দেশের সময় ৫১ সতীপীঠের অন্যতম ত্রিপুরা সুন্দরী দেবী মন্দির। জানা যায় ত্রিপুরার মহারাজা ধন্য মানিক্য ১৫০১ খ্রিষ্টাব্দে ত্রিপুরা সুন্দরী মন্দির স্থাপন করেন। মন্দিরে দেবী প্রতিমা কষ্টি পাথরে নির্মিত। দীপাবলি উপলক্ষে রাজ্যের অন্যতম মূল আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু গোমতী জেলার, উদয়পুর মাতারবাড়ির এই ত্রিপুরেশ্বরী মন্দির। যা ত্রিপুরাসুন্দরী মন্দির হিসেবেও পরিচিত। দেখুন ভিডিও
৫১ পীঠের একপিঠ ত্রিপুরা সুন্দরী দেবী। ৫২০ বছরের পুরনো এই মন্দিরকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর দীপাবলি উৎসব ও মেলার আয়োজন হয়। ত্রিপুরার ১৪৫তম মহারাজা ধন্য মানিক্য ১৫০১ খ্রিস্টাব্দে ত্রিপুরাসুন্দরী মন্দির স্থাপন করেন। মন্দিরে দেবী প্রতিমা কষ্টি পাথরে নির্মিত। দেবীর মূর্তি উচ্চতায় এক মিটার ৫৭ সেন্টিমিটার, প্রস্থ ৬১ সেন্টিমিটার।
প্রসঙ্গত, ১৯৪৯ সালে ত্রিপুরা রাজ্য ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়, সেই সময় ত্রিপুরার রানী কাঞ্চন প্রভাদেবীর অন্যতম শর্ত ছিল কয়েকটি মন্দিরের পরিচালনার ভার সরকারকে নিতে হবে। কেন্দ্রীয় সরকার শর্তে রাজি হয়। এরপরই রাজ্য সরকার ত্রিপুরা সুন্দরী মন্দিরের পরিচালনার দায়িত্ব নেয়। পদাধিকারবলে মন্দিরের সেবায়েত গোমতী জেলার জেলাশাসক। ২০১৮ সালের নতুন সরকার গঠিত হওয়ার পর মাতাবাড়ি মন্দির পরিচালনার জন্য একটি ট্রাস্ট গঠন করে রাজ্য সরকার। সরকার পরিচালিত মন্দিরের সমস্ত কাজ হলেও আজকের দিনেও রাজ পরিবারের বর্তমান প্রতিনিধি প্রদ্যুৎ কিশোর দেববর্মনের নামে পুজোর অর্ঘ্য আহুতি হয়।
কার্তিক অমাবস্যায় হবে দেবী শক্তির আরাধনা। ঐ দিনের কালীপুজো দীপান্বিতা কালীপুজো নামেও পরিচিত। আলোর উৎসবে মাতোয়ারা গোটা ভারতবর্ষের বিভিন্ন মন্দিরের পাশাপাশি প্রদীপের আলোয় নতুন রূপে সাজছে উত্তর-পূর্বাঞ্চল ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পীঠস্থান মাতারবাড়ি ত্রিপুরেশ্বরী মন্দিরও I
ত্রিপুরেশ্বরী মন্দিরে নেই ধর্মের বেড়াজাল, পুজো দিতে আসেন মুসলিম এবং খ্রিস্টানরাও। আগরতলা থেকে প্রায় ৫৫ কিলোমিটার দূরে উদয়পুরে অবস্থিত ত্রিপুরা সুন্দরী বা ত্রিপুরেশ্বরী মন্দির। প্রতি বছর আলোর উৎসব দীপাবলির আগে সেজে ওঠে এই মন্দির।
কথিত আছে যে ত্রিপুরার এই অংশে দেবীর ডান পায়ের অংশ পড়েছিল। দেবীকে এখানে ষোড়শী রূপে পুজো করা হয়। অর্থাৎ দেবী এখানে ১৬ বছরের এক বালিকা। কালিকা পূরাণে কালীকে দশমহাবিদ্যা রূপে উল্লেখ করা হয়েছে। এই দশমহাবিদ্যা হলেন — কালী, তারা, ষোড়শী, ভুবনেশ্বরী, ভৈরবী, ছিন্নমস্তা, ধূমাবতী, মাতঙ্গী, বগলা এবং কমলা।
