Travelogue পুজোয় ঘুরতে যাওয়ার আগে ট্র্যাভেল এজেন্সির খুঁটিনাটি জানুন

0
50
ঈশানী মল্লিক, দেশের সময়

ভ্রমণ পিপাসুরা ইতিমধ্যেই ঠিক করে ফেলেছেন পুজোর ছুটিতে কোথায় ঘুরতে যাবেন। এখন শুধু প্যাকিং আর ছুটির ঘণ্টা পড়ার অপেক্ষা মাত্র। যেহেতু পুজো দোরগোড়ায়, তাই ঘুরতে যাওয়ার আগে-ভাগে আপনাদের জন্য কিছু প্রয়োজনীয় আগাম টিপস:
জেন জি – র ব্যস্ততার দৌড়ে; ঝুট ঝামেলা এড়াতে এখন প্রায় সকলেই; টিকিট কাটা থেকে শুরু করে পুরো ঘোরার দায়িত্ব ট্যুর অপারেটরদের হাতে তুলে দিয়ে নিশ্চিতে ঘোরার প্ল্যান করেন।

বাজেট অনুযায়ী কাষ্টমাইজড ট্যুর বা গ্রুপ ট্যুর সব রকম পরিষেবা দিতে ট্যুর অপারেটরদের এখন বাজার ভালোই। তবে কথায় আছে সাবধানের মান নেই। ঘুরতে যাওয়ার ক্ষেত্রে সব ব্যাপারেই সুবিধা যেমন আছে তেমন কখনও অচেনা অজানা জায়গায় ঝুঁকির মুখোমুখিও পড়তে হয় মানুষকে। তাই ট্রাভেল এজেন্সির সঙ্গে ভ্রমণের আগে কয়েকটি বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক। যাতে, ভ্রমণ শেষে বলা যায়, যার শেষ ভালো তার সব ভালো।

শারদীয়া পুজো মানেই বাঙালির মনে ভ্রমণের নেশা। কেউ পরিবার নিয়ে আবার কেউ একা ঘুরতে বেরোন। অনেকে নিজেরাই ভ্রমণের খুঁটিনাটি সামলান, আবার অনেকে ভরসা করেন ট্রাভেল এজেন্সির উপর। কিন্তু ভ্রমণ করার আগে কিছু সুবিধা-অসুবিধা বোঝা এবং সচেতন থাকা ভীষণ জরুরি। বিশেষ করে যারা সোলো ট্রাভেল করেন, তাঁদের জন্য কিছু বাড়তি সতর্কতা অপরিহার্য।

প্রথমেই আসি ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে ঘোরার সুবিধা:
ট্রেনের যাতায়াতের টিকিট কেটে দেওয়া।
সময় বাঁচে – যাতায়াত, হোটেল বুকিং, দর্শনীয় স্থান দেখা—সব কিছু এজেন্সিই করে দেয়।
প্যাকেজ সুবিধা – ট্রান্সপোর্ট, খাবার, গাইড, দর্শন সব একসাথে মেলে।
অভিজ্ঞ গাইড – নতুন জায়গার ইতিহাস-ভূগোল জানা সহজ হয়।

নিরাপত্তা – বড় দলে ঘুরলে বিশেষ করে নতুন জায়গায় নিরাপত্তার দিক থেকে স্বস্তি থাকে।
সাশ্রয়ী খরচ – একসঙ্গে অনেকজনের বুকিং হওয়ায় খরচ অনেক সময় কমে যায়।
ফ্যমিলি নিয়ে ঘুরতে গেলে রুম সার্ভিসে শেয়ারিং পাওয়া যায়। এতে খরচ কমে।

এবার আসব ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে ঘোরার কিছু অসুবিধাতে:
স্বাধীনতা কম – নিজের ইচ্ছে মতো কোথাও বেশি সময় কাটানো যায় না। সময় নির্ধারণ করা থাকে।
প্যাকেজ সীমাবদ্ধতা – সব দর্শনীয় স্থান ঘোরা নাও হতে পারে।

