দেশের সময় বনগাঁ গণতন্ত্রের সবথেকে বড় উৎসব নির্বাচনী উৎসব আর সেই উৎসবকেই কেন্দ্র করে এবারের লোকসভা নির্বাচনে পঞ্চম দফা অর্থাৎ ২০ মে ভোট । তার আগে শনিবার বিকালে শেষ প্রচার সারলেন বনগাঁ কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী বিশ্বজিৎ দাস।
একদিকে যেমন বিজেপি শুক্রবার তার শেষ প্রচার করেছে বনগাঁ বিধানসভায় আবার শনিবার বিকালে শেষ প্রচার সারলেন বনগাঁর তৃণমূল প্রার্থী বিশ্বজিৎ দাস। এদিন র্যালিটি শুরু হয় বনগাঁ চাপা বেড়িয়া এলাকা থেকে এবং শেষ হয় বনগাঁ ১ নম্বর রেল গেট সংলগ্ন এলাকায় । এদিনের মিছিলে উপস্থিত ছিলেন বনগাঁ পুরসভার চেয়ারম্যান গোপাল শেঠ সহ কাউন্সিলেররা । মিছিলে পা মিলিয়েছেন বহু তৃণমূল কর্মী সমর্থক । চোখে পড়ার মতো বিষয় ছিল বাংলার সনাতনী কীর্তনের দল।
প্রার্থী বিশ্বজিৎ দাস এদিন বলেন , বনগাঁর মানুষ মুখ্যমন্ত্রীর উন্নয়নের পক্ষেই থাকবেন। সিএএ নিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে ভোট দেবেন তাঁরা।’ দেখুন ভিডিও
লোকসভা নির্বাচনে এবারে বনগাঁ থেকে তৃণমূল প্রার্থী হয়েছেন বিশ্বজিৎ দাস। তিনি পঞ্চায়েত থেকে বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। এমনকী অভিজ্ঞতা রয়েছে তৃণমূল এবং বিজেপির প্রার্থী হয়ে জেতার। তবে মাঝে তিনি গিয়েছিলেন বিজেপিতে। তারপর আবার মোহভঙ্গ হতেই তৃণমূলে ফিরে এসেছেন। বিশ্বজিৎ রাজনীতি শুরু করেছিলেন ছাত্র জীবন থেকে। তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকেই তিনি ঘাসফুলে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য ,পঞ্চায়েত থেকে বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। বিধানসভায় তৃণমূল এবং বিজেপির প্রার্থী হয়ে জেতার অভিজ্ঞতাও রয়েছে। মাঝে গোঁসা করে বিজেপির ঘর ঘুরে এসেছিলেন। কিন্তু সেটা খুব অল্প সময়ের জন্য। মোহভঙ্গ হতেই তৃণমূলে ফিরে এসেছেন। সেই বিশ্বজিৎ দাসকেই এ বার লোকসভা নির্বাচনে বনগাঁ থেকে প্রার্থী করেছে তৃণমূল।
ছাত্র রাজনীতিটা বিশ্বজিৎ শুরু করেছিলেন কংগ্রেসে। ১৯৯৮ সালে তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকেই তিনি ঘাসফুলে। সে বছর গোপালনগর পঞ্চায়েত থেকে জিতে পঞ্চায়েতের বিরোধী দলনেতা হন। ২০০৩ সালে ফের পঞ্চায়েত সদস্য হন। পরের বছর গোপালনগর ব্লকের সভাপতিও হয়েছিলেন তিনি। ২০০৮ সালে বনগাঁ পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষও হন।
জেলার রাজনীতিতে একসময় জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের ঘনিষ্ঠ ছিলেন বিশ্বজিৎ। ২০১১ সালে রাজ্যের পালাবদলের পর বনগাঁ উত্তর কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের বিধায়ক হন। ২০১৬ সালেও ফের একই কেন্দ্র থেকে জয়। বিশ্বজিতের রাজনৈতিক জীবনে নাটকীয়তাও কম ছিল না। রাজনীতিতে পরিচিতি, খ্যাতি সবটাই তৃণমূলের কাছ থেকে পেলেও বিশ্বজিৎ চলে যান গেরুয়া শিবিরে।
২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনের আগে সোজা দিল্লি গিয়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন বিশ্বজিৎ। তখন বনগাঁ পুরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন শঙ্কর আঢ্য। শঙ্করের সঙ্গে রাজনৈতিক মতবিরোধেই কয়েকজন কাউন্সিলারকে নিয়ে দল ছেড়েছিলেন তিনি।
২০২১ সালে বিজেপির টিকিটেই বাগদা থেকে বিধায়ক হন বিশ্বজিৎ। কিন্তু বনগাঁর বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুরের গোষ্ঠীর বিরোধিতায় জেলার রাজনীতিতে তেমন কলকে পাননি বিশ্বজিৎ। গেরুয়া শিবিরের প্রতি মোহভঙ্গ হতেও সময় লাগেনি তাঁর। বিজেপির বিধায়ক থাকাকালীনই আচমকা বিধানসভার অলিন্দে পায়ে হাত দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রণাম করেন তিনি। দলের বিধায়কের এমন আচরণে বিজেপির অন্যান্য বিধায়করা হতবাক হয়ে পড়েন। সেই থেকেই বিশ্বজিতের ঘর ওয়াপসির কাউন্ট ডাউন শুরু হয়েছিল।
ওই বছরেই ঘরে ফেরেন বিশ্বজিৎ। সেই থেকে জনসংযোগ কর্মসূচি নিয়ে বাগদা এলাকায় চষে বেড়িয়েছেন তিনি। ২০২২ সালেই দল তাঁকে বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার তৃণমূলের সভাপতির দায়িত্ব দেয়। ততদিনে বিশ্বজিৎ ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। দলের সভাপতির দায়িত্ব পাওয়ার পরে বনগাঁ পুরসভা এবং পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূল নিরঙ্কুশ জয় পায় দল।
বিশ্বজিৎ দাস নিজে মতুয়া নন। কিন্তু মতুয়াদের সহ ঠাকুর বাড়ি কেন্দ্রিক সব ধরনের যোগাযোগ রয়েছে তাঁর। মতুয়া কমিটির সদস্য হয়েছেন তিনি। বিশ্বজিতের কথায়, ‘বনগাঁর মানুষ মুখ্যমন্ত্রীর উন্নয়নের পক্ষেই থাকবেন। সিএএ নিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে ভোট দেবেন তাঁরা।’