মন্দির সূত্রে জানা যায় , চট্টগ্রামের পাহাড় থেকে মায়ের মূর্তি নিয়ে আসা হয়। কথিত আছে, তৎকালীন মহারাজা ধন্য মাণিক্য এখানে নারায়ণের মন্দির প্রতিষ্ঠা করবেন ভেবেছিলেন। কিন্তু মহারাজ এখানে মাতৃ মন্দির প্রতিষ্ঠার স্বপ্নাদেশ পান। সেই সঙ্গে তিনি নির্দেশও পান কোথায় মূর্তি পাওয়া যাবে। সেই নির্দেশ অনুযায়ী চট্টগ্রামের পাহাড় থেকে প্রথম মায়ের মূর্তি থেকে নিয়ে আসেন মহারাজা।
এই মন্দিরের একটি বিশেষত্ব রয়েছে। এখানে মন্দিরের স্থানটি কচ্ছপের পিঠের আকারের। মূল বিগ্রহের পাশে রয়েছে আরও একটি ছোট বিগ্রহ। তাঁকে বলা হয় ছোট মা। মহারাজা যখন যুদ্ধে যেতেন বা শিকারে যেতেন এই ছোট মা’কে সঙ্গে নিয়ে যেতেন পুজো করার জন্য। কারণ- তাঁর মাতৃভক্তি ছিল প্রবল। কষ্টি পাথরের তৈরি এই বিগ্রহকে নিয়েও রয়েছে বেশ কিছু গল্প।
মাতারবাড়ি মন্দিরে সব ধর্মের মানুষ আরাধনা করতে পারেন। যে কেউ মাকে শ্রদ্ধা ভরে পুজো করলে মা সেই পুজো স্বীকার করেন। মা তাঁদের মনোস্কামনা পূরণও করেন।এখানকার প্রত্যেক বাসিন্দা এটাই বিশ্বাস করেন। আর সেই কারণে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসেন মায়ের পুজো দিতে।
কালীপুজোর সময় তিন দিন ব্যাপী বিরাট মেলা বসে এই মন্দিরকে ঘিরে। পাশ্ববর্তী আসাম, মেঘালয়, সিকিম, নাগাল্যান্ড, মণিপুর, পশ্চিমবঙ্গ, উড়িষ্যা, মহারাষ্ট্র, ব্যাঙ্গালোর, উত্তর প্রদেশ, বিহার, দিল্লি থেকে অগনিত ভক্তদের আগমনের পাশাপাশি হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ডের বহু সাধু-সন্ন্যাসীরাও অংশ নেন মাতারবাড়ির এই পূর্ণভূমিতে।
ভারত তো বটেই, পড়শি দেশ বাংলাদেশ -সহ আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, নাইজেরিয়া, চিন, জাপান, মায়ানমার, নেপাল, ভূটান দেশে সমেত পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে মানুষ ভিড় জমান এই মেলায়।
মন্দিরের সামনেই রয়েছে সুবিশাল জলাশয় — কল্যাণ সাগর। এখানে এলেই চোখে পড়বে প্রচুর কচ্ছপ এবং বড় মাছ। কিন্তু কেউ কখনও শিকার করেন না। কচ্ছপ নিয়ে একটি কাহিনি প্রচলিত রয়েছে এখানে। যা খানিক অলৌকিকও বটে। কচ্ছপের আয়ু অনেক বেশি। অথচ কী ভাবে যেন মৃত্যুর আগে তারা টের পেয়ে যায়। মৃত্যুর আগে ৫২টি সিঁড়ি অতিক্রম করে প্রতিটি কচ্ছপ মন্দিরের সামনে গিয়ে দেহ রাখে। স্থানীয়দের মতে, এই ৫২টি সিঁড়ি একক বছরের চক্রাবর্ত। যদিও সেই ৫২টি সিঁড়ি এখন আর নেই।