মানসিক চাপ – নির্দিষ্ট সময়সূচি মেনে চলতে হয়।
গুণমানের ভিন্নতা – বিজ্ঞাপনের সঙ্গে পরিষেবার বাস্তব মিল নাও থাকতে পারে।
অতিরিক্ত খরচ – মাঝপথে নতুন খরচ চাপতে পারে। যেটাকে সাধারণত “হিডেন কষ্ট” বলা হয়।

ভ্রমণের আগে ট্যুরিস্টদের জন্য সতর্কতা:
চুক্তিপত্র পড়ুন – কী পরিষেবা পাবেন আর কী পাবেন না, তা লিখিতভাবে নিশ্চিত করুন।

রসিদ সংগ্রহ করুন – প্রতিটি টাকার হিসেব রাখুন।
রিভিউ দেখে নিন – আগের ভ্রমণকারীদের অভিজ্ঞতা যাচাই করুন। রিভিউ দেখে ট্যুর এজেন্সি বাছাই করুন।
অনেক সময় কিছু ট্যুর এজেন্সি কম খরচে অনেক ভালো জায়গা ঘোরাতে নিয়ে যায়। সেক্ষেত্রে অন্যান্য এজেন্সির কষ্টের সঙ্গে বিস্তর ফারাক হলে বুকিং করার আগে খোলাখুলি কথা বলুন।


থাকার জায়গা কেমন হবে তা একটা আন্দাজ আগে থেকে নিয়ে নিন। ফটো বা ভিডিও দেখাতে বলুন যাতে পৌঁছে সমস্যায় পড়তে না হয়।

জরুরি নম্বর লিখে রাখুন – ট্যুর অপারেটর, হোটেল, পুলিশ, ট্রাভেল হেল্পলাইন।
ট্রাভেল ইনস্যুরেন্স – দুর্ঘটনা বা অসুস্থতায় ইনস্যুরেন্স কাজে আসে।

সোলো ট্রাভেলারদের জন্য বাড়তি টিপস
পরিবারকে জানিয়ে বেরোন – কোথায় যাচ্ছেন, কবে ফিরবেন, যোগাযোগ নম্বর দিয়ে রাখুন।
হোটেল বেছে নিন সাবধানে – নিরাপদ ও পরিচিত জায়গায় বুকিং করুন।

অপরিচিতদের সঙ্গে সতর্ক থাকুন – ব্যক্তিগত তথ্য সহজে শেয়ার করবেন না।

ডিজিটাল সুরক্ষা রাখুন – ফোন চার্জার, পাওয়ার ব্যাংক, অনলাইন পেমেন্ট নিরাপদ রাখুন।
স্বাস্থ্য সচেতনতা – প্রয়োজনীয় ওষুধ, প্রাথমিক চিকিৎসা ও পরিচ্ছন্নতার সামগ্রী সঙ্গে রাখুন।
মহিলা ভ্রমণকারীরা – সেফটি অ্যাপ, পেপার স্প্রে বা এলার্ম রাখলে ভালো।

এজেন্সি সমস্যা করলে করণীয়:
প্রথমে লিখিত অভিযোগ করুন – এজেন্সিকে ইমেল বা চিঠি দিন।


ভোক্তা সুরক্ষা ফোরামে অভিযোগ জানান – প্রতিশ্রুত পরিষেবা না পেলে আইনি ব্যবস্থা নিন।
ট্যুরিজম দপ্তরে জানান – Incredible India Tourist Helpline (১৮০০-১১-১৩৬৩), ই মেল – info.mot@gov.in এ অভিযোগ জানান বা রাজ্য পর্যটন দপ্তরে যোগাযোগ করুন।

সোশ্যাল মিডিয়ায় অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন – অন্যদের সতর্ক করতে সাহায্য করবে। এছাড়া বিপদে পড়লে আপনিও সাহায্য পেতে পারেন।
বড় প্রতারণা হলে আইনগত ব্যবস্থা নিন – প্রয়োজনে আইনজীবীর সহায়তা নিন।

