড়ি মোড়ের কাছে মিলিটারী রোডের পাশে ছোট্ট একটি চার বাই ছয় এর ঘর ভাড়া নিয়ে সেখানেই নিজের হাতে আটা দিয়ে তৈরি রুটি বিক্রি করেন টুম্পা।
কিভাবে শুরু করেছিলেন ?
টুম্পার পাশের টুলে রাখা ক্লাসের ইংরেজি বইতে চোখ বোলাতে – বোলাতে জানান, ইংরেজি পড়তে বেশি ভাল লাগে । সময় পেলেই পড়ি । কাজ শুরুর কথা দুঃশ্চিন্তার বোঝা নিয়ে মাথায় এসেছিল দেড় বছর আগে বাবার মৃত্যুর পর । মায়েরও শরীর ও খুব ভালো নয় , দেখে কষ্ট হত। বেশি কষ্টের কাজ তিনি করতেও পারতেন না। চলছিল না সংসারও। তখনই ভাবেন এই রুটি বিক্রির কথা।
বয়স কম হলেও মন শক্ত করে নেয় টুম্পা। তারপর থেকে রুটিই এখন রুজির এক মাত্র পথ। ব্যবহার ও হাসির জোরে এখন অনেকেই তাঁকে চেনেন। হাঁক পাড়তে হয় না সে অর্থে।স্থানীয় ব্যাবসায়ী থেকে শুরু করে পথ চলতি টোটো চালক সহ অসংখ্য মানুষ তাঁর কাছে পৌঁছে যান তাঁদের পেটের টানে, টুম্পার হাতের তৈরী রুটি খেয়ে ক্ষিদা মিটছে তাঁদেরও ।
টুম্পার কথায় সকাল থেকে রাত পর্যন্ত যা বিক্রি করেন তা নিয়েই খুশি হওয়ার চেষ্টা করেন।
সংসার চলে? প্রশ্নের উত্তরে টুম্পার অকপট শিকারোক্তি, ‘না’। তাহলে এই কাজ করেন কেন? উত্তর একটাই, ‘সংসারে আর যে কেউ করার নেই। তার উপরে নিজের পড়ার খরচ চালাইতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে । এখন সবে ক্লাস নাইনে পড়ছি প । ডব্লুবিসিএস(WBCS) পরীক্ষায় বসতে চাই।’
স্কুলে যেতে হবে সময়ের অভাবেই তাই আর বেশি কথা বলতে পারলেন না। অনুমতি নিয়ে আবারও চওড়া হাসি দিয়ে রুটি পরিবেশনে ব্যস্ত হয়ে পড়েন টুম্পা।

স্থানীয় ব্যবসায়ী জয়ন্ত সরকার , টোটো চালক লক্ষণ দাস , নারায়ণ সাহা ও শান্তনু নস্করা জানান টুম্পার হাতের রুটিতে শুধু আমাদের পেট ভরে তাই না ,ওর ব্যবহারে মনও ভরে যায় ।

টুম্পার মা সাধনা রায়ের কথায়, বাড়িতে বড় মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। তাঁরা এই মুহূর্তে সে ভাবে উপার্জন করে না। সংসারের বোঝা কাঁধে নিয়ে এই বয়সে রোজ খেটে চলেছে ছোট্ট মেয়ে টুম্পা ।

তাই মা হয়ে ওর সব কাজে হাত বাড়িয়ে দিই । যাতে ওর পড়ার কোন ক্ষতি না হয়।
টুম্পার লড়াই নিঃসন্দেহে বহু মানুষের কাছে অনুপ্রেরণা। নারীদিবসে টুম্পাদের কুর্নিশ জানাচ্ছে দেশের সময়।