পুজোর ভ্রমণ আনন্দময় করতে হলে সবচেয়ে জরুরি সচেতনতা। এজেন্সি সুবিধা দিলেও যাচাই-বাছাই না করে চোখ বন্ধ করে ভরসা করা উচিত নয়। আর যারা একা ভ্রমণে বেরোন, তাঁদের জন্য নিরাপত্তা ও পরিকল্পনা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আগে থেকে প্রস্তুতি নিলে, এবং সমস্যা হলে সঠিক পদক্ষেপ নিলে, পুজোর ভ্রমণ হয়ে উঠবে সত্যিই নির্ঝঞ্ঝাট ও আনন্দময়।

কিছু ট্রাভেল এজেন্সির মালিক ও কয়েকজন ট্রাভেলারের অভিজ্ঞতা জেনে নেওয়া যাক:

১. বিশ্বজিৎ কর্মকার, কর্ণধার, মোবাইল প্লাজা ট্যুর অ্যান্ড ট্র্যাভেল, ঝাড়খন্ড স্পেশালাইজড: আমরা প্রায় ১২ বছর ধরে ঝাড়খন্ড ট্যুরিজমের সঙ্গে যুক্ত আছি। খুবই যত্ন সহকারে গেস্টদের পরিবারের মানুষ ভেবে সারা বছর ঝাড়খন্ডের বিভিন্ন জায়গায় যেমন রাঁচি, নেতারহাট, বেথলা ফরেস্ট, কিরিবুরু, সরণ্ডা ফরেস্ট, দেওঘর, ঘাটশিলা, দালমা, মধুপুর, টাটা প্রভৃতি জায়গায় বছরে কম করে ১৫ টা গ্রুপ ট্যুর তো হয়। এছাড়া আমরা কাষ্টমাইজড ট্যুর ও অ্যারেঞ্জ করে দিই সাধ্যের বাজেটে। রেল টিকিট, প্লেন টিকিটও আমরা কেটে দিই। যত রকম ভাবে চেষ্টা করি মানুষকে ভালো পরিষেবা দিয়ে একটা নতুন ভালো কিছু অভিজ্ঞতা দেওয়ার।

২. মৌ ট্যুর অ্যান্ড ট্র্যাভেল, কর্ণধার : ২০১৬ সাল থেকে আমাদের পথ চলা শুরু। সারা বঙ্গে আমরা সারা বছর গ্রুপ ও কাষ্টমাইজড ট্যুর করে থাকি। সাধ্যের মধ্যে বিভিন্ন প্যাকেজ ও আকর্ষনীয় লোকেশন রাখার চেষ্টা করি যাতে মানুষ কষ্টের টাকায় একটু বাড়তি আনন্দ নিয়ে ঘরে ফিরতে পারে। সম্প্রতি আমরা পশ্চিমবঙ্গের বাইরে, পুরী ও দারিংবাড়ি তে ট্যুর করাচ্ছি। আমাদের ওয়েবসাইট, সোশ্যাল নেটওয়ার্কস এ গেলে বিস্তারিত জানতে পারবেন। বিশেষভাবে আকষণীয়, আমরা বছরের একটা সময় প্রতি সপ্তাহে “ইলিশ উৎসব” এর আয়োজন করি। প্রচুর মানুষ যোগ দেন ও পজিটিভ এনার্জি নিয়ে আবার নতুন করে শুরু করেন।

৩. মৌসুমী বারিক (ট্যুরিস্ট): ডুয়ার্স ঘুরতে গেছিলাম ২০২৩ সালে। ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমেই একা আমি গ্রুপ ট্যুর এ গেছিলাম। খুব ভালো ও নিরাপদভাবে ঘুরেছি। প্যাকেজে ছিল না এমন কিছু ভালো জায়গাও আমাদের ঘোরানো হয়েছে। থাকার ব্যবস্থাও খুব ভালো। আমরা একা নিজেরা আয়োজন করে গেলে হয়তো এত মন খোলা ভাবে শান্তি করে ঘুরতে পারতাম না। আমাদের কিছুই ভাবতে হয়নি। ব্যবহারও খুব ভালো।

৪. সুস্মিতা সরকার (নাম পরিবর্তিত), ট্যুরিস্ট: বিগত ১ এপ্রিল,২০২৫ আমি কাশ্মীর ট্যুরের জন্য” গো মিউজিকাল ট্যুর অ্যান্ড ট্র্যাভেল” এর সঙ্গে শিয়ালদহ থেকে রওনা হই। আমাদের প্যাকেজ কষ্ট যা ছিল তার প্রায় বেশিরভাগই চোট হয়ে যায়। ট্যুরের মালিকের শুভদীপ দাশগুপ্ত অত্যন্ত খারাপ ব্যবহার। উনি নিজের ট্রেনে টিকিট কাটেন নি। মাঝ রাতে টিটি আসায় আমার কাছে এসে টাকা চাইছেন টিটিকে দেওয়ার জন্য।
জম্মু তে পৌঁছে উনি সবাইকে সিম কার্ড এর ব্যবস্থা করে দেবেন বলেছিলেন। কিন্তু কোনো দায়িত্ব নেন নি। কেউ পরিবারের সঙ্গে গোটা একটা দিন যোগাযোগ করতে পারেন নি। উনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন জম্মুতে নেমে সিম কার্ড ভরে তারপর শ্রীনগর যাত্রা শুরু হবে। ১৮ জন যাত্রী ছিলাম আমরা। প্রতিটা স্পটে গিয়ে উনি আলাদা করে ওখানকার সিন্ডিকেটের সঙ্গে কথা বলে আমাদের থেকে বেশি টাকা নিয়ে নিজে কমিশন নিয়ে সোনমার্গ, গুলমার্গ ঘুরিয়েছেন। আমাদের কোনও কথা বলতে দেন নি পনি কার এর লোকদের সঙ্গে।

হোটেল খুবই খারাপ। খাবার খুবই নিম্ন মানের এবং অপর্যাপ্ত। সকালের চা, ইভিনিং এর খাবার বেশিরভাগ দিন দেয় নি। দিলেও তা খাবার উপযুক্ত একেবারেই নয়। ফলে আমাদের নিজেদের টাকায় বেরিয়ে খেতে হয়েছে। ১৩ দিনের মোট ট্যুর ছিল। সব ক্ষেত্রে চূড়ান্ত অসহযোগিতা করেছেন। একজন মহিলাকে ব্যক্তিগত আক্রমণও করেন সকলের সামনে।


বেশিরভাগ ট্যুরিস্ট ওনাকে প্রথম দিনই জানিয়ে দেন এটাই ওনার সঙ্গে শেষ ট্যুর। সকলের সামনে বাসে মহিলাদের সঙ্গে অশালীনভাবে বসা – যাকে বলে চূড়ান্ত অসহযোগিতা।

পুরো বিভীষিকা ধরিয়ে দিয়েছিলেন বৈষ্ণবদেবী পৌঁছে। উনি আমাদের গেটে ঢুকিয়ে দিয়ে রাস্তা থেকেই বেপাত্তা হয়ে যান। মাইকে ওনার নাম করে বারবার অ্যানাউন্স করা সত্ত্বেও উনি আসেন নি। প্যাকেজের বাইরে আলাদা টাকা খরচ করে আমাদের কাশ্মীর ঘুরে ফিরতে হয়।

তবে, আমার অন্য ট্যুর অপারেটরদের সঙ্গে ঘোরার অভিজ্ঞ্যতা একদমই এমন নয়। তবে, এই ঘুরে আসার পর আমি সচেতন হয়েছি। পদক্ষেপ নিয়েছি। অন্যদের সচেতন করেছি। এই লেখার মাধ্যমেও সেটাই করতে চাই। শুধুমাত্র রংচঙে বিজ্ঞাপন দেখে কারোর সঙ্গে ঘুরতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেবেন না। ভালো করে কথা বলে, জেনে বুঝে রওনা হবেন। ছবি –  ঈশানী মল্লিক

Previous articleকলকাতায় ট্রান্সজেন্ডার সম্প্রদায়ের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হল কপাল ছবির বিশেষ প্রদর্শনী
Next articleসাতপাকে বাঁধা পড়লেন অমৃতা? নববধূর সাজে ছবি দেখে চোখ কপালে নেটিজেনদের? দেখুন ভিডিও

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here